পদ্মাসন করার নিয়ম ও এর উপকারিতা

by Dr. Baby Akter
Padmasana | পদ্মাসন

বিভিন্ন বেদ এবং উপনিষদে উল্লেখ আছে, যোগব্যায়াম  জাগতিক সংযুক্তি এড়িয়ে এবং আমাদের শরীর, মন এবং আত্মার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। যা ধ্যানের জগতকে প্রসারিত করে। তবে যোগের এই সংজ্ঞাটি আধুনিক বিশ্বে সম্পূর্ণ আলাদা, বিশেষ করে, পশ্চিমা দেশগুলি যে কৌশলগুলির উপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে তা হলো ভঙ্গি-ভিত্তিক শারীরিক সুস্থতা এবং শিথিলকরণকে।

পদ্মাসন শব্দটি একটি সংস্কৃত শব্দ যার বিবরন পাওয়া যায় মহর্ষি পতঞ্জলি যোগশাস্ত্রে যার অর্থ হলো অজ্ঞান বা অন্ধকার থেকে পরম জ্ঞান বা আলোর পথের যাত্রা। এবং পদ্ম; জ্ঞানতা, বিকাশ, অনাসক্তি, আধ্যাত্মিকতা ও সৌভাগ্যের প্রতীক।

পদ্মাসন হল এমন একটি যোগাসন যা নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে মানুষ শারীরিক এবং মানসিকভাবে ব্যাপক উপকার লাভ করতে পারে।

পদ্মাসন প্রনালী –

সামনের দিকে পা ছড়িয়ে শিরদাঁড়া সোজা করে বসুন। এবার বাঁ পা হাঁটু থেকে ভেঙে ডান উরুর উপর এবং ডান পা একই ভাবে বাঁ উরুর উপর রাখুন। হাত দু’টোর চেটো উপুড় করে বা চিৎ করে অথবা ধ্যান করার ভঙ্গিতে দু’হাঁটুর উপর রাখুন (আসনের এই ভঙ্গিকে সিদ্ধাসনও বলা হয়)। দৃষ্টি নাসিকার অগ্রভাগে এবং জিহ্বার অগ্রভাগ মাড়ির শেষদিকে স্পর্শ করে রাখুন। সহজ ভাবে যতক্ষণ পারা যায় ঐ অবস্থায় থাকুন।

পদ্মাসনে বেশি সময় থাকলেও কোন ক্ষতি নেই। শ্বাস-প্রশ্বাস অবশ্যই স্বাভাবিক থাকবে। এবার পা বদল করে অর্থাৎ প্রথমে ডান পা হাঁটু থেকে ভেঙে বাঁ উরুর উপর এবং বাঁ পা একই ভাবে ডান উরুর উপর রাখুন এবং আগে যতক্ষণ অভ্যাস করেছেন ততক্ষণ এ অবস্থায় থাকুন। এরপর ধীরে ধীরে পায়ের বাঁধন খুলে প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন। (আগের পোস্টে শবাসন এর পদ্ধতি দেয়া হয়েছে। )

পদ্মাসন এর উপকারিতা

  • এটি নিতম্ব খুলতে সাহায্য করতে পারে যা মেরুদণ্ডের উপর অতিরিক্ত চাপ কমাতে সাহায্য করে।
  • এটি শরীরের তিনটি রসবোধ যথা- বায়ু, পিত্ত এবং কফ অনুপাতে রাখতে সাহায্য করে।
  • এটি স্যাক্রাল নার্ভকে সমন্বয়পূর্ণ করতেও সাহায্য করতে পারে।
  • এটি একজন ব্যক্তির মনোযোগ এবং একাগ্রতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য খুব ফলপ্রসূ।
  • পায়ের নানা সমস্যা দূর হয়।
  • এই আসনের অভ্যাসের ফলে অন্তঃস্রাবী গ্রন্থিসমূহ কর্মক্ষম হয়ে ওঠে ।
  • ঘুমের সমস্যা, রাগ, উত্তেজনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ।
  • এটি আর্থ্রাইটিস ( জয়েন্টের ফোলা ) এবং পা ও হাঁটুর ব্যথা কমাতে সাহায্য করে ।
  • পদ্মাসন কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। ফলে শরীরের স্বাভাবিক ওজন বজায় থাকে ।
  • এটি শরীরের টাইট পেশী টিসু উপশম করে পেশী টান কমাতে সাহায্য করে।

পদ্মাসন বা লোটাস ভঙ্গির ঝুঁকিসমূহ –

  • যারা সায়াটিকায় ভুগছেন (পিঠের নিচের অংশে সংকুচিত স্পাইনাল নার্ভের কারণে ব্যথা হয়) তাদের পদ্মাসন এড়ানো উচিত
  • যাদের হাঁটু দুর্বল বা আহত তাদের এই পদ্ম ভঙ্গি এড়িয়ে চলতে হবে।
  • নিতম্ব, পাছা এবং পায়ের নিয়ন্ত্রণ প্রদানকারী স্নায়ুর সংক্রমণে ভুগছেন এমন রোগীদের এই আসনটি অনুশীলন করা উচিত নয়।
  • হাঁটুর ব্যথায় আক্রান্ত রোগীদের হাঁটু বাঁকানোর সময় প্রয়োজনীয় নমনীয়তা বাড়াতে পদ্মাসন করার আগে প্রি-মেডিটিভ আসন অনুশীলন করা উচিত।
  • আপনার শরীরকে গভীর প্রসারণের জন্য প্রস্তুত করতে এবং রক্ত প্রবাহের সীমাবদ্ধতা এড়াতে সর্বদা একটি ওয়ার্ম-আপের পরে পদ্মাসন করা উচিত।

Leave a Comment