নিমের ভেষজ গুণ, বিস্ময়কর উপকারিতাসমুহ এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

by Dr. Baby Akter
নিমের-উপকারিতা

নিম (বৈজ্ঞানিক নাম: Azadirachta indica) একটি অত্যন্ত উপকারী গাছ যার গাছের বাকল,পাতা ,বীজ প্রায় কিছুই চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা হয়। বলা হয়ে থাকে, নিম একজন ডাক্তারের কাজ করে। এই গাছের সাহায্য করে মানুষের অনেক ধরণের রোগ নির্মূল করা যায়। নিমের স্বাদ তিতকুটে হলেও এর গুণাগুণ বেশ মধুর। এতে রয়েছে অসংখ্য গুণ। বিশেষ করে নিম পাতা ভেষজ হিসেবে পরিচিত একটি নাম, যা ত্বক এবং শরীর দুটোর বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে

আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, প্রায় ৫০০০ বছর ধরে মানুষের শরীরকে নানা রকমের রোগের হাত থেকে বাঁচাতে নিম পাতাকে কাজে লাগানো হয়ে আসছে। এই গাছটির প্রতিটি অংশ, তা পাতা হোক, কি ডাল, এমনকি নিম ফুলও নানাভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অত্যন্ত কার্যকরী।

শরীরের বিভিন্ন রোগে নিমের ব্যবহার

  • যে কোনও চুলকানির সমস্যায় নিমপাতা বেটে লাগাতে পারলে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়। চুলকানির সমস্যা থেকে দ্রুত নিস্তার পেতে নিমপাতা বেটে লাগাতে পারেন। নিমপাতা ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক (ফাঙ্গাস) বিরোধী। তাই ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের আক্রমণের হাত থেকে চর্ম বা ত্বককে সুরক্ষিত করতে নিমপাতা খুবই কার্যকরী!
  • নিম পাতা জলে সিদ্ব করে সেই পানি দিয়ে গোসল করলেও চর্ম  ভালো হয়ে যায়।
  • বিভিন্ন ধরণের ফোড়া-ফুস্কুড়ি, চুলকানি  ইত্যাদি নিরাময় হয়।  
  • প্রতিদিন সকালে নিমের ডাল দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে দাঁত মজবুত ও ঝকঝকে হয়। এবং দন্তক্ষয় থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। 
  • ৫-৬ টি নিমের কচি পাতা, ৪-১০ টি  তুলসী পাতা এবং ৫-৬ টি গোল মরিচ গুড়ো করে মিশিয়ে নিয়মিত সেবন করলে স্বাস্থ্য বৃদ্ধি হয়।  
  • পেটের ব্যথায় ১০ গ্রাম নিমের বীজ সাথে ১০ গ্রাম সূঠ, ১০ তুলসী পাতা এবং ৮-১০ টি গোল মরিচ মিশিয়ে ঘন চাটনি মত করে অল্প অল্প করে খেলে পেট ব্যথা ভালো হয়ে যায়।
  • চোখ ফুলে গেলে ১৫-২০ টা নিমের পাতা পানিতে সিদ্ধ করে তাতে ৫ গ্রাম ফিটকিরি মিশিয়ে ছেঁকে নিন। এই পানিতে পরিস্কার তুলো ভিজিয়ে চোখ মুছে ফেলুন। এভাবে দুই-তিন বার করলে চোখের ফোলা, চোখের কুটকুট করা, এবং চোখের খুসকি নিরাময় হয়। 
  • নিমের পাতার রস বের করে তাতে তুলো ভিজিয়ে চোখের উপর রাখুন। এতে চোখের লাল ভাব, চোখ জ্বালা দূর হয়।  
  • ফোঁড়া যদি কোন কারণে ফেটে যায় তাহলে নিম পাতা বেটে ফোঁড়ার উপর লাগিয়ে পট্টি বেঁধে রাখলে আরাম পাওয়া যায়। এতে ফোঁড়াও তাড়াতাড়ি শুকায়। 
  • ১০ ফোটা নিমের তেল পানের উপর দিয়ে খেলে হাঁপানি ও কাশিতে আরাম পাওয়া যায়।  
  • নিমের তেল প্রতিদিন মাথায় মাখলে মাথার উকুন চলে যায়। কমপক্ষে ১০-১২ দিন মাখতে হবে।  
  • নিমের পাতার রস মধুতে মিশিয়ে খেলে পেটের কৃমি মরে যায়। 
  • নাক দিয়ে রক্ত পড়লে নিম গাছের ছাল পানি দিয়ে বেটে তা মাথায় লাগালে নাকের নাসা রোগ ভালো হয় যায়।  
  • গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় নিম গাছের ছাল, সূঠ, গোল মরিচ সমমাত্রায় মিশিয়ে গুড়ো রেখে দেন।  প্রতিদিন সকালে এই চুর্ণ ২০ গ্রাম  মাত্রায় পানির সাথে মিশিয়ে খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সহজে দূর হয়।
  • নিম পাতা বেটে হাতে পায়ে তেলের মত লাগালে হাত ও পায়ের জ্বালা দূর হয়।  
  • ম্যালেরিয়া রোগের জন্য নিমের পাঁচন বহু প্রচলিত এই রোগের জন্য সর্বোত্তম বলে মনে করা হয়।
  • ৫০ গ্রাম নিমের পাতাতে ৪-৫ টা গোল মরিচ মিশিয়ে বেটে নিন। ঐ বাটা এক গ্লাস গরম পানিতে ভালো করে গুলে রোগীকে সেবন করতে দিন। এতে ম্যালেরিয়া ভালো হয়ে যাবে।  

নিমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

যদিও নিমের অনেক গুনাগুণ রয়েছে তবে কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেমনঃ 

  • আপনার যদি নিমে এলার্জি বা সংবেদনশীলতা থাকে, সেক্ষেত্রে নিম ব্যবহার করা যাবে না। 
  • তাই নিম ব্যবহারের আগে একটি সাধারণ পরীক্ষা করা যেতে পারে (যেটিকে প্যাচ পরীক্ষা বলা হয়) এটি করার জন্য নিম পাতার পেস্ট তৈরি করে, ত্বকের যেকোন অল্প জায়গায় ঘষে ২৪  ঘন্টা অপেক্ষা করুন। যদি বিবর্ণতা, ফোলাভাব, চুলকানি, বা অস্বস্তির যেকোন লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে আপনার নিমের ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। অথাৎ নিমে আপনার এলার্জি বা সংবেদনশীলতা আছে।
  • সাধারণভাবে, শিশুরা নিমের তেলের ব্যবহারে সংবেদনশীলতা দেখা যায়। যদিও শিশুদের মধ্যে নিমের প্রভাব সম্পর্কে সরাসরি কোনো গবেষণা নেই। তাই শিশুদের ওপর নিমের ব্যবহারে একটু সতর্ক থাকতে হবে। 
  • গর্ভাবস্থায় বা শিশুর উপর যেকোন ভেষজ ও প্রাকৃতিক ঔষধ ব্যবহার করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উত্তম। 

You may also like

Leave a Comment