শীতকালীন শাকের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

by Dr. Baby Akter
শীতকালীন-শাকের-পুষ্টিগুণ-ও-উপকারিতা

শীতের এই হিমেল আবহাওয়াতে বাজারে বাহারি ধরণের শাকের সমাহার। দেখতে যেমন সুন্দর, সতেজ তেমনি আছে পুষ্টিগুণও। শরীরের প্রয়োজনীয় যাবতীয় ভিটামিন ও মিনারেলস রয়েছে শীতকালীন সতেজ শাক-সবজিতে। দামে সস্তা, সহজলভ্য এবং খেতেও সুস্বাদু  শীতকালীন এইসব শাকে আছে রোগব্যাধি দূর করার অনেক ক্ষমতা। তাই জেনে নিন, শীতকালীন বিভিন্ন ধরণের শাকের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।

স্বাস্থ্য সচেতনতায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে খাদ্য তালিকায় নিয়মিত রাখুন হরেক রকমের ভিটামিনসমৃদ্ধ শাক।

জেনে নিন, শীতে বিভিন্ন শাকের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

লালশাক 

শীতকালে একটি সহজলভ্য শাক হল লালশাক। যদিও সারা বছর এই শাক পাওয়া যায়। তবে শীতকালে অনেক বেশি সহজলভ্য এই লালশাক। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে হিমোগ্লোবিন এবং আয়রন যা অ্যানিমিয়া অর্থাৎ রক্তশূন্যতা, নিম্ন রক্তচাপ মানে লো-ব্লাড প্রেশার, দুর্বলতা, ক্রমশ শক্তি কমে যাওয়ার থেকে রক্ষা করে। তাছাড়া ডায়বেটিস রোগী, অস্টিও আর্থ্রাইটিসের সমস্যায় লালশাক অত্যন্ত কার্যকরী। গর্ভবতী অবস্থা থেকে শিশুর জন্ম ও মাতৃদুগ্ধ পান পর্যন্ত লালশাক ভীষণ জরুরি। তাই এই শীতে লালশাক অবশ্যই খাওয়া উচিত।

পালংশাক

শীতকালীন শাকের মধ্যে পালংশাক খুব জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু। বাজারে সহজলভ্য এই শাক ঝোল বা ভাজি যে কোন ভাবে রান্না করে খাওয়া যায়। পালংশাকে আছে উচ্চমাত্রায় ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন ‘এ’ যা রক্তচাপ কমায় এবং লিম্ফোসাইট বা রক্তের শ্বেত কণিকা দেহকে বিভিন্ন সংক্রমণ ও রোগ থেকে রক্ষা করে। এতে বিভিন্ন ধরণের ফ্ল্যাভোনয়েড থাকায় তা ক্যান্সার সহ বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে। তাছাড়া এতে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন এবং ফলিক এসিড যা চোখের ছানি পড়া, ত্বককে বাইরের আদ্রতা থেকে রক্ষা করে এবং হৃদ যন্ত্রের সুরক্ষা দেয়। তাই দৈনন্দিন রান্নায় এই শাক রেসিপিতে রাখতে পারেন।

সরিষা শাক

পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ শীতের আরেকটি শাক হল সরিষা শাক। এটি একটি সুস্বাদু শাক। সরিষা শাকের ভর্তা খুবই মুখরোচক। শীতের শুরুতে এই শাক বেশি পাওয়া যায়। এতে রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম, প্রোটিন ও ফাইবার যা আপনার হার্ট ভালো রাখে, রক্তের কোলস্টেরল কমায় এবং গর্ভবতী মায়েদের সুস্থ শিশু জন্মদানের সম্ভাবনা বাড়ায়।

সরিষা শাকে আছে শক্তিশালী এন্টি-অক্সিডেন্ট যা নানা রকম ভাইরাল অসুখ থেকে আপনাকে সুরক্ষা দেয়। এটি ভিটামিন ও মিনারেলের একটি সমৃদ্ধ উৎস। ভিটামিন এ, সি ও কে সৃমদ্ধ সরিষা শাক শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন ’এ‘ দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে, ভিটামিন ‘কে’ হাড়ের সুরক্ষা করে এবং মস্তিষ্ককে রাখে দারুণ সচল।

সরিষা শাক ঝোল, ভাঁজি, ভর্তা অনেক ভাবে খাওয়া যায়। তাই নিজেকে সুস্থ,সবল এবং স্বাস্থ্যবান রাখতে এটি নিয়মিত খেতে পারেন।  

মূলা শাক 

মুলা শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যায় যা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে দেহের রোগ প্রতিরোধ করে। এছাড়াও এতে  পটাসিয়াম, মলিবডেনাম, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স সমৃদ্ধ ফলিক এসিড রয়েছে। মূলা শাক অ্যান্টি-ক্যান্সার উপাদান সমৃদ্ধ সবজি, মুলা শাক খেলে অ্যালার্জি ও হৃদপিণ্ডের বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। শীতকালীন হাতের নাগালে পাওয়া যায় এই শাক। মুক্তমূলক পরিষ্কারক এবং দেহের ব্লাড সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। মূলা শাক অ্যান্টি-ক্যান্সার উপাদান সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে অ্যালার্জি ও হৃদপিণ্ডের বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। তবে যাদের কিডনি বা পিত্তথলির বিভিন্ন সমস্যা আছে তাদের মুলা শাক কম খাওয়া উচিত। 

পুঁই শাক

শীতে বাজারে প্রচুর পরিমানে পুইশাঁক পাওয়া যায়। অন্যান্য অনেক শাকের মত এর মধ্যে অনেক ভিটামিন ‘এ’ ভিটামিন ‘সি’ লোহা, ও ক্যালসিয়াম আছে। এই শাক নানাভাবে রান্না করে খাওয়া যায়। ভাজিও খাওয়া যায়। আবার মাছ দিয়ে রান্না করে অনেকে। এছাড়া ক্যালরির ঘনত্ব কম। তদুপরি ক্যালরি-প্রতি আমিষের পরিমাণও বেশি। পুইশাঁক গনোরিয়া রোগে ও পাইলস রোগে খুব উপকারী। পুঁই শাকের পাতার রস ছোটদের সর্দি, কোষ্ঠবদ্ধতার জন্য অধিক কার্যকরী। 

পেঁয়াজ পাতা

শীতে পেঁয়াজপাতা একটি বেশ জনপ্রিয় শাক যা ভাজি বা বিভিন্ন তরকারির সাথে মিক্স করে রান্না করা যায়। আবার পেঁয়াজপাতার বড়াও খেতে অনেক মজাদার। এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকার বয়ে আনে। অ্যান্টি-ভাইরাল ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় পেঁয়াজ পাতা সাধারণ ঠাণ্ডা, ফ্লু ও ভাইরাল ইনফেকশনের ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে বহুকাল ধরে। ভিটামিন ‘সি‘ ভিটামিন বি-১২ এবং থায়ামিন সমৃদ্ধ এই পাতা কোলেস্টেরল ও রক্ত চাপের উচ্চ মাত্রাকে কমাতে সাহায্য করে। উচ্চ মাত্রার ফাইবার থাকার কারণে যাদের খাবারের রুচিহীনতা এবং হজমের সমস্যা ভুগছেন তাদের জন্য পেঁয়াজপাতা খুব উপকারী। 

তাছাড়া উচ্চ মাত্রার ভিটামিন ‘সি’ কোলাজেনের সমন্বয় সাধনে কাজ করে যা হাড়কে শক্তিশালী করে এবং লুটেইন ও জেনান্থিন নামক ক্যারোটিনয়েডের উপস্থিতির জন্য চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় এবং স্বাভাবিক দৃষ্টির রক্ষণাবেক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বথুয়া বা বেথো শাক

শীতকালীন শাকের মধ্যে খুব মজাদার ও সুস্বাদু এই বথুয়া বা বেথো শাক। এ শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ফসফরাস, জিংক যা পিত্ত, লিভারের সমস্যা, মুখে ঘাঁ ও ত্বকে শ্বেতির মতো সমস্যা নিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকরী! বেথো শাক বেটে তার সঙ্গে ২ চামচ জিরার গুঁড়ো, ২ চামচ পাতিলেবুর রস মিশিয়ে শরবত বানিয়ে দিনে দুইবার খেলে  প্রস্রাবের জ্বালা ভালো হয়ে যায়। প্রতিদিন ১ কাপ বেথো শাক রস খেলে কিডনি পাথুরি রোগে উপকার পাওয়া যায়। বেথো শাক ডাল বা চিংড়ী দিয়ে রান্না করলে খেতে বেশি মজাদার হয়।  

লাউ শাক

হরেক রকম শীতের শাকের মধ্যে লাউ শাক দেখতে যেমন লোভনীয় খেতেও তেমনি সুস্বাদু। অনেক ধরণের রেসিপি করে লাউ শাক খাওয়া যায়। মাজার বিষয় হল, বাচ্চারাও লাউশাক ভাঁজা খুব পছন্দ করে। লাউ শাকে প্রচুর আঁশ থাকার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং পাইলস প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। এছাড়া লাউ শাকে রয়েছে লুটেইন, বিটা-ক্যারোটিন এবং জিয়েজ্যান্থিন যা রোগ প্রতিরোধ করে। ক্যালরি কম থাকায় ওজন কমানোর জন্য লাউ শাক উপকারী এবং হার্টের পক্ষেও খুব ভালো।

You may also like

Leave a Comment