জাম্বুরার পুষ্টিগুন ও খাওয়ার উপকারিতা

বর্ষার শেষ পর্যায় থেকে শুরু করে শীত আসার আগ পর্যন্ত জাম্বুরার পূর্ণ মৌসুম। বাজারে এই সময়কালে প্রচুর পাওয়া যায় এই ফল। ভিটামিন আর খনিজ উপাদানে পরিপূর্ণ জাম্বুরা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। একটি পরিপক্ব জাম্বুরা থেকে ভিটামিন-এ, ভিটামিন বি-১, ভিটামিন বি-২, বায়োফ্লাভোনয়েডস, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, হেলদি ফ্যাট, প্রোটিন এবং এনজাইমসের মতো নানা পুষ্টিগুণ যেমন মিলে তেমনি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও এর জুড়ি নেই। জ্বর, ঠান্ডা কিংবা কাশির মতো সমস্যাতেও জাম্বুরা ম্যাজিকের মতো কাজ করে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সহায়তা করে।

জন্ডিসের রোগীকে জাম্বুরা বা তার রস খাওয়ানোর একটা প্রথা বহুদিন ধরে চালু আছে আমাদের দেশে। এ কথা আধুনিক বিজ্ঞানও প্রমাণ করেছে যে, জাম্বুরা জন্ডিসের সমস্যায় লিভার টনিক হিসেবে ভালো কাজ করে।

জাম্বুরার পুষ্টি উপাদান সমূহঃ

প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যযোগ্য জাম্বুরায় রয়েছে: খাদ্যশক্তি ৩৮ কিলোক্যালরি, প্রোটিন ০.৫ গ্রাম, স্নেহ ০.৩ গ্রাম, শর্করা ৮.৫ গ্রাম, খাদ্যআঁশ গ্রাম, থায়ামিন ০.০৩৪ মিলি গ্রাম, খনিজ লবণ ০.২০ গ্রাম, রিবোফ্লেভিন ০.০২৭ মিলি গ্রাম, নিয়াসিন ০.২২ মিলি গ্রাম, ভিটামিন বি- ০.০৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৬ ০.০৩৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ১০৫ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ১২০ মাইক্রোগ্রাম, আয়রন ০.২ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৭ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৬ মিলিগ্রাম, ম্যাংগানিজ ০.০১৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১৭ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ২১৬ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম মিলিগ্রাম,

জাম্বুরা খাওয়ার উপকারিতা

  • জাম্বুরায় থাকা প্রোটিন এবং ফাইবার দীর্ঘ সময়ের জন্য পেটে থাকে। ফলে বাড়তি ক্ষুধা লাগে না এবং ক্যালোরি গ্রহণ কম হয়। এছাড়া জাম্বুরায় কারনিটিন পামিটয়েলট্রানসফারেজ নামের এক ধরনের উৎসেচক আছে। এটা শরীরের ওজন কমাতে সহায়ক। 
  • আমাদের দৈনিক ফাইবারের চাহিদার বেশ বড় একটি অংশ পূরণ করতে পারে জাম্বুরা। ফাইবার খেলে হজমের সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। এছাড়া অন্ত্রে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে ফাইবার। 
  • জাম্বুরা খেলে রক্তে কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ কমে। এতে হৃদরোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ জাম্বুরা ক্যানসারের মতো রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে। জাম্বুরায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। সেইসাথে অন্যান্য বেশ কয়েকটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগও মেলে ফলটি থেকে।
  • রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে জাম্বুরায় থাকা কিছু উপাদান।
  • জাম্বুরায় থাকা পটাশিয়াম রক্তনালি প্রসারিত করে ও রক্তচাপ কমায়। 
  • সাইট্রাস ফলটিতে থাকা ভিটামিন সি হুট ঘনঘন জ্বর আসা বা সর্দি লাগা প্রতিরোধ করতে সক্ষম। মুখের ঘা সারাতেও এর ভূমিকা রয়েছে। 
  • খাবারের রুচি বাড়াতে জাম্বুরা বেশ কার্যকর। 
  • জাম্বুরায় স্পারমেডিন নামের একটি বিশেষ উপাদান রয়েছে। এটি বার্ধক্য প্রতিরোধে সহায়তা করে।
  • জাম্বুরায় প্রচুর পরিমাণে পানি ও ভিটামিন সি থাকে। ফলে নিয়মিত ফলটি খেলে ভালো থাকে ত্বক। 
  • পেটের সমস্যা দূর করতে কিংবা যারা ডায়েটে আছেন তারাও বেছে নিতে পারেন এ ফলটি।
  • জাম্বুরাতে অন্য যেকোনো লেবুর মতোই প্রচুর ভিটামিন সি থাকে। ভিটামিন সি-এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এই ছোটখাটো নানা অসুখ-বিসুখের সঙ্গে লড়াই করার শক্তি দেয়।
  • যাদের দাঁতের ব্যথার সমস্যা আছে তাদের জন্যও জাম্বুরা খুবই উপকারী একটি ফল।
  • ঠান্ডা, সর্দি-জ্বর ইত্যাদি সমস্যায় জাম্বুরা বেশ উপকারী। যাদের অল্পতেই ঠান্ডা লাগে, তারা প্রতিদিন জাম্বুরা খেতে পারেন।
  • যারা প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বক ভালো রাখতে চান। তাদের ক্ষেত্রে জাম্বুরা ত্বক উজ্জ্বল করতে, ব্রণের সমস্যা দূর করতে বেশ কার্যকর। 
  • ক্যানসারসহ যাদের ইউরিনের সমস্যা আছে তাদের জন্যও জাম্বুরা উপকারী একটি ফল।

একটু খেয়াল রাখা প্রয়োজন, জাম্বুরা বেশ টক, নিয়মিত খেলে আপনার দাঁতের এনামেলের ক্ষতি হতে পারে। তাই যাদের দাঁত খুব সেনসিটিভ, তারা জাম্বুরা খাওয়ার পর কুলকুচা করে দাঁত পরিষ্কার করে নেবেন । 

Related posts

ম্যালেরিয়া হলে যা খাবেন

আমলকির যত উপকারী পুষ্টি ও ঔষধি গুণাগুণ

আখের রসের উপকারিতা