শক্তিশালী পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ শীতকালীন শাক-সবজির উপকারিতা

শীতকালীন শাক-সবজির উপকারিতা

আমাদের দেশে শীতের সময় বাজারে বেশি দেখা যায় সবজি – ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মুলা, ব্রকলি, শালগম, পালংশাক, পেঁয়াজকলি, মটরশুঁটি, লাউ প্রভৃতি। এসব সবজি যেমন সুস্বাদু তেমনি এর পুষ্টিও বেশি। তাই শীতে পুষ্টিমান বাড়াতে প্রচুর শাকসবজি গ্রহণ করুন। পুষ্টিবিদদের মতে, শীতকালীন সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, বিটা-ক্যারোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফলিক এসিড, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন প্রভৃতি। শরীরে রক্তকণিকা বা প্লাটিলেড গঠনে ও অস্থিক্ষয় রোধে শীতকালীন শাকসবজির ভূমিকা অপরিসীম। শীতকালীন সবজিতে বিদ্যমান ভিটামিন-‘ই’ চুলপড়া রোধ করে এবং মুটিয়ে যাওয়ার সমস্যা থেকে রক্ষা করে। তাই সুস্থ ও সুন্দর থাকার জন্য প্রচুর পরিমাণে শীতকালীন শাকসবজি গ্রহণ করা উচিত। আসুন জেনে নিই কোন সবজিতে কী ধরনের পুষ্টি বেশি।

পুষ্টিবিদদের মতে, শীতকালীন সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, বিটা-ক্যারোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফলিক এসিড, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন প্রভৃতি তাই সুস্থ ও সুন্দর থাকার জন্য প্রচুর পরিমাণে শীতকালীন শাকসবজি গ্রহণ করা উচিত।

শীতের কয়েকটি সবজি ও তাদের পুষ্টিগুণ

ফুলকপি

ফুলকপির সালফারযুক্ত সালফোরাফেন উপাদান ক্যানসার কোষ ধ্বংস করে। ভিটামিন এ, বি, সি ও ভিটামিন কে আছে প্রচুর। এ ছাড়া আছে আয়রন, সালফার, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও ফাইবার। রক্তচাপ কমায়। হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে। ফুলকপির ভিটামিন এ ও সি  শীতকালীন ঠান্ডা, জ্বর, সর্দি, কাশি ও টনসিলের প্রদাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখে। ফাইবার ও সালফারসমৃদ্ধ ফুলকপি পরিপাকে সহায়তা করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। 

বাঁধাকপি 

ভিটামিন ‘সি’ ও ‘কে’ সহ বাঁধাকপির পাতার মোড়কে আছে নানা পুষ্টিগুণ। বাঁধাকপিতে বিদ্যমান গ্লুকোসিনোলেট নামের উপাদান ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। এর ফলিক এসিড বা ফলট রক্ত বাড়ায়, গর্ভস্থ শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করে। গবেষণা বলছে, পাতা দিয়ে মোড়া এ ধরনের সবজি রক্তে চর্বি ও শর্করা কমায়। বাঁধাকপি আঁশেরও চমৎকার উৎস, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

গাজর

গাজরে থাকে ফাইবার, যা হজমক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বয়সের ছাপ দূর করে, ত্বককে করে উজ্জ্বল আর লাবণ্যময়।

যাঁরা নিয়মিত গাজর খান তাঁদের ব্রেস্ট ক্যান্সার, কোলন ও ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। গাজর খেলে দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়। এতে পটাসিয়াম থাকে, যা রক্তপ্রবাহ ঠিক রাখে। হার্ট সুস্থ রাখতে, কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রোজকার খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন গাজর। এ ছাড়া বর্জ্যপদার্থ নিষ্কাশন করে লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়াতে গাজর বেশ উপকারী। 

শিম

যাঁরা নিরামিষভোজী এবং মাছ–মাংস যেকোনো কারণে খেতে পারছেন না, তাঁরা কিন্তু খুব সহজেই শিম, বরবটি, মটরশুঁটি, শিমের বিচি থেকে আমিষের চাহিদা পূরণ করতে পারেন। এটি আমিষের খুব ভালো উৎস। এতে আছে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পানি, যা রক্তে কোলেস্টেরল কমায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। শিশুদের অপুষ্টি দূর করে। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। 

তবে যাঁরা কিডনির রোগে ভুগছেন, তাঁরা বেশি শিম খাবেন না।

মুলা

মুলায় প্রচুর পানি থাকায় শরীরকে ডি-হাইড্রেট হওয়া থেকে রক্ষা করে। হজমশক্তি বাড়াতে, হার্ট ভালো রাখতে, শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিতে, এমনকি ক্যান্সার প্রতিরোধও করে থাকে এই মুলা। মুলার পাতায় ভিটামিন এ–এর পরিমাণ বেশি। প্রচুর বিটা ক্যারোটিন, আয়রন ও ভিটামিন সি আছে। ভিটামিন ‘সি’, জিংক ও ফসফরাস, যা ব্রণজনিত সমস্যা দূর করে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া এবং র‌্যাশ ওঠা থেকে সুরক্ষা দেয়। যাঁরা ওজন কমাতে চান, তাঁদের জন্য এটা বেশ ভালো খাবার। মুলায় খুব কম পরিমাণ ক্যালরি থাকে যাতে দীর্ঘ সময় পেট ভরার অনুভূতি জাগায়। 

টমেটো

টমেটো রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসও কমাতে সাহায্য করে। ত্বককে সতেজ রাখে। টমেটোতে লুটিন ও লাইকোপিন নামে কেরাটিনয়েড আছে, যা দৃষ্টি ও চোখের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে। প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে বলে ক্যানসার প্রতিহত করে। টমেটো ভালো করে ধুয়ে খেতে হবে। ম্যালিক ও সাইট্রিক অ্যাসিড বেশি থাকায় অনেক টমেটো একসঙ্গে খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।

ব্রকোলি

ব্রোকলিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ক্যালসিয়াম বিদ্যমান। শীতকালীন সবজি হিসেবে ব্রকোলি বর্তমানে দেশেও চাষ করা হচ্ছে। এটি চোখের রোগ, রাতকানা, অস্থি বিকৃতি প্রভৃতির উপসর্গ দূর করে ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

লাউ

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে লাউকে পথ্য হিসেবে ধরা হয়। লাউ খেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে, অনিদ্রার সমস্যাতেও উপকারী এটি। এ ছাড়াও রয়েছে ভিটামিন ‘কে’, ভিটামিন ‘ই’ ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘এ’, ফাইবার,আয়রন, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম ও জিঙ্ক। লাউয়ের জিঙ্ক উপাদানটি আমাদের দেহকে হৃদরোগ থেকে রক্ষা করে। লাউ মূলত পানিপূর্ণ ঠাণ্ডাজাতীয় একটি সবজি। এতে সবচেয়ে বেশি রয়েছে পানি, যা আমাদের দেহকে সহজেই পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা করে। 

পালংশাক

পালংশাক উচ্চমানের পুষ্টিগুণসম্পন্ন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এর ক্যারোটিনয়েডস ও শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রস্টেট ক্যানসার ও ওভারিয়ান ক্যানসার প্রতিরোধ করে। পালংশাকে থাকা  প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম ও আয়রন হৃদরোগ ও কোলন ক্যানসার প্রতিরোধ করে। 

যাঁদের ইউরিক অ্যাসিড এর সমস্যা রয়েছে, তাঁরা সপ্তাহে দিন ৩০ গ্রাম করে খেতে পারবেন।

Related posts

জেনে নিন পালংশাকের কিছু অসাধারণ গুণ ও উপকারিতা

শীতকালীন শাকের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা