কান পাকা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

by Dr. Baby Akter
কান পাকা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

আপনার যদি কখনও কানের সংক্রমণ হয়ে থাকে, তবে আপনিই জানেন যে তা কতটা অস্বস্তিকর হতে পারে। কান ব্যথা প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশু উভয়ের জন্য বেদনাদায়ক, তবে আপনি যদি জানেন কিভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে তার চিকিৎসা তাহলে খুব সহজেই কানের সংক্রমণ  ও যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। 

ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস এর কারণে সাধারণত কানের সংক্রমণ ঘটে (Acute otitis media)। আবার অ্যালার্জি, সর্দি, বা উপরের শ্বাসযন্ত্রের সমস্যার কারণেও কানের সংক্রমণ হয়। যখন কানের ভিতরের টিউবগুলি তরল এবং শ্লেষ্মা দিয়ে পূর্ণ হয়, তখন এটি সংক্রমণের কারণ হয়।

বাচ্চাদের প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় বেশি কানের সংক্রমণ হয় এবং বেশিরভাগেরই বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ৩ বছর হওয়ার আগে অন্তত একটি  কানের সংক্রমণ হয়ে থাকে। বাচ্চাদের প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় মধ্য কানের সংক্রমণের একটি প্রধান কারণ হল তাদের (shorter eustachian tubes) রয়েছে।

কান পাকা রোগ হওয়ার মূল কারণ হলো মধ্য কর্ণের প্রদাহ। যদি এটা দ্রুত রোগ নির্ণয় করা না যায় অথবা অপর্যাপ্ত চিকিৎসা নেওয়া হয় তবেই দীর্ঘমেয়াদি কান পাকা রোগ হয়।

কানের সংক্রমনের লক্ষণসমুহ:

  • কানের ভেতরের ব্যথা
  • জ্বর
  • শ্রবণ ক্ষমতার হ্রাস
  • ঘুমের সমস্যা
  • ভারসাম্য বজায় রাখতে অসুবিধা
  • কান থেকে তরল নিষ্কাশন
  • গলা ব্যথা

কানের সংক্রমণের জন্য সেরা কার্যকর ১২ টি ব্যথা বা যন্ত্রনা উপশমকারী পদ্ধতি

 ১. ঠান্ডা বা উষ্ণ সেক 

উষ্ণ এবং ঠান্ডা উভয় কম্প্রেসই কানের সংক্রমণ থেকে ব্যথা উপশম করতে পারে। ১০ থেকে ১৫ মিনিটের জন্য একটি গরম প্যাড বা ঠাণ্ডা ওয়াশক্লথ কানের কাছে ধরে রাখুন বা একটি সহজ কানের সংক্রমণের প্রতিকারের জন্য, বিশেষ করে শিশুদের জন্য গরম এবং ঠান্ডার মধ্যে বিকল্প একটি হিটিং প্যাড বা আইস প্যাকও ব্যবহার করা যেতে পারে।

. রসুন তেল

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য সহ, কানের ইনফেকশন হতে পারে এমন ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসগুলিকে মেরে ফেলতে সাহায্য করে। অলিভ অয়েলে রসুনের কুঁচি মিশিয়ে গরম করে ঠান্ডা করুন। তারপর ড্রপের সাহায্য এই তেল কানে প্রয়োগ করতে হবে 

৩. পেঁয়াজ

পেঁয়াজ শুধু রান্নার কাজেই ব্যবহার হয় তা নয় এই পেঁয়াজ কখনো রোগ সারাতে কাজে আসে। পেঁয়াজ ডিসইনফেকটেন্ট হওয়ায় কান পাকা রোগ সারাতে দারুন কাজে আসে। এবং কানের পুঁজ বের করতে সাহায্য করে। পেঁয়াজ কে থেঁতো করে তার থেকে রস বার করে কয়েক মিনিট গরম করুন। তারপর পেঁয়াজের রস কয়েক ফুটা কানে দিলে দেখবেন জমে থাকা পুঁজ আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসবে। আর পুঁজ বের হলেই ব্যাথা কমে যাবে।

৪. ঘাড় ব্যায়াম

ঘাড়ের ব্যায়াম যা ঘাড় ঘুরিয়ে কানের সংক্রমণের কারণে কানের খালে চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। ঘাড় ঘোরানোর ব্যায়াম যেভাবে করবেন – বসুন বা সোজা হয়ে দাঁড়ান। আপনার ঘাড় ডানদিকে ঘোরান যাতে এটি আপনার ডান কাঁধের সাথে সমান্তরাল হয়। পাঁচ থেকে ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। বাম দিকে এই অনুশীলনটি পুনরাবৃত্তি করুন। আবার আপনার কাঁধ উঁচু করুনথেকে ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। সারা দিন এই ব্যায়াম বেশ কয়েকবার করুন।

৫. মুলেইন

মুলিন গাছের ফুল থেকে তৈরি তেল কানের সংক্রমণের জন্য একটি কার্যকর ব্যথা উপশমকারী। মুলেইন বেশিরভাগ হেলথ ফুড স্টোরে স্ট্যান্ড-অলোন টিংচার  হিসেবে পাওয়া যায়।

৬. ভিটামিন ডি

ভিটামিন ডি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। একটি স্বাস্থ্যকর ইমিউন সিস্টেম কানের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা কম। Acta Paediatrica-এ প্রকাশিত ২০১৭ সালের একটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে, খাদ্য গ্রহণ, পরিপূরক এবং সরাসরি সূর্যালোকের মাধ্যমে ভিটামিন ডি-এর সিরাম মাত্রা বৃদ্ধি করে কানের সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস করা যেতে পারে।

৭ . নিমপাতার রস

নিমপাতার রস ব্যথা কমাতে পারে। বেশ কয়েকটা পরিষ্কার নিমপাতা পাটায় থেঁতলে রস বের করুন। দুই তিন ফোটা রস সরাসরি কানে দিন। চাইলে নিমের তেলে কানে দিয়ে একভাবে শুয়ে থাকুন। ব্যথা কমবে।

৮. সাদা ভিনেগার

কানের সংক্রমণ কমাতে ভিনেগারের মধ্যে যে অ্যাসিড থাকে তা অত্যন্ত কার্যকরী। একটা পাত্রে সমপরিমাণে সাদা ভিনিগার আর রাবিং অ্যালকোহল নিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। ড্রপার দিয়ে সংক্রমিত কানে দুই তিন ফোটা দিন। পাঁচ মিনিট ওভাবেই শুয়ে থাকুন। তারপর মাথা অন্যদিকে কাত করে তরলটা কান থেকে বের করে দিন।

৯. হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড:

কানের সমস্যা এড়াতে কার্যকরী ঘরোয়া চিকিৎসা হল হাইেড্রাজেন পারঅক্সাইড। এটি কানের ভিতরে জমে থাকা পুঁজ আস্তে আস্তে শুকিয়ে দেয়। কান পাকা রোধ করতে সাহায্য করে। যে কান পেকেছে তাতে ৩ শতাংশ হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড দিন। তারপর যে কানে সমস্যা তা নিচে দিয়ে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকুন। তাহলে আস্তে আস্তে কান থেকে পুঁজ বের হয়ে যাবে। দিনে কয়েকবার এমন করতে পারেন এতে কানের পুঁজ বের হয়ে দ্রুত কান পাকা ভাল হয়ে যাবে।

১০.পুদিনা

কয়েকটি পুদিনা পাতা নিয়ে ভাল করে ধুয়ে তা  থেঁতো করে রস বের করুন। তারপর দুই-তিন ফোঁটা রস কানে দিন। কান পাকা প্রতিরোধের জন্য এটি খুব প্রচলিত একটি ঘরোয়া উপায়। পুদিনার পাতা ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে এবং যে কোন ব্যাথা দূর করতে ও সহায়তা করে। কান পাকা ও কানের ব্যাথা দূর করতে পুদিনা পাতা ভাল কাজ করে।

You may also like

Leave a Comment