পুরাতন বা নতুন আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা ও প্রতিকার

by Dr. Baby Akter
আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

আমাশয় একটি মূলত গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রোগ। মানবদেহের পরিপাকতন্ত্রে ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী সংক্রমণ করলে এই রোগ হয়। আমাশয় হলে পেট কামড়ানোসহ মলের সঙ্গে পিচ্ছিল আম অথবা শ্লেষ্মাযুক্ত রক্ত যায়। পেটে ব্যথাও স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত ঘন ঘন মলত্যাগ হয় সেই সাথে অনেকের জ্বর ও বমি বমি ভাব থাকে। আমাশয় দুই ধরনের হয়ে থাকে: ১. অ্যামিবাঘটিত আমাশয় এবং ২. দণ্ড-ব্যাকটেরিয়াঘটিত (ব্যাসিলারি) আমাশয়। তবে দুই ধরণের আমাশয় রোগ-ই ঘরে বসে প্রাকৃতিক চিকিৎসার মাধ্যমে সহজে সুস্থ হওয়া যায়।  

আমাশয় হলে পানিশূন্যতা পূরণের জন্য প্রতিবার পায়খানার পর ওরস্যালাইন খাওয়া এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া উচিত। এক সপ্তাহের মধ্যেই সাধারণত আমাশয় নিরাময় হয়ে যায়।

কিভাবে সহজলভ্য রোগের ঘরোয়া উপাদান দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে আমাশয় নিরাময় করা যায়?

প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান সমুহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পর্কে আমরা সবাই কম বেশি জানি। ‍কিন্তু এসব উপাদান সমুহের সঠিক সময়ে সঠিক প্রায়োগিক জ্ঞান না থাকার কারনে আমরা অনেক সময় হাতের কাছে থাকা এসব সহজলভ্য উপাদানগুলিকে নিজেদের রোগ নিরাময়ে কাজে লাগাতে পারি না। আসুন তাহলে জেনে নিই কিছু সহজ পদ্ধতি, যার মাধ্যমে খুব সহজেই আমাশয় থেকে প্রতিকার লাভ করা যায়-

মৌরি ও মিছরি: ১৫০ গ্রাম মৌরি মচমচে ভেজে নিয়ে সাথে ১৫০ গ্রাম কাঁচা মৌরি ভালো করে পিষে নিতে হবে। তারপর ৩০০ গ্রাম মিছিরি গুঁড়ো করে নিয়ে সেই সাথে গুঁড়ো করা মৌরি মিশিয়ে নিন। এই চুর্ণ ২ চামচ করে দিনে ৪ বার খান। এটি পুরাতন বা নতুন  আমাশয় রোগের অব্যর্থ ঔষধ। মৌরি খেলে তীব্র ব্যথা যুক্ত আমাশয়ও ভালো হয়ে যায়। 

বেল ফল: উচ্চ ফাইবারসম্পন্ন বেল মলত্যাগ এর জন্য অত্যন্ত সহায়ক। শুধু তাই নয়, ফলের উপকারী অ্যান্টিপ্যারাসাইটিক বৈশিষ্ট্য (R) রোগকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করতে সাহায্য করে।

কিছু পানি  দিয়ে বেল ফল চেপে পাল্প বের করবেন এবং বীজগুলিও সরিয়ে ফেলুন। তরল অংশটুকু সম্পূর্ণভাবে ছেঁকে নিন। যদি ইচ্ছা হয়, কিছু চিনি যোগ করুন। সাথে আদাও দিতে পারেন এতে আরো সুস্বাদু হবে। আমাশয় দূর না হওয়া পর্যন্ত দিনে একবার পান করুন। 

ক্যারাম বীজ: বীজ ক্যারাম হলো পেট খারাপের জন্য একটি অন্যতম প্রাকৃতিক ঔষধ। হজমে সাহায্য করে এবং পেট ফোলা বা ফাঁপা থাকলে কমাতে সাহায্য করে। চা-চামচ ক্যারাম বীজ একটি পাত্রে পানি দিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ফুটিয়ে নিয়ে এর চা পান করুন।

ডালিম: ডালিম আমাশয় রোগের একটি কার্যকরী উপাদান। ডালিমের খোসা রস করে বা ডালিমের ফল খেতে পারেন আমাশয় রোগের দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়। তাছাড়া ডালিমের পাতার রস করে খেলেও আমাশয় নিরাময়ের ভালো ফল পাওয়া যায়। ডালিমের কিছু পাতা গরম পানিতে ফুটিয়ে কিছুক্ষন রেখে পানিটা ছেঁকে হালকা গরম পানি টা খেয়ে নিতে হবে। এটি একটি অত্যন্ত ফলপ্রদক প্রতিকার।

কাঁচা পেঁপে: কাঁচা পেঁপেতে গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক রয়েছে যা আপনার অন্ত্র পরিষ্কার করতে সমস্যা হলে সহজে মলত্যাগ করতে সাহায্য করে। পেঁপের রেচক বৈশিষ্ট্য (R) শরীর থেকে টক্সিন অপসারণে সহায়তা করে এবং পেটের ব্যথাও কমিয়ে দেয়, যা আমাশয় নিরাময়ের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী।

একটি পাত্রে ৩-৪ কাপ পানি দিন। কিছু কাঁচা পেঁপে ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে নিন। ফুটন্ত পানিতে দিয়ে দিন  এবং পেঁপে ভালভাবে সেদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন। ১০-১৫ মিনিট পেঁপেকে সেদ্ধ করা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর ছেঁকে পানি পান করুন। আপনার যে কোন ধরণের আমাশয় সহজে দূর হবে। 

শুকনো আদা মূল: আদা মূল এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল উপাদান আমাশয়ের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ব্যথা এবং অস্বস্তি কমানোর জন্য অত্যন্ত কার্যকর। ১২ চা চামচ আদা গুঁড়ো এক গ্লাস বাটারমিল্কে ভালভাবে মিশিয়ে প্রতিদিন ১-২ বার সেবন করুন।

পুদিনা ও এলাচ: থেকে টি পুদিনা পাতা এবং এক টেবিল চামচ মৌরি রস এর সাথে ছোট ছোট দারুচিনি এবং কালো এলাচ সবগুলো মিশিয়ে পানিতে ফুটিয়ে নিন। ১0 মিনিট কিংবা ১৫ মিনিট পরে উক্ত মিশ্রণ ভালোভাবে সেকে নিয়ে পরিমিত পরিমান লবন মিস্ক করুন। দিনে দুইবার এই মিশ্রণ খান। আমাশয় রোগে নিরাময়ের জন্য এই মিশ্রণটি অত্যন্ত কার্যকরী।  

হরিতকি: আমাশয় রোগের জন্য হরিতকি বেশ উপকারী। আমাদের দেশে এক সময়ে হরিতকি গাছ অনেক পাওয়া গেলেও এখন বিলুপ্তপ্রায়। এটি একটি ঔষধি গুণসম্পন্ন উপকারী গাছ। এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে এক চা চামচ হরিতকির পাউডার মিশিয়ে খান। দিনে দুইবার পান করুন। এতে বেশ উপকার পাবেন।

মেথি বীজ: চা চামচ গুঁড়ো মেথি বীজ এক গ্লাস বাটারমিল্কে মিশিয়ে তারপর পান করুন। প্রতিদিন একবার বা দুবার। এটি  আমাশয় দূর করতে খুব কার্যকরী। 

You may also like

Leave a Comment