শীতে শুষ্ক ত্বকের ঘরোয়া যত্ন

by Dr. Baby Akter
শুষ্ক ত্বকের ঘরোয়া যত্ন

শীতের হিমেল হাওয়া আরামদায়ক হলেও শরীরের ত্বকের উপযুক্ত নয়। ঋতু বদলের পালায় ত্বকে কিছু আলাদা আলাদা সমস্যা তৈরি হয়। শীতের মাসগুলিতে আর্দ্রতা কমে যাওয়ার কারণে শুষ্ক, চুলকানি এবং বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। শীত যত বাড়তে থাকে, ত্বকের সমস্যা ততই বেশি হতে শুরু করে। ত্বক তিন ধরনের হয়- তৈলাক্ত, শুষ্ক ও মিশ্র। তৈলাক্ত ত্বকও এ সময় মলিন হয়ে যায় এবং মুখ ধোয়ার পরপরই ত্বকে দেখা যায় শুষ্ক টান টান ভাব। আর শুষ্ক ত্বকের জন্য শীত যেন এক দুঃস্বপ্ন। তাই শীতের শুরু থেকে নিয়মিত ত্বকের পরিচর্যা করলে আপনি থাকবেন সতেজ, তরতাজা।

শীতে কি কি ঘরোয়া যত্নের মাধ্যমে শুষ্ক ত্বককে মসৃণ ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করা যায়?

পানি পান করা

যে কোন ধরনের ঋতুই হোক না কেন পানিকে অধিকতর গুরুত্ব দেয়া উচিত। শরীরে পানির গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। যেহেতু আমাদের শরীরের দুই-তৃতীয়াংশ পানি  দিয়ে তৈরি, তাই আমাদের নিয়মিত তা পূরণ করতে হবে, বিশেষ করে শীতের মাসগুলোতে ৭-৯ গ্লাস পানি পান করা আপনাকে হাইড্রেটেড রাখবে এবং আপনার ত্বককে সুস্থ দেখাবে।

নারিকেল তেল

শীতে নারিকেল তেলের ব্যবহার, ফেটে যাওয়া ত্বকের লাবণ্য ফিরিয়ে আনতে পারে। তেল ম্যাসাজ করলে ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগানোর প্রয়োজন হয় না। প্রতিদিন গোসলের আগে নারিকেল তেল দিয়ে মাসাজ করুন। 

জলপাই তেল/অলিভ অয়েল 

শীতে শুষ্ক ত্বকের জন্য জলপাই তেল বা অলিভ অয়েল অত্যন্ত কার্যকরী। অলিভ অয়েল রয়েছে ভিটামিন ‘এ’, ‘ই’ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা ত্বককে সতেজ রাখে ও ময়েশ্চারাইজ করে।

ময়েশ্চারাইজার বা বডি বাটার ব্যবহার

ভাল মানের ময়েশ্চারাইজার শীতে ত্বকের যত্নে বিশেষভাবে সাহায্য করে। ত্বকের শুষ্কতা বজায় রাখতে অ্যাভোকাডো তেল, নারকেল তেল, এবং তিলের তেল খুবই উপকারী। অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে বডি লোশনের পরিবর্তে ক্রিম ব্যবহার করুন। গোসলের পর পরই ভেজা থাকা অবস্থাতেই তেল মেখে ফেলতে পারলে আর্দ্রতা বজায় থাকে অনেকটাই।

অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরা শুষ্ক ত্বকের যত্নে  জন্য অতুলনীয়। এক চামচ নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েল, অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে মিশ্রণটি মুখে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। সাধারণত ত্বক থেকে দূষিত পদার্থ বের করার জন্য অ্যালোভেরা জেল ও নারিকেল তেল ত্বকে পরিশোধনের কাজ করে। 

পাকা কলা আর মধু

একটি পাকা কলা চটকে নিন, তাতে মেশান দুই টেবিল চামচ মধু। ভালো করে ব্লেন্ড করে পেস্ট তৈরি করুন। মুখে লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিট রেখে দিন, তারপর ধুয়ে ফেলুন। এটি শুষ্ক ত্বকের যত্নে অধিক উপকারী। 

দুধ-বেসন পেস্ট

ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে ও বয়সের ছাপ কমাতেও বেসন অতুলনীয়। দুধের ভিটামিন ও মিনারেল ত্বককে সতেজ করে তোলে। ত্বককে প্রাণবন্ত রাখার জন্য দুধ ও বেসনের পেস্টটি সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করুন।

পাকা পেঁপে

১/২  কাপ চটকানো পাকা পেঁপের সাথে ১ টেবিল চামচ মধু ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার মুখে ভালো করে লাগিয়ে রাখুন। আধ ঘণ্টা পরে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ৩-৪ বার এই মিশ্রণ ব্যবহারে শুষ্ক ত্বকের আর্দ্রতা ও মসৃণতা ফিরে আসবে।

গরম পানির ব্যবহার

গরম পানিতে গোসল করে আরাম লাগলেও শীতকালে কিন্তু গরম পানি ত্বকের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। বিশেষজ্ঞদের মতে গরম পানি ত্বকের উপরিভাগে থাকা প্রাকৃতিক তেলের স্তর নষ্ট করে। এ সময়ে  গরম পানির  ব্যবহার কম করার চেষ্টা করুন।

সাবান ব্যবহার কম

শীতকালে খেয়াল রাখতে হবে তা যেন, ত্বকে  অতিরিক্ত তরল সাবানের ব্যবহার না করা হয়। অতিরিক্ত সাবানের ব্যবহার শুষ্ক ত্বকে  ক্ষতিকর। 

অ্যালোভেরা আর মধু

 চা চামচ মধু এবং টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল একসাথে মেশান। সারা মুখে, বিশেষ করে শুকনোভাব যেখানে বেশি সেই অংশে লাগান। আধঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন।

বাইরে যাওয়ার আগে যা করবেন 

শীতের রোদ গায়ে  আরাম দিলেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে ভুলবেন না। অন্তত ৩০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন লোশন মেখে বাইরে বের হবেন। বেশি ময়েশ্চারাইজারযুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন, প্রয়োজনে পানি মিশিয়ে ব্যবহার করুন। 

ক্লিনজার 

শুষ্ক ত্বকের জন্য স্ক্রাবিং বেশি ভালো নয়। চাইলে মুসুর ডাল বেটে ঘরেই তৈরি করে নিতে পারেন ক্লিনজার । ত্বকের মরা কোষ দূর করতে এটি খুব কার্যকরী। মুসুর ডাল বাটার সাথে কাচা দুধ মিশিয়ে নিলে অধিক কার্যকরী। এটি মুখের সাথে সাথে সারা গায়ে লাগান। শুষ্ক ত্বক মসৃণ ও প্রাণবন্ত থাকবে। 

শীতে শুষ্ক ত্বকের কিছু  উপসর্গ

  • গোসলের পর বা মুখ ধোয়ার পর ত্বক টান টান লাগবে।
  • লালচে ভাব থাকতে পারে।
  • ত্বকের রেখাগুলো আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে এবং বলিরেখাও পড়ে যেতে পারে।চুলকানি ভাব থাকতে পারে।
  • চামড়া সাদাটে হয়ে উঠে যেতে পারে। অর্থাৎ মৃত কোষ বেড়ে যায়।
  • নরম ত্বকের পরিবর্তে ত্বকে রাফ এবং শুষ্ক ভাব দেখা যাবে।
  • ত্বক শুকনো ও মলিন লাগবে।

You may also like

Leave a Comment