পুরুষ বন্ধ্যাত্ব দূর করার প্রাকৃতিক উপায়

by Dr. Baby Akter
পুরুষ-বন্ধাত্ব্য

প্রজনন সমস্যা পুরুষ বা মহিলা বা উভয়ের মধ্যেই বিদ্যমান থাকতে পারে এবং এর মোকাবিলার সর্বোত্তম উপায় হ‘ল কোনো পক্ষকেই দোষ না দিয়ে সঠিক প্রতিকার যা প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে পারে তার সন্ধান করা। বর্তমানে নারীদের পাশাপাশি পুরুষের বন্ধ্যাত্বের সমস্যা আগের চেয়ে অনেকাংশে বেড়েছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতি ছ’জন পুরুষের মধ্যে একজনের এই সমস্যা রয়েছে। প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বন্ধ্যাত্বের ক্ষেত্রে দায়ী পুরুষরাই। স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় নিয়ম না মানাসহ বিভিন্ন কারণে এ সমস্যা বাড়ছে। যেমন- মদপান, ধূমপান, অতিরিক্ত ওজন, ব্যায়াম ও হাঁটাচলা না করা, খাবারে ভেজাল, বয়স ৪০ পেরিয়ে গেলে, আঁটসাঁট আন্ডারওয়ার পরলে।

পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি ছ’জন পুরুষের মধ্যে একজনের এই সমস্যা রয়েছে। প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বন্ধ্যাত্বের ক্ষেত্রে দায়ী পুরুষরাই। তবে চিন্তিত হবেন না, চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, নিষেকের জন্য শুক্রাণুর সংখ্যা খুব গুরুত্বপূর্ণ যা নিয়ত্রণ করার চাবিকাঠিও আপনার হাতেই। 

পুরুষ বন্ধ্যাত্বের কারণ 

  • বীর্যপাতকে ঘিরে সমস্যা
  • শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
  • অনুপযুক্ত পুষ্টি
  • প্রজনন ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে এমন কিছু ওষুধ
  • ভ্যারিকোসিল অবস্থা
  • বেশি অ্যালকোহল গ্রহণ, ধূমপান, ড্রাগ ইত্যাদির ব্যবহার
  • অ্যান্টি–স্পার্ম অ্যান্টিবডিগুলির উপস্থিতি
  • রাসায়নিক এবং ক্ষতিকারক পরিবেশগত পরিস্থিতিতে উন্মুক্ত হওয়া

জেনে নিন, পুরুষ বন্ধ্যাত্ব দূর করার প্রাকৃতিক উপায়সমুহ

ডালিম বা আনার

ডালিম বা আনারের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। মহিলা এবং পুরুষ বন্ধ্যাত্ব উভয়ের ক্ষেত্রে প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম। গবেষণায় বলা হয়, এটি টেস্টোসটেরন ও শুক্রাণুর গুণগত মান বাড়াতে উপকারী।

কুমড়ো বীজ

কুমড়ো বীজে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো এসিড ও ফাইটোসটেরল, পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে। এবং শুক্রাণুর মাত্রা, জীবনীশক্তি, ক্ষিপ্রতা বাড়াতে কাজ করে। গবেষণায় দেখা যায়, কুমড়ো বীজে থাকা উপাদান টেস্টোসটেরন হরমোনের সিরামের মাত্রা বাড়ায় যা পুরুষ বন্ধ্যাত্ব দূর করতে খুব কার্যকরী। 

টমেটো 

টমেটোতে বিদ্যমান লাইকোপেন নামক উপকারী উপাদান এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা শুক্রাণুর গুণগত মান বাড়াতে সহায়তা করে।  অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ভালো শোষনের জন্য টমেটো রান্নার সময় জলপাইয়ের তেল ব্যবহার করুন। এটি অধিক ফলদায়ক। 

ডার্ক চকলেট

ডার্ক চকলেটে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যামাইনো এসিড, এল-আরজিন, যা শুক্রাণুর মাত্রা ও বীর্যের পরিমাণ বাড়ানোর উপাদান হিসেবে পরিচিত। প্রতিদিন এক কামড় ডার্ক চকলেটও শুক্রাণুর মান বাড়াতে উপকারী। তাছাড়া অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে ফ্রি র‍্যাডিকেলের সঙ্গে লড়াই করে। ফ্রি র‍্যাডিকেল শুক্রাণুর গুণগত মান নষ্ট করে। 

ওয়ালনাট

সোসাইটি ফর দ্য স্টাডি অব রিপ্রোডাকশনের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতিদিন ৭০ গ্রাম ওয়ালনাট খাওয়া ২১ থেকে ৩৫ বছরের পুরুষের ক্ষেত্রে শুক্রাণুর জীবনীশক্তি, ক্ষিপ্রতা বাড়ায়। ওয়ালনাট সালাদের সঙ্গে খেতে পারেন। এছাড়া স্ন্যাকস হিসেবে খেতে পারেন এ সুস্বাদু বাদামটি। ওয়ালনাটের মধ্যে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড পুরুষ বন্ধ্যাত্ব দূর করার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। 

আমন্ড বাদাম 

পুরুষের বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধে আমন্ড বাদাম অত্যন্ত কার্যকরী। সকালে নাস্তার সাথে অন্তত ৪-৫ টি আমন্ড খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলন।

সম্পৃক্ত ফ্যাটিঅ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার

অধিক পরিমানে ট্রান্স ফ্যাট ও আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন, কারন এটি শুক্রাণু উৎপাদনের প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে পারে। 

ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম

ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম ট্যাবল্যাট বা ক্যালসিয়াম-যুক্ত খাবার শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে। তবে অবশ্যই চিকিৎসককে নিজের সমস্যার কথা জানিয়ে ট্যাবলেট নিন।

মৌসুমি ফল বা সবজি

মৌসুমি ফল বা সবজিতে যেমন পেয়ারা, আম, আপেল, আঙুর, তরমুজ ইত্যাদি ফল আর বাঁধাকপি, ঢ্যাঁড়স, কুমড়ো ইত্যাদি সবজিতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। যা মহিলা ও পুরুষ উভয়েরই বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধে অধিক ফলদায়ক। তাই বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধে নিয়মিত এই সব ফল আর সবজি খাওয়া জরুরি।

প্রক্রিয়াজাত মাংস

প্রক্রিয়াজাত মাংসেও প্রচুর পরিমাণে ট্রান্স ফ্যাট ও আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটিঅ্যাসিড থাকে। পাশাপাশি, এই ধরনের মাংসে কৃত্রিম সংরক্ষক ও উৎসেচকের অবশিষ্টাংশ থাকে। তা শুক্রাণু উৎপাদনে সমস্যা তৈরি করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রক্রিয়াজাত মাংস শুক্রাণুর পরিমাণ হ্রাসের অন্যতম প্রধান কারণ। এই জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। 

ভিটামিন-ই

দই, ইস্ট ইত্যাদি খাবারে রয়েছে ভিটামিন-ই। এটি মহিলা ও পুরুষ উভয়েরই বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধে সাহায্য করে। তাই বন্ধ্যাত্ব দূর করার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন-ই ওষুধও খাওয়া যেতে পারে।

অতিরিক্ত স্নেহজাতীয় পদার্থযুক্ত দুগ্ধজাত পদার্থ 

সম্প্রতি ১৮ থেকে ২২ বছর বয়সি যুবকদের ওপর করা একটি সমীক্ষা বলছে, গবাদি পশুর উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গবাদি পশুকে যে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে তার প্রভাব পড়ে দুধে। আর এ ধরনের দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য খেলে শুক্রাণুর চলাচল, গতি ও আকৃতিতে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। তাই এই ধরণের খাবার এড়িয়ে চলুন উচিত।

ধূমপান ও মদপান 

নিয়মিত অতিরিক্ত মদপান শুক্রাণুর গঠনগত বিকৃতি ঘটাতে পারে। একাধিক গবেষণা বলছে, গাজা ও সিগারেট শুক্রাণুর সমস্যা ডেকে আনতে পারে। বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধে অবশ্যই ধূমপান ও মদপান মুক্ত সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন।

You may also like

Leave a Comment