শীতে চুলের যত্ন ও চমৎকার কার্যকরী ঘরোয়া প্যাক

by Dr. Baby Akter
শীতে-চুলের-যত্ন-ও-ঘরোয়া-প্যাক

শীতেকালে হিমহিম বাতাসে আর্দ্রতা কমে যায় ধুলা বালির প্রকোপ বেড়ে যায়। খুশকি, ড্রাই স্ক্যাল্পের সমস্যা ও অতিরিক্ত রুক্ষতাসহ দেখা চুলের নানারকম সমস্যা। তাই চুলের ধরন বুঝে চুলের যত্ন নিতে হবে। স্ক্যাল্প বা মাথার ত্বক হয় দুই রকমের- শুষ্ক ও তৈলাক্ত। শুষ্ক ত্বকে খুশকির সমস্যা বেশি দেখা দেয় আর মাথার ত্বক তৈলাক্ত হলেও চুল শুষ্ক হয়ে যায়। তাছাড়া অনেক সময় শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে হওয়া খুশকি থেকে চুলের গোড়া আলগা হয়। ফলে চুল ঝরাও বেড়ে যায় অনেকগুণ। তবে সামান্য ঘরোয়া উপকরণ দিয়ে যত্ন নিলে অল্প খরচেই এই শীতেও চুল থাকবে ঝরঝরে, সুন্দর আর সতেজ।

স্ক্যাল্প বা মাথার ত্বক হয় দুই রকমের শুষ্ক ও তৈলাক্ত। ত্বকের ধরন বুঝে যত্ন নিতে হয়, তেমনি চুলেরও ধরন বুঝে যত্ন নিতে হবে। তাহলে এই শীতেও  আপনার চুল থাকবে কোমল, ঝলমলে ও মসৃণ

শীতে চুলের যত্নের গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপায় ও ঘরোয়া প্যাক 

টি ট্রি এর সঙ্গে নারকেল তেল

নারকেল তেলের মধ্যে থাকে অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল অনেক উপাদান, আর টি ট্রির তো তুলনা নেই। টেবিল চামচ নারিকেল তেলের সঙ্গে ব্যবহার করতে পারেন ৫-৬ ফোঁটা টি ট্রি এসেনশিয়াল ওয়েল। তাই এই ২ তেলের মিশ্রণ আপনার চুলের সুস্থ ত্বকের জন্য পর্যাপ্ত শক্তিশালী। স্ক্যাল্পে অনেক সময় খুশকি, স্ক্যাল্পের র‌্যাশ সহ অন্যান্য সমস্যা হতে পারে। সেজন্য টি ট্রি তেলের ব্যবহারে স্ক্যাল্পের সব সমস্যা দূর হবে।

বাদাম তেল

শীতে যদি চুলের রুক্ষতা বেশি অনুভব করেন, সেক্ষেত্রে বাদাম তেলের কোনো তুলনা নেই। ওমেগা থ্রী ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ এই তেল যে কেবল চুলের জন্য উপকারী তা নয়, স্বাস্থ্যকর স্ক্যাল্পের জন্যও বিশেষভাবে কার্যকর। তাই শীতের এই রুক্ষ সময়েও আপনার চুল  উজ্জ্বল ও মসৃণ রাখার জন্য চুলের গোঁড়ায় এই তেল দিতে পারেন সপ্তাহেএকদিন। 

মধু 

গোসলের সময় আধ কাপের চেয়ে একটু বেশি পরিমাণ মধু এক মগ জলে মিশিয়ে নিন। শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার ব্যবহারের পরিবর্তে চুলে এই মিশ্রণ ঢেলে দিন। আঙুল চালিয়ে হালকা ম্যাসাজ করুন। চুল পানি দিয়ে ভাল করে ধুয়ে নিন। এই মিশ্রণ সব ধরনের চুলের জন্য উপকারী।

মৌরি 

মৌরি এবং সমপরিমাণ পানি সারা রাত ভিজিয়ে রেখে পরদিন ভালোমতো বেটে মাথার ত্বকে ১ ঘন্টা রাখুন। তারপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেললে খুশকি দূর হবে। বিশেষ করে মাথার তৈলাক্ত ত্বকের জন্য অর্থাৎ খুশকি ত্বকের সঙ্গে লেগে থাকে, এ সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে মৌরি বেশ উপকারী । 

মেথি ও তেলের মিশ্রণ

চুলকে অনেক বেশি সিল্কি আর স্মুথ করতে এবং চুলের উজ্জ্বলতা ফিরে পেতে এই তেল বেশ কার্যকরী। তেলের সঙ্গে মেথি গুড়া মিশিয়ে নিতে হবে। চুলের গোড়ায় আঙ্গুলের ডগা দিয়ে লাগাতে হবে। অপর পদ্ধতি হলো- আস্ত মেথি দানা নারকেল তেলের সঙ্গে ভিজিয়ে রাখা। দুটির যেকোনো একটি ব্যবহার শুরু করলে ভালো ফল পাবেন।

অ্যালোভেরা

চুল ও মাথার ত্বকে পি এইচ-এর ভারসাম্য রক্ষা করতে অ্যালোভেরা অত্যন্ত কার্যকর। বাজারের অ্যালোভেরা জেলগুলোতে রাসায়নিকের উপস্থিতি  তা অনেক সময় ক্ষতিকর হয় । তাই প্রাকৃতিক উপায়ে সে জেল হাতে এলে সেটাই ব্যবহার করা ভাল। অ্যালোভেরা পাতার শাঁসটা বার করে   শ্যাম্পুর পর চুলের আগা থেকে গোড়া এই শাঁস লাগান ও মাথার ত্বকে আঙুলের সাহায্যে মাসাজ করুন। তবে অনেকের এই শাঁস ত্বকে সহ্য হয় না তাঁরা ফুটিয়ে নিয়ে তবেই ব্যবহার করুন।

আমলকী, মেথি ও মধুর প্যাক 

টেবিল চামচ মেথি ও টেবিল চামচ শুকনা আমলকী এক কাপ পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রাখার পর বেটে ফেলুন। এরপর এর সঙ্গে মেশান দুই-তিন চা-চামচ মধু। এই মিশ্রণ চুলের গোড়ায় লাগালে খুশকি যেমন দূর হবে তেমনি চুলে পুষ্টি জোগাতেও সাহায্য করবেও সেই সাথে খুশকি দূর হবে। এটি শীতকালে মাথার শুষ্ক ত্বকের জন্য বেশি উপযুক্ত।  

ডিম্ ও মধুর প্যাক 

টা ডিম ভেঙে তাতে ৩ চামচ মধু যোগ করে ফেটিয়ে তরপর গোসলের  আগে চুলে লাগিয়ে ১-২ ঘণ্টা রেখে দিন। এরপর চুল ধুয়ে ফেলুন খুব ভাল করে। শ্যাম্পুর পর ক্ষারবিহীন বা খুব অল্প ক্ষারযুক্ত কোনও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। রুক্ষ ও তেলতেলে  বিশেষ করে  শীতে যাদের  চুলে খুব জট পড়ে, উভয় প্রকার চুলের জন্যই বিশেষ কার্যকরী এই প্যাক।

জবা ও তেলের মিশ্রণ

চুল ঝরঝরে, সুন্দর আর সতেজ রাখতে আর  খুশকি ও রুক্ষতা  দূর করতে জবা ফুলের কার্যকরী ভেষজ গুণ রয়েছে। একটি ছোট পাত্রে  কয়েকটি পাতাসহ জবা ফুল কিছুটা নারকেল তেলের সঙ্গে দিয়ে দিন। ফুলের নির্জাস ভালোভাবে মেশার জন্য  অল্প আঁচে তেল গরম করুন। ঠাণ্ডা করে কোনো কাঁচের বোতলে সংরক্ষণ করুন। স্ক্যাল্পে গোসল করার ১ ঘণ্টা আগে এই তেল দিয়ে রাখুন। কয়েক মাসেই  মধ্যে ফলাফল পাওয়া যাবে।  

নিয়মিত চুল ধুতে হবে

ঠান্ডার একধরনের ভীতির কারণে অনেকে নিয়মিত গোসল করতে চায় না। কেউ কেউ আবার গোসল করলেও শরীরে গরম পানি ব্যবহার করেন। শরীরে গরম পানি ব্যবহার করলেও মাথায় গরম পানি ব্যবহার করা যায় না। এ জন্য অনেকে গোসলের সময় চুল ভেজান না। ফলে শ্যাম্পুও করা হয় না নিয়মিত। এটি একেবারেই করা উচিত নয়। বরং এ সময় বাইরে অনেক বেশি ধুলাবালু উড়ে বলে প্রতিদিন  চুল পরিষ্কার করা উচিত। এবং চুল অবশ্যই ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুতে হবে।

You may also like

Leave a Comment