কয়েকটি সাধারণ রোগের সহজ ঘরোয়া চিকিৎসা

সচরাচর সাধারণ কিছূ কিছু শারীরিক রোগের চিকিৎসা আমরা ঘরে বসেই করে নিতে পারি। এরজন্য প্রথমত আমাদের যা দরকার তা হল একটু স্বাস্থ্য সচেতন হওয়া। এ সকল রোগব্যাধি আমরা সহজলভ্য ঘরোয়া কিছু ভেষজ উপাদান ব্যবহার করেই নিরাময় করতে পারি। এরকম কিছূ সাধারণ শারীরিক সমস্যার সহজ সমাধানের উপায় নীচে আলোচনা করা হল:

অহেতুক অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের কারণে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে ওই অ্যান্টিবায়েটিক আর কাজ না-ও করতে পারে।

পুরনো যে কোন ঘায়ের মলম তৈরী করুন নিজে:

৫০০ গ্রাম গাওয়া ঘিয়ের সঙ্গে ৫০ গ্রাম নিম পাতা মিশিয়ে একটি পাত্রে নিন। তারপর মিশ্রণটি চুলায় বসিয়ে গরম করুন। নিম পাতা কালচে বর্ণের হয়ে আসলে পাত্রটি নামিয়ে পাতা ও ঘি একসাথে মেড়ে পেষ্ট বা মলমের মত করে তৈরী করুন।

যে কোন পুরনো ঘা যা কোন ঔষধেই সারেনি তা এই প্রাকৃতিক মলম ব্যবহারে সেরে যাবে। প্রতিদিন ২ বার করে এই মলম লাগাতে হবে। এই মলম বহু পরীক্ষিত।

কাটা দাগ ও পোড়া দাগ দুর করার উপায়

অনেক সময় কাটা বা পোড়া দাগ শরীরের বিভিন্ন স্থানের সৌন্দর্য নষ্ট করে। এধরনের দাগ দুর করতে নীচে কয়েকটি পদ্ধতি দেয়া হল:

চন্দন জলে ঘষে নিয়ে কাটা বা পোড়া দাগে লাগালে আশাতীত উপকার পাওয়া যায়।

প্রতিদিন একটা করে পাকা টমেটোর সাথে লেবুর রস লাগিয়ে সকাল-সন্ধ্যা দাগের স্থানে ঘষুন। কিছুক্ষন পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কয়েকদিন করলে ত্বক থেকে দাগ মিলিয়ে যায় এবং ত্বকের সৌন্দর্য ফিরে আসে।

রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে দাগের স্থানে লেবুর রস লাগিয়ে ঘষুন এবং রস লাগিয়ে রেখে দিন। পরদিন সকালে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে ১/২ সপ্তাহ করলে দাগ মিলিয়ে যাবে।

 দন্তশুল

দাঁতে যদি হঠাৎ যন্ত্রণা আরম্ভ হয় তাহলে আদার খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে কুচকুচি করে ব্যাথার জায়গায় চিবালে এবং চুষলে যে কোন ধরনের দাঁতের ব্যাথা নিরাময় হয়। মনে রাখবেন আদা চিবাতে হবে দাঁত দিয়ে এবং ঐ রস এমনভাবে চুষতে হবে যাতে ব্যাথার দাঁতে রস লাগে।

গলা ব্যথা

পূর্ণ গ্লাসে গরম পানিতে  আধা চা চামচ লবণ মিশ্রিত করে দিনে ৩ বার পর্যন্ত গার্গেল করুন। এতে গলা ফোলা কমাতে সাহায্য করে। গরম তরল পান করুন, যেমন মধু সহ গরম চা, গরম স্যুপ, লেবুর সাথে গরম জল বা ভেষজ চা। শরীর ডি-হাইড্রেড হলে তখন প্রচুর পানি পান করে হাইড্রেটেড থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। এতে গলায় আদ্রতা বজায় থাকে তা পাতলা শ্লেষ্মা নিঃসরণ সহায়তা করে।

কাঁশি

ভেষজ চা বা হালকা গরম পানি  এবং লেবুর সাথে ২ চা চামচ মধু মিশিয়ে খান। এটি আপনার গলা প্রশমিত করে এবং কাশি উপশম করতে সাহায্য করে। এবং আনারসের টুকরো দিনে ৩ বার খান অথবা তাজা আনারসের রস পান করুন। ফলটিতে ব্রোমেলিন নামক একটি এনজাইম রয়েছে, যা কাশি দমন করতে এবং আপনার গলায় শ্লেষ্মা আলগা করতে সাহায্য করে বলে মনে করা হয়।

নিয়মিত খাওয়ার এক ঘন্টা পর পানি পান করার অভ্যাস করলে কাঁশি থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং এতে হজম শক্তিও বৃদ্ধি পায়।

পেট ব্যাথায় 

পেট ব্যাথায় আদা কুচি অথবা আদা চা পান করুন। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে আদা যেকোন  ধরণের পেটের অসুস্থতা দূর করতে এবং হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে  অধিক কার্যকর ।

পুদিনার সালাদ খান। বদহজম, গ্যাস এবং ডায়রিয়ার জন্য বহুকাল ধরে  প্রাকৃতিক চিকিত্সা হিসাবে পুদিনা ব্যবহার করা হয়েছে।

পোড়া গেলে 

আক্রান্ত স্থানে অবিলম্বে ঠান্ডা জল প্রয়োগ করুন এবং পরিষ্কার ড্রেসিং করুন। গুরুতর বা ব্যাপক পোড়ার জন্য, অনুগ্রহ করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার নিকটস্থ  হাসপাতালের জরুরি বার্ন ইউনিটে নিয়ে যান। তবে  মনে রাখবেন যে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ  শুধুমাত্র দুর্ঘটনা এবং জরুরী অবস্থার জন্য।

ডায়রিয়া 

ডায়রিয়া হলে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয় তাই প্রচুর পরিমাণে তরল পান করুন এবং আপনার কাছের ফার্মেসি থেকে রিহাইড্রেশন পানীয় কিনে পান করুন।

লবণাক্ত খাবার যেমন স্যুপ আপনার সিস্টেম থেকে দূর যাওয়া লবণ ফিরে আন্তে সাহায্য করে। যতটা সম্ভব খাবার খান। আর শিশুদের ক্ষেত্রে বুকের দুধ খাওয়ানো বা বোতলের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে। অবস্থার অবনতি হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। 

জ্বর

সাধারণত পাঁচ থেকে সাত দিনে জ্বর সেরে যায়। জ্বর হলে বিচলিত হওয়া যাবে না। জ্বরে আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগী ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকে। জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে আর কী কী লক্ষণ রয়েছে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। বেশি করে তরলজাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে হবে এবং রেস্টুরেন্ট  কিংবা হোটেলের তৈরি খাবার গ্রহণ বাসায় তৈরি কম তেল ও মসলা দিয়ে রান্না করা খাবার খেতে হবে। জ্বর অবস্থায় ঠাণ্ডা খাবার না খাওয়া ভালো ঠাণ্ডা খাবার নতুন রোগের উত্পত্তি ঘটাতে পারে। 

অহেতুক অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের কারণে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে ওই অ্যান্টিবায়েটিক আর কাজ না-ও করতে পারে।

প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেলস, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, প্রোটিন- পুষ্টি উপাদান সম্পন্ন সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে। এতে অল্প দিনের মধ্যেই রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।

Related posts

প্রাকৃতিক বা ঘরোয়া উপায়ে বন্ধ্যাত্ব রোগ নিরাময় করুন

কান পাকা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

পুরাতন বা নতুন আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা ও প্রতিকার