জ্বর নিজেই একটি রোগ নয়, একটি বাহ্যিক সংকেত যা শরীরের অভ্যন্তরীণ সংক্রমণ বা প্রদাহকে ও বিভিন্ন জটিলতার নির্দেশ দেয়। মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা 97 ডিগ্রি থেকে 99 ডিগ্রি ফারেনহাইটের মধ্যে পরিবর্তিত হয়। শরীরের তাপমাত্রা 100.4 ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি হলে তাকে জ্বর বা পাইরেক্সিয়া সংজ্ঞায়িত করা হয়।
সাধারণত জ্বরের জন্য যে মেডিসিন গুলো খাওয়া হয় তা সব জ্বরের তাপমাত্রা কমাতে পারে কিন্তু আরো অনন্যা উপসর্গ গুলো বিদ্যমান থেকে যায়। আর এখানেই হোমিওপ্যাথিক মেডিসিনের কার্যকারিতা। যা আপনার রোগ লক্ষণ অনুসারে আপনার শরীরে বিদ্যমান সকল যন্ত্রণার উপশম দিবে বা দূর করবে।
সাধারণত জ্বরের জন্য যে মেডিসিন গুলো খাওয়া হয় তা সব জ্বরের তাপমাত্রা কমাতে পারে কিন্তু আরো অনন্যা উপসর্গ গুলো বিদ্যমান থাকে আর এখানেই হোমিওপ্যাথিক মেডিসিনের কার্যকারিতা। যা আপনার রোগ লক্ষণ অনুসারে আপনার শরীরে বিদ্যমান সকল যন্ত্রণার উপশম দিবে বা দূর করবে।
জেনে নিন জ্বরের লক্ষণভেদে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
অ্যাকোনাইট (Aconite)
অস্থিরতা, উদ্বেগ ও ব্যথাজনিত জ্বরের প্রথম পর্যায়ে অ্যাকোনাইট হল একটি কার্যকরী ঔষধ। রোগীর মধ্যে চরম অস্থিরতা এবং উদ্বেগ থাকবে এবং ঠান্ডা পানির পিপাসা বাড়ে। শরীর প্রচণ্ড ঠাণ্ডা থাকে এবং রোগী সবসময় নিজেকে ঢেকে থাকতে চায়। এই ধরণের লক্ষণের ক্ষেত্রে অ্যাকোনাইট প্রয়োগ করলে রোগীর লক্ষণ গুলো দ্রুত উপশম হয়।
কখন এবং কিভাবে অ্যাকোনাইট খাবেন–
রোগীর জ্বরের সাথে সর্বদা অতিরিক্ত পিপাসা এবং তীব্র অস্থিরতা থাকলে এবং সাথে ঠাণ্ডা অনূভব হওয়া ও নিজেকে ঢেকে রাখতে চায়। এই ক্ষেত্রে সাধারণত 30C শক্তি দিয়ে শুরু করা যা দিনে ৩-৪ বার খাওয়া যাবে, প্রয়োজনে পুনরাবৃত্তি করা যেতে পারে। যদি লক্ষণগুলি উপশম বা দূর না হয় তবে এটির উচ্চ ক্ষমতা 200C দিনে দুবার গ্রহণ করা যেতে পারে। এটি 1M বা তার বেশি শক্তিতে গ্রহণ করার আগে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ব্রায়োনিয়া আলবা (Bryonia Alba)
শরীরে জ্বরের সাথে সাথে ঠান্ডা অনভূত হয়, প্রবল ব্যথা হয় ও রোগীর পিপাসা থাকে। রোগী শুয়ে থাকতে চায়। কিন্তু একটু নড়াচড়া এবং স্পর্শ থেকে আরও বেড়ে যায় তবে বেদনাদায়ক, পাশে শুয়ে থাকলে খুব ভাল লাগে।
কখন এবং কিভাবে ব্রায়োনিয়া আলবা খাবেন–
উপরোক্ত লক্ষণের ক্ষেত্রে সাধারণত নিম্ন ক্ষমতা 30C দিনে ২-৩ বার খাওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে পুনরাবৃত্তি করা যেতে পারে। আবার 200C শক্তি দিনে একবার নিতে হবে। যদি এটির উচ্চ ক্ষমতা 1M গ্রহণ করতে হলে অবশ্যই একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শে থাকতে হবে।
Eupatorium Perfoliatum – হাড়ের ব্যথা সহ জ্বরের জন্য
রোগী যখন জ্বরে হাড়ের তীব্র ব্যথা অনুভব করে তখন জ্বরের চিকিৎসায় Eupatorium Perfoliatum দারুণ কাজ করে। রোগী মাথা ও চোখে যন্ত্রণাদায়ক ব্যথায় কাঁপতে থাকে। ব্যথা থেঁতলে যাওয়ার মত অনুভুতি এবং রোগী মনে করে তাকে কেউ আঘাত করছে। যদিও এটি যে কোনো ধরনের জ্বরের জন্য দেওয়া যেতে পারে, তবে ডেঙ্গু জ্বর এবং ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে অধিক কার্যকর।
কিভাবে এবং কখন Eupatorium Perfoliatum খাবেন–
জ্বরের উপরোক্ত লক্ষণগুলো থাকলে Eupatorium Perfoliatum 30C শক্তি দিনে ৩-৪ বার খাওয়া যেতে পারে। তবে 200C এবং 1M ক্ষমতা শুধুমাত্র হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শে রোগীর লক্ষণগুলির সাথে রোগের লক্ষণগুলির নিখুঁত ভাবে মিলে যায় তাহলে ব্যবহার করা উচিত।
জেলসেমিয়াম (Gelsemium) -দুর্বলতার সাথে জ্বর।
জেলসেমিয়াম দীর্ঘদিন ধরে ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসার জন্য একটি কার্যকর হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন। যে সকল রোগীদের জ্বরের সাথে দুর্বলতা, মাথা ঘোরা এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার প্রবণতাও দেখা দেয় সে ক্ষেত্রে এটি খুবই উপকারী।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীর তৃষ্ণার অভাব রয়েছে। যদিও এটি একটি ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণ বিশিষ্ট ওষুধ, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি টাইফয়েড জ্বরের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রচণ্ড ক্লান্তি, মাথা ঘোরা সহ রোগী নিজেকে ঢেকে রাখতে পছন্দ করে এমন লক্ষণগুলোতে জেলসেমিয়াম ভালো কাজ করে।
জেলসেমিয়াম কখন এবং কিভাবে খাবেন-
ভাইরাল ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বরে শরীরে ব্যথা, মায়ালজিয়া (পেশীতে ব্যথা), হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক আটকানো, নিস্তেজতা, দুর্বলতা এবং মাথাব্যথা লক্ষণগুলো দেখা দিলে জেলসেমিয়াম 30C দিয়ে শুরু করা ভাল দিনে ৩-৪ বার এবং 200C শক্তিতে নিলে ২ বার নেওয়া যেতে পারে। 1M নিতে হলে অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথের সাথে পরামর্শ করতে হবে।
রাস টক্স (Rhus Tox)-প্রচণ্ড ব্যথা সহ জ্বর এবং অস্থিরতা
শরীরে প্রচণ্ড ব্যথাসহ জ্বর আর অস্থিরতা সেই সাথে রোগী নড়াচড়ায় আরামবোধ করে এরকম হলে তাদের জন্য রাস টক্স অত্যন্ত কার্যকর ওষুধ।
বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার ফলে জ্বর, এবং কাঁপুনিসহ জ্বর, শরীরে টানটান ব্যাথা সাথে জিভ শুকিয়ে যাওয়া, মানসিক ও শারীরিক দুর্বলতা বিদ্যমান থাকে। এইসব লক্ষণে রাসটক্স (Rhus Tox) উত্তম কাজ করে।
কখন এবং কিভাবে রাসটক্স গ্রহণ করবেন–
এটি নিম্ন (30C) এবং উচ্চ (200C এবং 1M) ক্ষমতা উভয় ক্ষেত্রেই ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। এটির 30C শক্তিতে দিনে ৩-৪ বার বারবার। 200C শক্তি দিনে ২ বার। রাসটক্স এর উচ্চ মাত্রা ব্যবহারের জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
বেলাডোনা (Belladonna)
জ্বরের সময় মাথা গরম হয়, কিন্তু পা ঠান্ডা থাকে কিন্তু রোগীর পিপাসা থাকে না। রোগীর ভিতরে ঠান্ডা অনুভূত হলেও বাইরে প্রচন্ড তাপ থাকে। গলায় ব্যথা, কালশিটে, লাল এবং স্ফীত সেসব ক্ষেত্রে বেলাডোনা প্রথম প্রয়োগে ভালো কাজ করে।
কখন এবং কিভাবে বেলাডোনা খাবেন-
উপরোক্ত লক্ষণগুলোতে বেলাডোনা 30 এবং বেলাডোনা 200 সাধরণত ব্যবহার করা যায়। 30C দিনে ২-৩ বার প্রয়োজনে পুনরাবৃত্তি করা যায়। তবে 200C পুনরাবৃত্তি না করায় ভালো। এটার উচ্চ ক্ষমতা 1M সাবধানে চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহার করা উচিত।
আর্সেনিক অ্যালবাম (Arsenic Album)- ক্লান্তি সহ জ্বর
ম্যালেরিয়া বা টাইফয়েডের কারণে জ্বরের জন্য আর্সেনিক অধিক ফলদায়ক।
রাতে শরীরে জ্বালাপোড়া, দুর্বলতা, অস্থিরতা, ক্লান্তি এবং উত্তেজনা থাকে। সামান্য নড়াচড়ায় রোগ বৃদ্ধি এবং তাপ প্রয়োগের পরে ভাল বোধ করে। জ্বরের শেষে ঠাণ্ডা ও ঝাঁঝালো ঘাম হয়। কখনও কখনও জ্বরের পাশাপাশি গ্যাস্ট্রিকেরও লক্ষণ থাকে যেমন পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব, পেটে ভারী অনূভব ইত্যাদি।
আর্সেনিক অ্যালবাম কখন এবং কীভাবে খাবেন-
ম্যালেরিয়া বা টাইফয়েডের কারণে জ্বরের জন্য আর্সেনিক প্রয়োগ করা যেতে পারে। প্রচণ্ড দুর্বলতা, অস্থিরতা ও ঠাণ্ডা এই ক্ষেত্রে 30C শক্তি দিনে ২ বার। নিম্ন শক্তিতে যদি কাজ না হয় তবে 200C বা 1M ক্ষমতা গ্রহণের আগে একজন ভালো হোমিওপ্যাথের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয়।