দেহের বিভিন্ন রোগ ব্যাধি

by Dr. Baby Akter
দেহের বিভিন্ন রোগ ব্যাধি

Table of Contents

রোগ বলতে বিস্তৃতভাবে এমন একটি অবস্থাকে বোঝায় যা শরীরের স্বাভাবিক কার্যকারিতাকে ব্যাহত করে। মানবদেহের যে কোন অস্বস্তিকর অবস্থা যেমন ব্যথা, কর্মহীনতা, যন্ত্রণা, অক্ষমতা, সিন্ড্রোম, সংক্রমণ, বিচ্ছিন্ন উপসর্গ, বিচ্যুতিপূর্ণ আচরণ বা কার্যকলাপকে রোগ সংজ্ঞায়িত করা হয়। সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, প্রোটোজোয়া, বহুকোষী জীব এবং প্রিয়ন নামে পরিচিত অ্যাবারেন্ট (Aberrant) প্রোটিন সহ প্যাথোজেনিক মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট (Microbial Agents) উপস্থিতির ফলে সৃষ্টি হয় সংক্রামক রোগ আর ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং জেনেটিক রোগ সমূহ সংক্রামকবিহীন রোগ হিসেবে পরিচিত।

মানব দেহের বিভিন্ন রোগের তালিকাঃ

  • অর্জিত রোগ (Acquired Disease)
  • তীব্র রোগ (Acute Illness)
  • দীর্ঘস্থায়ী রোগ (Chronic Disease)
  • জন্মগত ব্যাধি বা জন্মগত রোগ (Congenital Disorders or Congenital Diseases)
  • জেনেটিক রোগ (Genetic Disease)
  • বংশগত বা বংশগত রোগ (Hereditary or Hereditary Diseases)
  • আইট্রোজেনিক রোগ (Iatrogenic Disease)
  • ইডিওপ্যাথিক রোগ (Idiopathic Disease)
  • দুরারোগ্য ব্যাধি (Incurable Disease)
  • প্রান্তিক রোগ (Terminal Disease)
  • অ-সংক্রামক রোগ (Non-infectious Diseases)
  • অবক্ষয়জনিত রোগ (Degenerative Disease)
  • ইডিওপ্যাথিক রোগ (Idiopathic disease)
  • এলার্জি (Allergies)
  • অভাবজনিত রোগ (Deficiency Diseases)
  • গলগন্ড (Goitre)
  • রক্তের রোগ (Blood Diseases)
  • এইডস/এইচআইভি AIDS/HIV (Acquired Immune Deficiency Syndrome)
  • Parasites (পরজীবী) (Amebiasis – Entamoeba Histolytica Infection)
  • অ্যানথ্রাক্স (Anthrax)
  • এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু (Avian Influenza or Bird Flu)
  • বেবেসিওসিস (Babesiosis)
  • বোটুলিজম (Botulism)
  • ব্রুসেলোসিস (Brucellosis)
  • ক্যাম্পাইলোব্যাক্টেরিওসিস (Campylobacter Infection)
  • চিকেনপক্স (Chickenpox)
  • ক্ল্যামিডিয়া (Chlamydia Infections)
  • কলেরা (Cholera)
  • সিগুয়েটেরা (Ciguatera Fish Poisoning )
  • উপত্যকা জ্বর (Coccidioidomycosis / Valley Fever) 
  • করোনাভাইরাস রোগ (Coronavirus/2019 Novel Coronavirus/COVID-19)
  • ক্রিপ্টোস্পোরিডিয়াম (Cryptosporidium)
  • সিস্টিসারকোসিস (Cysticercosis)
  • ডেঙ্গু জ্বর (Dengue Fever)
  • ডিপথেরিয়া (Diphtheria Bacteria)
  • ডমোয়িক অ্যাসিড পয়জনিং (Domoic Acid Poisoning) 
  • ই. কোলাই সংক্রমণ (E. coli Infections)
  • ইবোলা ভাইরাস (Ebola Virus)
  • ইনফ্লুয়েঞ্জা (Flu Influenza)
  • গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস (Gastroenteritis )
  • রুবেলা (Rubella )
  • গিয়ার্ডিয়াসিস (Giardia)
  • গনোরিয়া (Gonorrhoeae)
  • হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা (Haemophilus Influenzae)
  • হান্টাভাইরাস (Hantaviruses)
  • হেপাটাইটিস এ (Hepatitis A)
  • হেপাটাইটিস বি (Hepatitis B)
  • হেপাটাইটিস সি (Hepatitis C)
  • লাসা জ্বর (Lassa Fever)
  • ভাইরাল হেমোরেজিক জ্বর (ভিএইচএফ) (Viral Hemorrhagic Fever-VHF)
  • ম্যালেরিয়া (Malaria)
  • মারবার্গ ভাইরাস (Marburg Virus Disease -MVD) 
  • মেলিওডোসিস রোগ বা হুইটমোরস ডিজিজ (Melioidosis Disease)
  • হাম (Measles)
  • মেনিনজাইটিস (Meningitis)
  • মেনিনোকোকাল ডিজিজ (Meningococcal Disease)
  • মাঙ্কিপক্স (Mpox)
  • গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস এবং নোরোভাইরাস (Gastroenteritis and Norovirus)
  • নন-গনোকোকাল ইউরেথ্রাইটিস (এনজিইউ) (Non-Gonococcal Urethritis -NGU)
  • প্লেগ (Plague )
  • হুপিং কাশি (Whooping Cough/Pertussis)
  • নিউমোকোকাল রোগ (Pneumococcal Disease)
  • মেনিনজাইটিস (Meningitis) 
  • সাইনাস প্রদাহ (Sinus Infection)
  • পোলিও / পোলিওমাইলাইটিস (Poliomyelitis/Polio)
  • জলাতঙ্ক রোগ (Rabies)
  • সিফিলিস (Syphilis)
  • ধনুষ্টঙ্কার (Tetanus)
  • যক্ষ্মা (টিবি) (Tuberculosis)

অর্জিত রোগ (Acquired Disease)

একটি অর্জিত রোগ হল এমন একটি অবস্থা যা একজনের জীবদ্দশায় কিছু সময়ে শুরু হয়েছিল, অথবা জন্মের সময় বা আগে থেকেই উপস্থিত থাকা যা জন্মগত রোগ বলা হয়ে থাকে। অর্জিত রোগ বা Acquired Disease কে শরীরের প্রাথমিক রোগও ধরা হয়।

স্বল্পমেয়াদী রোগ (Acute Illness)

এটি একটি স্বল্পমেয়াদী রোগ এবং তীব্র রোগ তবে কখনও কখনও একটি দীর্ঘমেয়াদিও হতে পারে। 

দীর্ঘস্থায়ী রোগ (Chronic Disease)

দীর্ঘস্থায়ী রোগ হল এমন একটি অবস্থা যা দীর্ঘ সময় ধরে থাকে, কমপক্ষে ছয় মাস স্থায়ী হয়। তবে অসুস্থতার ধরন এমন হয় যে, রোগীর  সারা জীবনও এরোগ স্থায়ী হতে পারে এবং এ ধরণের রোগ নিয়ে রোগী অনেকটা স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয় পড়ে।

জন্মগত ব্যাধি বা জন্মগত রোগ (Congenital Disorders or Congenital Diseases)

একটি জন্মগত ব্যাধি যা জন্মের সময় উপস্থিত হয়। এটি সাধারণত উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া একটি জেনেটিক রোগ। যেমন এইচআইভি / এইডসের মত রোগগুলো মায়ের কাছ থেকে সরাসরি সংক্রমণের ফলে হয়ে থাকে।

জেনেটিক রোগ (Genetic Disease)

একটি জেনেটিক রোগ এক বা একাধিক জেনেটিক মিউটেশনের(Genetic Mutations)কারণে হয়। এটি প্রায়শই উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়, তবে কিছু মিউটেশনগত জটিলতার কারণেও এ ধরনের রোগ হয়ে থাকে।

বংশগত রোগ (Hereditary or Hereditary Diseases)

বংশগত রোগ হল জেনেটিক মিউটেশনের (Genetic Mutation) কারণে সৃষ্ট এক ধরনের জেনেটিক রোগ যা বংশগত এবং পরিবার হতে পরিবারে চলতে থাকে। 

আইট্রোজেনিক রোগ (Iatrogenic Disease)

Iatrogenic রোগ এমন একটি অবস্থা যা চিকিৎসার ত্রুটি বা চিকিৎসার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এবং চিকিৎসা জটিলতার কারণে সৃষ্টি হয়। 

ইডিওপ্যাথিক রোগ (Idiopathic Disease)

দুরারোগ্য ব্যাধি (Incurable Disease)

যে সকল রোগ নিরাময় করা যায় না তাকে দুরারোগ্য ব্যাধি বলা হয়। কিছু দুরারোগ্য ব্যাধি নিরাময় করা না গেলেও কিছু কিছু অনিরাময়যোগ্য রোগ সবসময় ক্ষতিকর বা প্রাণঘাতী হয় না। এটি ধারাবাহিক চিকিৎসা ও জীবনযাপন পরিবর্তনের মাধ্যমে স্বাভাবিক থাকা যায়। 

প্রান্তিক রোগ (Terminal Disease)

একটি প্রান্তিক রোগ বা টার্মিনাল ডিজিজ শরীরের এমন একটি অবস্থা যার ফলাফল অনিবার্য মৃত্যুর সম্ভবনা বলে ধরে নেয়া হয়। যেমন, এইডসের শেষ পরিণতি অনিবার্য মৃত্যু ছিল। কিন্তু এটি এখন নিরাময়যোগ্য, তবে অনির্দিষ্টকালের জন্য সঠিক দিকনির্দেশনা ও মেডিসিন সেবন অব্যাহত রাখতে হবে ।

সংক্রামক রোগ (Infectious Diseases)

যে সকল রোগ এক ব্যক্তির দেহ থেকে অন্য ব্যক্তির দেহে ছড়ায় তাকে সংক্রামক রোগ বলে। এগুলি সাধারণত প্যাথোজেন (ছত্রাক, রিকেটসিয়া, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, প্রোটোজোয়ান এবং কৃমি) নামক অণুজীব দ্বারা সৃষ্ট হয়। যখন একজন সংক্রামিত ব্যক্তির শরীর থেকে তরল নিঃসরণ করে, তখন প্যাথোজেনগুলো হোস্ট থেকে বেরিয়ে নতুন ব্যক্তিকে সংক্রমিত করতে পারে (হাঁচি, কাশি ইত্যাদি)। যেমন- কলেরা, চিকেনপক্স, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি।

অ-সংক্রামক রোগ (Non-Infectious Diseases)

এই রোগ প্যাথোজেন দ্বারা সৃষ্ট হয়, তবে অন্যান্য কারণ যেমন বয়স, পুষ্টির অভাব, ব্যক্তির লিঙ্গ এবং জীবনধারাও রোগটিকে প্রভাবিত করে। যেমন-  উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সার। এ রোগ গুলো অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে না তবে কোন ব্যক্তির মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় থাকলে তার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যেমন- আলঝেইমার রোগ, হাঁপানি, ছানি এবং হৃদরোগ ইত্যাদি রোগ গুলো অ-সংক্রামক রোগ।

অবক্ষয়জনিত রোগ (Degenerative Disease)

এ রোগ মূলত সময়ের সাথে সাথে কোষের অবনতির কারণে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর ত্রুটির কারণে ঘটে। যেমন অস্টিওপোরোসিসের ক্ষেত্রে হাড়ের দুর্বলতার কারণে ক্রোন ডিজেনারেটিভ রোগের সৃষ্টি হয়। এতে হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

আবার কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের বা (Central Nervous System) কোষের অবক্ষয় ঘটার কারণে সৃষ্ট অবস্থাকে নিউরোডিজেনারেটিভ ডিসঅর্ডার (Neurodegenerative Disorder) বলা হয়। যেমন আলঝেইমার রোগ বিশেষ একটি উদাহরণ। সাধারণত বার্ধক্য এবং বডিওয়্যার দ্বারা ডিজেনারেটিভ রোগ সৃষ্ট হয়। তবে লাইফস্টাইল এবং কিছু ক্ষেত্রে বংশগত কারণেও হয় ।

এলার্জি (Allergies)

শরীর যখন অ্যালার্জেন নামক কিছু বাহ্যিক পদার্থের প্রতি অতিসংবেদনশীল (Hypersensitive) হয়ে ওঠে তখন অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দেয়। এটি সাধারণত ক্ষতিকারক পদার্থের প্রতি ইমিউন সিস্টেম এর অস্বাভাবিকভাবে প্রতিক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হয়। অ্যালার্জেনের মধ্যে রয়েছে ধুলো, পরাগ, পশুর খুশকি, মাইট, পালক, ল্যাটেক্স (Latex) এবং বাদাম এবং গ্লুটেনের (Gluten) মতো কিছু খাদ্য পণ্য। চিনাবাদাম এবং অন্যান্য বাদাম গুরুতর অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখে যা প্রাণঘাতী অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। যেমন শ্বাস নিতে অসুবিধা, টিস্যু ফুলে যাওয়া এবং শ্বাসনালী ব্লক করা এবং অ্যানাফিল্যাক্সিস শক ইত্যাদি।

সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে কাশি, হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া, চুলকানি এবং চোখ লাল হওয়া এবং ত্বকে ফুসকুড়ি। এই অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার ফলে ক্ষতিকর হাঁপানি রোগও সৃষ্টি হয়ে থাকে। কখনও কখনও, মৌমাছির হুল এবং পিঁপড়ার কামড়ও অ্যালার্জির উদ্রেক করে। শেলফিশ এবং কিছু কিছু ওষুধ সেবন অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

হাঁপানি (Asthma) একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যা প্রধানত ফুসফুসের ব্রঙ্কি এবং ব্রঙ্কিওলকে প্রভাবিত করে। বায়ুবাহিত অ্যালার্জেন যেমন পরাগ বা ধুলো এর জন্য বিশেষভাবে দায়ী। হাঁপানির যে লক্ষণগুলো দেখা যায় তা হলো- শ্বাস নিতে অসুবিধা বা শ্বাসকষ্ট এবং কাশি।

অভাবজনিত রোগ (Deficiency Diseases)

হরমোন, খনিজ, পুষ্টি এবং ভিটামিনের ঘাটতির কারণে (Deficiency Diseases) বা অভাবজনিত রোগ হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ইনসুলিন তৈরি বা ব্যবহারে অক্ষমতার কারণে ডায়াবেটিস (Diabetes) দেখা দেয়, গলগন্ড (Goitre) প্রধানত আয়োডিনের অভাবের কারণে হয় এবং খাদ্যে প্রোটিনের অভাবের কারণে কোয়াশিওরকর (Kwashiorkor) রোগ হয়। ভিটামিন B-1 এর অভাবে বেরিবেরি (Beriberi) রোগ হয়।

গলগন্ড (Goitre)

এটি থাইরয়েড গ্রন্থির একটি অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে খাদ্যনালী বা বুক ও ঘাড়ের অন্যান্য অঙ্গকে ব্লক করে দেয়। এর ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস ও খেতে অসুবিধা হয়।

রক্তের রোগ (Blood Diseases)

রক্তে প্লাজমা (Plasma) শ্বেত রক্তকণিকা (White Blood Cells), প্লেটলেট (Platelets) এবং লোহিত রক্তকণিকা (Red Blood Cells) থাকে। যখন এই উপাদান একটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তখন রক্তের ব্যাধি হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তি সিকেল সেল (Sickle Cell Disease) রোগে আক্রান্ত হলে লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস হয়ে যায়। লোহিত রক্তকণিকা গুলোর আকারে বিকৃত হয় ফলে অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলস্বরূপ, এই রোগটি দীর্ঘস্থায়ী অ্যানিমিয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন- শ্বাসকষ্ট এবং ক্লান্তি।

অন্যান্য রোগ যেমন ইওসিনোফিলিক ডিসঅর্ডার (Eosinophilic Disorders), লিউকেমিয়া (Leukaemia), মায়লোমা (Cancer of Plasma cells in bone marrow), সিকেল সেল অ্যানিমিয়া (Sickle Cell Anemia), অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া (Aplastic Anemia), হেমোক্রোমাটোসিস (Hemochromatosis) এবং ভন মিলার (Von Miller) এবং রক্ত জমাট বাঁধা (blood-clotting disorder) এই ধরণের রোগগুলো রক্তের রোগ (Blood Diseases) এর শ্রেণিবিন্যাসের আওতায় পড়ে।

সাধারণ লক্ষণ (General Symptoms):

ফ্যাকাশে ত্বক, লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া, জ্বর, রক্তপাত, ঘা, ত্বকে ফুসকুড়ি ইত্যাদি।

কিছু কিছু রোগ বা ডিজিজগুলো বিভিন্ন অণুজীব দ্বারা সৃষ্ট হয় এবং ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, ভাইরাস ইত্যাদি দ্বারা সৃষ্ট হয় আবার কিছু রোগ বহুকোষী জীব যেমন কৃমি দ্বারা সৃষ্ট হয়।

এইডস / এইচআইভি AIDS / HIV (Acquired Immune Deficiency Syndrome)

HIV (Human Immunodeficiency Virus) বা এইচআইভি এমন একটি ভাইরাস যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আক্রমণ করে। যদি এইচআইভির চিকিৎসা করা না হয়, তাহলে এটি এইডস বা AIDS (Acquired Immunodeficiency Syndrome) হতে পারে। একবার কোন ব্যক্তি এইচআইভিতে আক্রান্ত হলে, তা সারাজীবনের জন্য থাকে।

বর্তমানে এ রোগ নির্মূল করার কার্যকর কোন চিকিৎসার নেই বা চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া যায় না। তবে সঠিক মেডিক্যাল কেয়ার এর মাধ্যমে এইচআইভি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এইচআইভি (HIV) আক্রান্ত ব্যক্তিরা যদি সঠিক চিকিৎসা ব্যাবস্থাপনা পেয়ে থাকে তাহলে  দীর্ঘ  সুস্থ জীবনযাপন করতে পারে এবং সঙ্গীদেরও নিরাপদ রাখতে পারে।

অ্যামেবিয়াসিস (Amebiasis – Entamoeba Histolytica Infection)

অ্যামেবিয়াসিস পরজীবী (Entamoeba Histolytica) দ্বারা সৃষ্ট একটি রোগ। এটি যে কোন ব্যক্তির মধ্যে হতে পারে, যদিও গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে নিম্নমানের স্যানিটারি ব্যবহার করা লোকদের বেশি হয়ে থাকে। এই রোগ নির্ণয় করা কিছুটা কঠিন, কারণ অন্যান্য পরজীবীগুলিকেও মাইক্রোস্কোপের নিচে দেখতে প্রায় অনেকটা E. Histolytica এর মতো। এটি দ্বারা সংক্রমিত হলেও ব্যক্তি সবসময় অসুস্থ হয় না। তবে চিকিৎসক যদি সংক্রমন নিশ্চিত করেন তাহলে অবশ্য চিকিৎসার প্রয়োজন এবং এই রোগের মেডিসিন পাওয়া অনেকটা সহজ।

অ্যানথ্রাক্স (Anthrax)

অ্যানথ্রাক্স হল Gram-Positive, Rod-Shaped Bacteria দ্বারা সৃষ্ট একটি গুরুতর সংক্রামক রোগ যা ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস নামে পরিচিত। এটি প্রাকৃতিকভাবে মাটিতে ঘটে এবং সাধারণত বিশ্বজুড়ে গৃহপালিত এবং বন্য প্রাণীদের মধ্যে বেশি হয়ে থাকে। সংক্রামিত প্রাণী বা দূষিত পশু পণ্যের সংস্পর্শে এলে মানুষ অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হতে পারে। মানুষ এবং প্রাণী উভয়ের ক্ষেত্রে অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হলে মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে তুলতে পারে।

এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু (Avian Influenza or Bird Flu)

এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু (Avian Influenza or Bird Flu) বলতে এভিয়ান (পাখি) ইনফ্লুয়েঞ্জা (ফ্লু) টাইপ এর ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে সৃষ্ট রোগকে বোঝায়। এই ভাইরাসগুলি প্রাকৃতিকভাবে বিশ্বব্যাপী বন্য জলজ পাখিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং গৃহপালিত হাঁস-মুরগি এবং অন্যান্য পাখি ও প্রাণী প্রজাতিকে সংক্রমিত করতে পারে। বার্ড ফ্লু ভাইরাস সাধারণত মানুষকে সংক্রমিত করে না। 

বেবেসিওসিস (Babesiosis)

বেবেসিওসিস মাইক্রোস্কোপিক পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট হয় যা লোহিত রক্তকণিকাকে সংক্রামিত করে। এটি সাধারণত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ অঞ্চল উত্তর-পূর্ব এবং উচ্চ মধ্যপশ্চিমের কিছু অংশে ঘটে এবং উষ্ণ মাসগুলিতে এ রোগ সর্বোচ্চ হয়। যদিও বাবেসিয়ায় আক্রান্ত অনেকের উপসর্গ থাকে না, তবে যারা চিকিৎসকের সাহায্যে এ রোগ সস্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। ব্যাবেসিওসিস একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। 

বোটুলিজম (Botulism)

বোটুলিজম একটি বিরল রোগ যা শরীরের স্নায়ু আক্রমণ করে এমন একটি বিষ দ্বারা সৃষ্ট। এ রোগের লক্ষণগুলো সাধারণত পেশীগুলির দুর্বলতা দিয়ে শুরু হয় যা চোখ, মুখ এবং গলা নিয়ন্ত্রণ করে। এই দুর্বলতা ঘাড়, বাহু, ধড় এবং পায়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বোটুলিজম শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে জড়িত পেশীগুলিকেও দুর্বল করে দিতে পারে, যা শ্বাস নিতে অসুবিধা এবং এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

ব্রুসেলোসিস (Brucellosis)

ব্রুসেলোসিস ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রামক রোগ। সংক্রামিত প্রাণী বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা দূষিত পশু পণ্যের সংস্পর্শে থাকলে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। যেসব প্রাণী সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হয় তাদের মধ্যে রয়েছে ভেড়া, গবাদি পশু, ছাগল, শূকর এবং কুকুর।

ক্যাম্পাইলোব্যাক্টেরিওসিস (Campylobacter Infection)

ক্যাম্পাইলোব্যাক্টেরিওসিস একটি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রমণ যা অন্ত্রের ট্র্যাক্ট (Intestinal Tract) কে প্রভাবিত করে।  ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর ব্যাকটেরিয়া দ্বারা দূষিত খাবার বা পানীয় খেলে এটি হতে পারে। যে কেউ এক বা একাধিকবার ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর এর দ্বারা সংক্রমণ হতে পারে। সানফ্রান্সিসকোতে ডায়রিয়াজনিত রোগের অন্যতম কারণ হলো ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর ব্যাকটেরিয়া ।

চিকেনপক্স (Chickenpox)

চিকেনপক্স ভেরিসেলা-জোস্টার ভাইরাস (ভিজেডভি) (Varicella-Zoster Virus-VZV) দ্বারা সৃষ্ট একটি অত্যন্ত সংক্রামক রোগ। এটির  সাধারণ উপসর্গগুলির মধ্যে একটি চুলকানি, ফোস্কা-সদৃশ ফুসকুড়ি হতে পারে। ফুসকুড়ি প্রথমে বুকে, পিঠে এবং মুখে দেখা দেয় এবং তারপর সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

চিকেনপক্স গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে, বিশেষ করে গর্ভাবস্থায়, শিশু, বয়ঃসন্ধিকালে, প্রাপ্তবয়স্কদের এবং দুর্বল ইমিউন সিস্টেম (জীবাণু এবং অসুস্থতার সাথে লড়াই করার ক্ষমতা কম) যুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে।

ক্ল্যামাইডিয়া (Chlamydia Infections)

Chlamydia (cla-mid-ee-ah) হল ক্ল্যামাইডিয়া ট্র্যাকোমাটিস (Chlamydia Trachomatis) নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট একটি যৌন সংক্রমণ (STI)। ব্যাকটেরিয়াজনিত এসটিআই ক্ল্যামাইডিয়া মুখ, যোনি এবং পায়ূ বা যৌনতার মাধ্যমে এক ব্যক্তির থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। অনেক সময় প্রসবের সময় মা থেকে নবজাতকের কাছেও যেতে পারে। ক্ল্যামাইডিয়া সংক্রমণ অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে নিরাময়যোগ্য রোগ ।

কলেরা (Cholera)

কলেরা হল একটি তীব্র ডায়রিয়ার সংক্রমণ যা ভিব্রিও কলেরি ব্যাকটেরিয়া  (Vibrio Cholerae Bacteria) যুক্ত দূষিত খাবার বা পানি খাওয়ার কারণে ঘটে। ভি. কলেরিতে সংক্রামিত অধিকাংশ লোক অসুস্থ হন না আবার কিছু কিছু কলেরা-সংক্রামিত রোগীদের অল্প বা মাঝারি ডায়ারিয়ার উপসর্গ দেখা যায়। তবে মারাত্বক ক্ষেত্রে কলেরার কারণে ডায়ারিয়া হঠাৎ করে শুরু হয় এবং এর কারণে অতি দ্রুত শরীর থেকে তরল পদার্থ বেরিয়ে যায়। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। উপসর্গ গুলো সাধারনত সাদা রঙের পানির মত পাতলা পায়খানা হয় এবং বমিও হতে পারে। 

সিগুয়েটেরা (Ciguatera Fish Poisoning)

Gambierdiscus Toxicus নামক সামুদ্রিক অণুজীব দ্বারা উৎপাদিত টক্সিন ধারণ করা মাছ খাওয়ার ফলে মাছের বিষক্রিয়া থেকে  সিগুয়েটেরা হয়ে থাকে। এতে বমি বমি ভাব, বমি এবং স্নায়বিক উপসর্গ যেমন আঙ্গুল বা পায়ের আঙ্গুলে ঝাঁকুনি অনুভব হতে পারে।

উপত্যকা জ্বর (Coccidioidomycosis / Valley Fever) 

উপত্যকা জ্বর, যাকে Coccidioidomycosis ও বলা হয়, যা Coccidioides ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রমণ। ছত্রাকটি দক্ষিণ-পশ্চিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো এবং মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার কিছু অংশে মাটিতে পাওয়া গেছে বলে জানা যায়। সম্প্রতি দক্ষিণ-মধ্য ওয়াশিংটনেও ছত্রাকটি পাওয়া গেছে। বায়ু থেকে আণুবীক্ষণিক ছত্রাকের স্পোরগুলিতে শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে Valley Fever হতে পারে, যদিও বেশিরভাগ লোক খুব একটা অসুস্থ হয় না। সাধারণত, উপত্যকা জ্বরে অসুস্থ হলেও সপ্তাহ থেকে মাসের মধ্যে স্বাভাবিক ভাবে ভালো হয়ে যাবে, তবে কিছু কিছু আক্রান্ত ব্যাক্তির ক্ষেত্রে অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধের প্রয়োজন হয়।

করোনাভাইরাস রোগ (Coronavirus / 2019 Novel Coronavirus / COVID-19)

করোনাভাইরাস রোগ (COVID-19) হল SARS-CoV-2 ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রামক রোগ।

ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত বেশিরভাগ লোকেরা হালকা থেকে মাঝারি শ্বাসকষ্টের অসুস্থতা অনুভব করে এবং বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়াই সেরে উঠে। তবে কিছু কিছু আক্রান্ত ব্যক্তি গুরুতর অসুস্থ হয়ে সেক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে। 

বয়স্ক ব্যক্তি এবং যাদের কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, ডায়াবেটিস, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের রোগ বা ক্যান্সার আছে তাদের গুরুতর অসুস্থতা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যে কেউ COVID-19-এ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে এবং যে কোনও বয়সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে মারাও যেতে পারে। 

সাধারণত COVID-19 লক্ষণগুলো ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ২ থেকে ১৪ দিন পরে দেখা যায়। এর বিশেষ লক্ষণগুলো হলো- শুষ্ক কাশি, নিঃশ্বাসের দুর্বলতা, স্বাদ বা গন্ধ হারানো, চরম ক্লান্তি, পেট খারাপ, বমি ও ডায়রিয়া, মাথাব্যথা, শরীর বা পেশী ব্যথা, জ্বর বা ঠান্ডা লাগা, নাক দিয়ে পানি পড়া বা গলা ব্যথা ইত্যাদি।

সংক্রামিত ব্যক্তির কাশি, হাঁচি, কথা বলা, গান বা শ্বাস নেওয়ার সময় ছোট তরল কণা সংক্রামিত ব্যক্তির মুখ বা নাক থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই রোগে অসুস্থ বোধ করলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকা এবং বিচ্ছিন্ন থাকা উচিত। 

 COVID-19 ভ্যাকসিন সম্পর্কে আপ টু ডেট থাকলে গুরুতর অসুস্থতা ও মৃত্যু ঝুঁকি কমাতে পারে। তাছাড়া করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে  শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা ,  জনবহুল পরিবেশে মাস্ক পরা এবং সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত জরুরী।

ক্রিপ্টোস্পোরিডিয়াম (Cryptosporidium)

ক্রিপ্টোস্পোরিডিয়াম একটি মাইক্রোস্কোপিক পরজীবী যা ডায়রিয়াজনিত রোগ ক্রিপ্টোস্পোরিডিওসিস সৃষ্টি করে। এটি সাধারণত পরজীবী বা “ক্রিপ্টো” নামে পরিচিত। ক্রিপ্টোস্পোরিডিয়ামের অনেক প্রজাতি রয়েছে যা প্রাণীদের সংক্রামিত করে, যার মধ্যে কিছু মানুষকেও সংক্রামিত করে। পরজীবীটি বাইরের একটি শেল দ্বারা সুরক্ষিত থাকে যা এটিকে দীর্ঘ সময়ের জন্য শরীরের বাইরে বেঁচে থাকতে সহায়তা করে। এই পরজীবীটি বিভিন্ন উপায়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে তবে পানির মাধ্যমে সহজে পড়ে। 

সিস্টিসারকোসিস (Cysticercosis)

সিস্টিসারকোসিস হল ট্যাপওয়ার্ম টেনিয়া সোলিয়ামের লার্ভা সিস্ট দ্বারা সৃষ্ট একটি পরজীবী টিস্যু সংক্রমণ। এই লার্ভা সিস্টগুলি মস্তিষ্ক, পেশী বা অন্যান্য টিস্যুকে সংক্রামিত করে এবং বেশিরভাগ নিম্ন-আয়ের দেশগুলিতে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এটি আক্রমণের সম্ভবনা বেশি থাকে। শুয়োরের মাংসে যদি লার্ভা সিস্ট থাকে তবে কম রান্না করা শুকরের মাংস খাওয়ার ফলে অন্ত্রের টেপওয়ার্ম হতে পারে। টেপওয়ার্মে আক্রান্ত মানুষের মলে টেপওয়ার্মের ডিম খেয়ে শূকরও সংক্রমিত হয়।

ডেঙ্গু জ্বর (Dengue Fever)

সংক্রমিত এডিস প্রজাতির (Ae. aegypti বা Ae. albopictus) মশার কামড়ের মাধ্যমে ডেঙ্গু ভাইরাস মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক, প্রায় 4 বিলিয়ন মানুষ, ডেঙ্গুর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করে। অপরিছন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

ডেঙ্গু জ্বরের সাধারণ উপসর্গগুলো হল – জ্বর, চোখে ব্যথা, মাথাব্যথা, পেশী ব্যথা, ফুসকুড়ি, হাড়ের ব্যথা, বমি বমি ভাব/বমি, জয়েন্টে ব্যথা, ফুসকুড়ি, চোখের ব্যথা(সাধারণত চোখের পিছনে), পেশী, জয়েন্ট বা হাড়ের ব্যথা) ডেঙ্গুর লক্ষণ সাধারণত ২-৭ দিন স্থায়ী হয়। বেশিরভাগ আক্রান্ত ব্যক্তি প্রায় এক সপ্তাহ পরে সুস্থ হয়ে উঠে।

ডেঙ্গুর চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই, ডেঙ্গুর উপসর্গ অনুসারে চিকিৎসা করা হয়। এ রোগে আক্রান্ত  হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া  উচিত। ডেঙ্গু জ্বরে অধিক সচেতনতা প্রয়োজন। অনেক ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতলে ভর্তি করানো উচিত। অন্যথায় রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।

আরো পড়ুন: টাইফয়েড জ্বরের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা 

ডিপথেরিয়া (Diphtheria Bacteria)

ডিপথেরিয়া হল Corynebacterium Diphtheriae নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট একটি গুরুতর সংক্রমণ রোগ। এটি  প্রধানত গলায় এবং শ্বাসনালীতে আক্রান্ত করে। ফলে শ্বাস নিতে অসুবিধা, হার্টের সমস্যা সৃষ্টি করে এতে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সিডিসি ডিপথেরিয়া প্রতিরোধের জন্য শিশু, কিশোর এবং প্রাপ্তবয়স্কদেরকে টিকা দেওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।

Diphtheria Bacteria ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ে, সাধারণত শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে, যেমন কাশি বা হাঁচি থেকে। সংক্রমিত খোলা ঘা বা আলসার স্পর্শ করলে। সাধারণত একই পরিবারের লোকজন, রোগীর সেবায় নিয়োজিত বা কাছাকাছি থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে এ রোগ সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

ডমোয়িক অ্যাসিড পয়জনিং (Domoic Acid Poisoning) 

ডমোয়িক অ্যাসিড পয়জনিং হল অ্যামনেসিক শেলফিশ পয়জন (এএসপি) (Amnesic Shellfish Poisoning -ASP) নামক একটি সামুদ্রিক বায়োটক্সিন যা ডায়াটম সিউডো-নিটসচিয়া (Diatom Pseudo-nitzschia) এসপি দ্বারা উৎপাদিত এক ধরনের মাইক্রোস্কোপিক সামুদ্রিক শৈবাল। অ্যামনেসিক শেলফিস পয়জন দ্বারা দূষিত শেলফিশ খেলে মানুষ ডমোয়িক অ্যাসিড পয়জনিংয়ে আক্রান্ত হতে পারে।

ই. কোলাই সংক্রমণ (E. Coli Infections)

Escherichia Coli (সংক্ষেপে E. coli) হল এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া যা পরিবেশ, খাবার এবং মানুষ ও প্রাণীর অন্ত্রে পাওয়া যায়। ই. কোলাই একটি বৃহৎ এবং বৈচিত্র্যময় ব্যাকটেরিয়ার গ্রুপ। ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়া ডায়রিয়ার, মূত্রনালীর সংক্রমণ, শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা এবং নিউমোনিয়াসহ আরো বেশ কিছু অসুস্থতার সৃষ্টি করতে পারে।

দূষিত খাবার, দূষিত পানি, অপরিছন্ন খাদ্যাভাস, ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়া থাকা মাটিতে উৎপাদিত সবজি গ্রহণ, হাসপাতালের দূষিত আবর্জনার সংস্পর্শে থাকা ইত্যাদি কারণে ই. কোলাই সংক্রমণ ঘটে।

ইবোলা ভাইরাস (Ebola Virus)

ইবোলা রোগটি ভাইরাসের একটি গ্রুপের সংক্রমণের ফলে হয় যা ইবোলা ভাইরাস (Ebola Virus) নামে পরিচিত, এটি প্রথমে সাব-সাহারান আফ্রিকায় পাওয়া যায়। যদিও ইবোলা রোগ বিরল, মানুষ আক্রান্ত প্রাণী (বাদুড় বা প্রাইমেট বর্গের প্রাণী) অথবা ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত অসুস্থ বা মৃত ব্যক্তির সংস্পর্শের মাধ্যমে এই রোগটি হয়ে থাকে। তাছাড়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ হাঁচি, কাশি, ঘাম, লালা বা তাঁর সঙ্গে যৌন সংসর্গের মাধ্যমেও এই ইবোলা ভাইরাস এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

এই রোগের লক্ষণ ও উপসর্গগুলো হলো – জ্বর, গুরুতর মাথাব্যথা, পেশী এবং জয়েন্টে ব্যথা, দুর্বলতা ও ক্লান্তি, গলা ব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া এবং বমি সহ গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল লক্ষণ দেখা দেয়। তাছাড়া রক্তপাত বা ক্ষত সৃষ্টি এবং একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন- কিডনি, লিভারের মত দেহের প্রয়োজনীয় অঙ্গ বিকল হতে পারে। শেষে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।

ইনফ্লুয়েঞ্জা (Flu/Influenza)

ইনফ্লুয়েঞ্জা (ফ্লু) Flu (Influenza) ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি সাধারণ সংক্রামক রোগ। ফ্লু সাধারণত এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে  শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ছড়ায়। আক্ৰান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি ও নিঃশ্বাসের মাধ্যমেও এ রোগ ছড়ায় এবং মৌসুমী ফ্লু সাধারণত শরৎকালে এবং শীতকালে এর সংক্রমণ বেশি ঘটে। 

ইনফ্লুয়েঞ্জার চার ধরনের টাইপ রয়েছে। তার মধ্যে টাইপ এ , টাইপ বি, টাইপ সি ইনফ্লুয়েঞ্জায় বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়। তবে টাইপ ডি ইনফ্লুয়েঞ্জা এর মাধ্যমে আক্রান্ত হওয়ার প্রমান মিলে নি। 

ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হলে রোগীর জ্বর, সর্দি-কাশি, গলাব্যথা, মাথাব্যথা, ডায়রিয়া, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, বমি-ভাব হওয়া ও বমি হওয়ার উপসর্গ গুলো দেখা যায়। এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে রোগীকে বিশ্রামে থাকতে হয়। 

গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস (Gastroenteritis)

গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস হল পাকস্থলী এবং ছোট ও বড় অন্ত্রের প্রদাহ। ভাইরাল গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস হল বিভিন্ন ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রমণ যার ফলে বমি বা ডায়রিয়া হয়। এটিকে প্রায়ই “Stomach Flu” বলা হয়, যদিও এটি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট নয়। রোটাভাইরাস, নোরোভাইরাস, অ্যাডেনোভাইরাস, স্যাপোভাইরাস এবং অ্যাস্ট্রোভাইরাস সহ অনেকগুলি বিভিন্ন ভাইরাস গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস সৃষ্টি করতে পারে।

ভাইরাল গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিসের প্রধান উপসর্গগুলি হল পাতলা পানির মত ডায়রিয়া এবং বমি। আক্রান্ত ব্যক্তির মাথাব্যথা, জ্বর এবং পেটে ব্যথা (“পেট ব্যথা”) হতে পারে। সাধারণভাবে, গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস সৃষ্টিকারী ভাইরাসের সংক্রমণে থেকে ২ দিন পরে লক্ষণগুলি শুরু হয় এবং ১ থেকে ১০ দিন স্থায়ী হতে পারে।

গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিসের আলাদা করে কোন নিরাময় ব্যবস্থা বা ঔষধ নেয়। চিকিৎসকরা বিভিন্ন লক্ষণের ভিত্তিতে চিকিৎসা করে থাকেন। তবে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল তরল খাবার ও পানীয় খাওয়া। এতে শরীরকে ডিহাইড্রেশন এর মারাত্বক ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শে নেয়া উচিত । 

রুবেলা (Rubella)

রুবেলা / Rubella একটি ভাইরাসঘটিত তীব্র ছোঁয়াচে রোগ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Measles Morbillivirus। ভাইরাসটি শুরুর দিকে শ্বাসনালিকে সংক্রমন করে তারপর রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে এই রোগ হাম (Measles) নামেও পরিচিত। 

রুবেলার লক্ষণ প্রকাশের আগে বেশ কিছুদিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকে। 

এরোগে শুরুর দিকে জ্বর হয় এবং শরীর ম্যাজ ম্যাজ করে বা হালকা ব্যথা লাগে। প্রথম দু-এক দিন অনেক তীব্র জ্বরও হতে, চোখ ও নাক দিয়ে পানি পড়ে, চোখ-মুখ ফুলে যেতে পারে, শরীরে ছোট ছোট লালচে গুটি/ফুসকুড়ি দেখা দেয় এবং দ্রুতই তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

রুবেলা হলে রোগীকে পুরোপুরি বিশ্রামে থাকতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তিন দিনের চিকিৎসায় এ রোগের জ্বর নিরাময় এবং সাত দিনের মধ্যেই আক্রান্ত রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠে। 

রুবেলা প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ এবং এর বিরুদ্ধে কার্যকরী টিকা রয়েছে।

গিয়ার্ডিয়াসিস বা Giardia

Giardia বা গিয়ার্ডিয়াসিস হল একটি ক্ষুদ্র পরজীবী (জীবাণু) যা মাটি, খাদ্য, পানির মাধ্যমে মানুষ বা প্রাণীর দেহে সংক্রামিত হয়ে ডায়রিয়াজনিত রোগ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে, দূষিত পানি পান করার মাধ্যমে দেহে সহজে Giardia ছড়িয়ে পড়তে পারে।

এ রোগ জীবাণু সংক্রমণের থেকে  সপ্তাহ পরে শুরু হয়। যে লক্ষণগুলো দেখা দেয় তার মধ্যে- বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা, পেট ফাঁপা, গ্যাস, এবং প্রচুর পরিমাণে পানিযুক্ত, দুর্গন্ধযুক্ত, চর্বিযুক্ত মল বের হওয়া, ডিহাইড্রেশন (তরল হ্রাস) হয়ে থাকে।

সাধারণত লক্ষণ ভেদে এই রোগের চিকিৎসা করা হয় তবে Giardia রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ বেশি জরুরী।

গনোরিয়া (Gonorrhoeae)

গনোরিয়া হল Neisseria Gonorrhoeae নামক ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট একটি যৌন সংক্রমিত সংক্রমণ রোগ। এটি যৌন মিলনের ফলে যোনি, মূত্রনালী, মলদ্বার এবং ওরাল সেক্সের কারণে গলায় সংক্রমিত হয়ে থাকে। যদি গর্ববতী মহিলা গনোরিয়ায় আক্রান্ত থাকে তাহলে তার নবজাতকেরও এই রোগ সংক্রমণ হয়। গনোরিয়াল ইনফেকশন অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে গনোরিয়া রোগ সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য।

সাধারণত পুরুষদের লিঙ্গে গনোরিয়ায় সংক্রামিত হওয়ার ২-৫ দিনের মধ্যে লক্ষণগুলো দেখা দেয়। বেশির ভাগ নারীদের ক্ষেত্রে তেমন কোন লক্ষণ দেখা যায় না যদি দেখা দেয় তা ১-১০ দিনের মধ্যে দৃশ্যমান হয়।  

দেহের কোন অংশে এরোগ আক্রান্ত হয়েছে তার উপর লক্ষণগুলো নির্ভর করে যেমন-লিঙ্গের মাথা থেকে স্রাব, মাঝে মাঝে লিঙ্গ বা অন্ডকোষ ফুলে যাওয়া, প্রস্রাবের সাথে ব্যথা অথবা জ্বালা, মাঝে মাঝে স্রাব দেখা দিতে পারে আবার  চিকিৎসা ছাড়াই চলে যেতে পারে, যদি গলায় আক্রান্ত হয় গলায় ব্যথা, চুলকানি হতে পারে।

মহিলাদের লক্ষণগুলোর মধ্যে-তলপেটে ব্যথা, যোনি স্রাব, অস্বাভাবিক যোনি বা পায়ূ রক্তপাত, পেলভিক ক্র্যাম্পিং, বিশেষ করে লিঙ্গের সাথে এ ধরণের লক্ষণগুলো দেখা দেয়। 

সাধারণত দুইভাবে এন্টিবায়োটিক দিয়ে গনোরিয়া রোগের চিকিৎসা করা হয়। একটি ইনজেকশনের মাধ্যমে অন্যটি খাওয়ার ওষুধ এর মাধ্যমে। এন্টিবায়োটিক শুরু করার পর থেকে সপ্তাহখানেক শারীরিক মিলন বন্ধ রাখতে হবে। সেই সাথে সঙ্গীকেও চিকিৎসা নিতে হবে। না হলে রোগটি আবারো ফিরে আসতে পারে। 

তবে হোমিওপ্যাথিতেও এ রোগের ভাল চিকিৎসা আছে এবং এটা করা হয় মায়জমভিত্তিক (রোগীর জীবন বৃত্তান্ত কেস স্টাডি নিয়ে ) লক্ষণ অনুসারে এই পদ্ধতিতেও উত্তম ফলাফল পাওয়া যায়। 

হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা (Haemophilus Influenzae)

হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ যা H. Influenzae / এইচ ইনফ্লুয়েঞ্জা নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয়।Haemophilus Influenzae এমন এক ধরণের ব্যাকটেরি যা দেহে বিভিন্ন ধরণের সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এই সংক্রমণগুলি কানে হালকা থেকে শুরু করে রক্তের সংক্রমণের মতো গুরুতর হতে পারে ।

চিকিৎসকেরা কিছু  কিছু এইচ. ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণকে “আক্রমনাত্মক” বলে মনে করেন। আক্রমণাত্মক ব্যাকটেরিয়া গুলো শরীরের এমন অংশগুলিতে আক্রমণ করে যা সাধারণত জীবাণু থেকে মুক্ত থাকে।

উদাহরণস্বরূপ, এইচ. ইনফ্লুয়েঞ্জা মেরুদণ্ড এবং মস্তিষ্কের চারপাশে তরল অবস্থাকে আক্রমণ করে, যা মেনিনজাইটিস বা রক্ত ​​প্রবাহ ঘটায় ও ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি করে। এই ধরণের আক্রমণাত্মক রোগ সাধারণত গুরুতর হয়ে থাকে যা হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন হয় অনেকক্ষেত্রে মৃত্যুও হতে পারে। 

এইচ ইনফ্লুয়েঞ্জা দ্বারা সৃষ্ট আক্রমণাত্মক রোগগুলোর হল  :

নিউমোনিয়া / Pneumonia (ফুসফুসের সংক্রমণ)

রক্ত প্রবাহের সংক্রমণ / Bloodstream Infection

মেনিনজাইটিস / Meningitis (মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের আস্তরণের ফুলে যাওয়া)

এপিগ্লোটিটিস / Epiglotittis (গলায় ফোলা)

সেলুলাইটিস / Cellulitis (ত্বকের সংক্রমণ)

সংক্রামক আর্থ্রাইটিস / Infectious Arthritis (জয়েন্টের প্রদাহ) 

হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের লক্ষণ গুলো ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে যেমন-

নিউমোনিয়ার সাধারণত যে লক্ষণগুলি দেখা যায়: জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, ঘাম, বুক ব্যাথা, মাথাব্যথা, পেশী ব্যথা, অতিরিক্ত ক্লান্তি।

রক্ত ​​প্রবাহের সংক্রমণের ক্ষেত্রে সাধারণত যে লক্ষণগুলি দেখা দেয়: জ্বর, সর্দি, অতিরিক্ত ক্লান্তি, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব বা বমি, ডায়রিয়া, দুশ্চিন্তা, শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, পরিবর্তিত মানসিক অবস্থা (বিভ্রান্তি)।

মেনিনজাইটিসের ক্ষেত্রে সাধারণত যে লক্ষণগুলি হঠাৎ করে শুরু হয়: জ্বর, মাথাব্যথা, শক্ত ঘাড়, বমি বমি ভাব বা বমি, ফটোফোবিয়া (চোখ আলোর প্রতি বেশি সংবেদনশীল) .

হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ (HFMD)

হাত, পা এবং মুখের রোগ (Hand, Foot and Mouth Disease-HFMD) সাধারনত ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা দেয়। তবে যে কোন বয়সে দেখা দিতে পারে। Coxsackie Virus নামক এক ধরণের ভাইরাস এই রোগের জন্য দায়ী। 

এরোগের অসুস্থতা খুব একটা গুরুতর নয়, তবে এটি খুব সংক্রামক। সহজে এক জনের কাছ থেকে অন্য জনের কাছে সংক্রমিত হয়। বিশেষ করে স্কুল এবং ডে-কেয়ার সেন্টারে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।

রোগীর হাঁচি, কাশি, ফোস্কা থেকে নিঃসরণ হওয়া রস এবং ব্যবহৃত পোশাক ও মল থেকে এ রোগ ছড়ায়। ছোট ছোট ফুসকুড়ি, মুখের মধ্যে ক্ষত, মুখ দিয়ে লালা বের হওয়া, খাবারে অরুচি ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।

এরোগের নির্দিষ্ট কোন ঔষধ নেই। লক্ষণের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা করা হয়। আক্রান্ত রোগীকে ভালো পরিচর্যা এবং পর্যাপ্ত পানীয়, ফলের জুস, নরম ও কম মসলা যুক্ত খাবার দিতে হবে। সাধারণত ভাইরাসজনিত এই রোগটি ৭-১০ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। 

হান্টাভাইরাস (Hantavirus)

হান্টাভাইরাস মূলত ইঁদুর দ্বারা ছড়ায় এবং বিশ্বব্যাপী মানুষের মধ্যে বিভিন্ন রোগের সিনড্রোম সৃষ্টি করতে পারে। যে কোনো হান্টাভাইরাসের সংক্রমণ মানুষের মধ্যে হান্টাভাইরাস রোগ তৈরি করতে পারে। তবে হান্টাভাইরাস পালমোনারি সিনড্রোম (এইচপিএস) শ্বাসযন্ত্রকে মারাত্বক ভাবে আক্রান্ত করে রেনাল সিন্ড্রোম (HFRS) সহ হেমোরেজিক জ্বর হতে পারে। যে কেউ হান্টাভাইরাস বহনকারী ইঁদুরের সংস্পর্শে আসলে সে HPS এর ঝুঁকিতে থাকে। বাড়িতে এবং আশেপাশে ইঁদুরের উপদ্রব থেকে হান্টাভাইরাস এর ঝুঁকি বেড়ে যায়। এমনকি সুস্থ ব্যক্তিরাও এই ভাইরাসের সংস্পর্শে এলে HPS সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। এই ভাইরাসের আক্রমন বেশিরভাগ ইউরোপ এবং এশিয়ায় হতে দেখা যায়। 

হেপাটাইটিস এ (Hepatitis A)

হেপাটাইটিস এ হেপাটাইটিস এ ভাইরাস (HAV) দ্বারা সৃষ্ট লিভারের সংক্রমণ রোগ। হেপাটাইটিস এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি সংস্পর্শে থাকলে অথবা দূষিত খাবার ও পানি খাওয়ার মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। তবে এই রোগ ভ্যাকসিন গ্রহণের মাধ্যমে নির্মূল করা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৯৫ সালে হেপাটাইটিস A ভ্যাকসিন প্রথম সহজলভ্য হওয়ার পর থেকে এর সংক্রমণ ৯০% হ্রাস পেয়েছে। হেপাটাইটিস এ এখনও ল্যাটিন আমেরিকা, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপে সাধারণ বিষয়। HAV ভাইরাসের সংস্পর্শে আসলে যে কেউ হেপাটাইটিস এ আক্রান্ত হতে পারে। 

জ্বর, ক্ষুধামান্দ্য, ক্লান্তি এবং দুর্বলতা, পেটে ব্যথা, বিশেষ করে উপরের ডানদিকে যেখানে লিভার অবস্থিত ব্যথা বেশি অনুভূত হয়। এছাড়াও বমি বমি ভাব, জন্ডিস- ত্বক এবং চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ হেপাটাইটিস এ আক্রান্ত রোগীর মধ্যে দেখা যায়। 

হেপাটাইটিস বি (Hepatitis B)

হেপাটাইটিস B হেপাটাইটিস B ভাইরাস ((HBV)) দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রামক লিভার ডিজিজ। হেপাটাইটিস বি রোগের ধরণ একেক জনের কাছে একেক রকম হয়ে থাকে।

রোগের প্রথম পর্যায়ে, যে কোন ব্যক্তি সংক্রামিত হওয়ার পর প্রথম ৬ মাসে অনেক লোকের কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। যাদের উপসর্গ রয়েছে তাদের মধ্যে, অসুস্থতা সাধারণত হালকা হয় এবং বেশিরভাগ লোকেরা বুঝতে পারে না যে তাদের লিভারের রোগ হয়েছে ।

প্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে হেপাটাইটিস-B তে সংক্রামিত হওয়া ৯০% ব্যক্তির মধ্যে ইমিউন সিস্টেম সফলভাবে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ফলে ৬ মাসের মধ্যে শরীর থেকে ভাইরাসটি নির্মূল হয়ে যায়, লিভার সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায় এবং ব্যক্তি হেপাটাইটিস বি থেকে মুক্ত হয়ে ওঠে। 

অন্য ১০% এর মধ্যে, ইমিউন সিস্টেম এর দুর্বলতার কারণে ভাইরাসটি নির্মূল করতে পারে না এতে হেপাটাইটিস-B সংক্রমণ ৬ মাস ধরে রক্তে অবস্থান করে এতে অনেকটা সারা জীবনের জন্য রোগীর দেহে বিস্তার লাভ করে। হেপাটাইটিস B এর ক্রমাগত দীর্ঘস্থায়ী এই অবস্থায় ক্রনিক হেপাটাইটিস বি সংক্রমণ নামে পরিচিত।

যদি শিশুরা জন্মের সময় বা শৈশবকালে হেপাটাইটিস বি সংক্রামিত হয়, তবে তাদের ইমিউন সিস্টেম মাত্র ১০%  সংক্রমণ নির্মূল করে। বাকি ৯০% দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস B সংক্রমণ ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করে।

দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস B সংক্রমণের ফলে, লিভার কয়েক বছর ধরে স্ফীত এবং দাগ হয়ে যায়। যে হারে প্রদাহ এবং দাগ হয় তা ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে বাড়তে থাকে। দেখা যায় কেউ কেউ ২০ বছরের মধ্যে গুরুতর লিভারের সিরোসিসে আক্রান্ত হয় অনেক ক্ষেত্রে তা লিভার ক্যান্সারের পরিণত হয়। হেপাটাইটিস B সংক্রমণ হেপাটোসেলুলার কারসিনোমা (Hepatocellular Carcinoma) বা লিভার ক্যান্সারের একটি অন্যতম কারণ।

এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার পর, অসুস্থতা শুরু না হওয়া পর্যন্ত থেকে ৬ মাস (গড় ৪ মাস) স্থায়ী হয়। সংক্রমণের পর প্রথম ৬ মাস পর্যন্ত বেশিরভাগ ব্যক্তির কোন উপসর্গ থাকে না বা হালকা অসুস্থতা অনুভব করতে পারে। সাধারনত যে লক্ষণগুলো দেখা যায় তা হল-জন্ডিস (ত্বক এবং চোখের হলুদ হওয়া) গাঢ় রঙের প্রস্রাব, হালকা রঙের মল, ক্লান্তি, পেটে ব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, জ্বর হওয়া ইত্যাদি। 

সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী বা ক্রনিক হেপাটাইটিস-B সংক্রমণের ৬ মাস পর ১০-২০ বছরে কোনও লক্ষণ ছাড়াই নীরবে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এক সময় গুরুতর লিভারের সিরোসিস এর মত অবস্থার সৃষ্টি করে সে ক্ষেত্রে এর লক্ষণগুলির দেখা যায় –

  • অ্যাসাইটস বা তরল জমা হওয়া এবং পেটের গহ্বর ফুলে যাওয়া। 
  • (Star-Shaped Vein Pattern Developing) শিরার প্যাটার্ন ফোলা পেটে বড় হয়ে যাওয়া। 
  • চুলকানি। 
  • ক্ষত এবং রক্তপাত হতে পারে। 
  • দীর্ঘস্থায়ী এইচবিভি (HBV) সংক্রমণ গুরুতর লিভার রোগ, লিভারের সিরোসিস, এবং হেপাটোসেলুলার বা লিভার ক্যান্সারও হতে পারে।

যাদের সংক্রমণের ঝুঁকি আছে –

  • যেসব স্থানে হেপাটাইটিস বি সংক্রমণ সাধারণত (বিশেষ করে চীন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ, সাব-সাহারান আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন অববাহিকা) সেখানে জন্মগ্রহণকারী শিশুরা ।
  • ইনজেকশন ড্রাগ ব্যবহারকারীদের।
  • হেমোডায়ালাইসিস রোগী।
  • স্বাস্থ্যসেবা এবং জননিরাপত্তা কর্মীরা যাদের রক্তের হেপাটাইটিস বি সংক্রমণ রয়েছে তাদের থেকে কেউ রক্ত গ্রহণ করলে।  
  • HBV-সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে যৌন মিলন বা সহবাস করা।  
  • গ্রহণ  সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে একই পরিবারে বসবাসকারী। 
  • হেপাটাইটিস বি সংক্রমণ রয়েছে এমন জায়গায় ভ্রমন করা এবং সেখানকার লোকজনের সাথে ঘনিষ্ট ভাবে মেলামেশা করা।

হেপাটাইটিস- বি এর লক্ষণগুলো সাধারণত প্রকাশিত হয় না তাই HBV- সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ন ব্যক্তিদের পরীক্ষা করা উচিত। আপনি যদি মনে করেন যে আপনার হেপাটাইটিস বি আছে, বা হেপাটাইটিস বি এর ঝুঁকিতে আছেন, তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।

হেপাটাইটিস সি (Hepatitis C)

হেপাটাইটিস সি হেপাটাইটিস C ভাইরাস (HCV) দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রামক লিভার ডিজিজ। হেপাটাইটিস সি ভাইরাসটি ১৯৯৮ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল। এর আগে, এটি রক্ত ​​সঞ্চালনের সাথে মিশ্রিত ছিল, তবে ভাইরাসটি সনাক্ত করা যায়নি বলে তাকে নন-এ, নন-বি হেপাটাইটিস বলা হয়। হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের বেশ কয়েকটি জেনেটিক প্রকার (জিনোটাইপ) রয়েছে। 

রোগের প্রথম পর্যায়কে তীব্র হেপাটাইটিস সি বলা হয় এবং এটি একজন ব্যক্তির সংক্রমিত হওয়ার প্রথম ৬ মাস জুড়ে থাকে। এই পর্যায়ে, বেশিরভাগ লোকের শরীরে কোনও লক্ষণ দেখায় না। যাদের উপসর্গ রয়েছে তাদের মধ্যে, অসুস্থতা সাধারণত এতটাই হালকা যে বেশিরভাগই তাদের লিভারের  রোগ আছে তা বোঝতে পারে না। 

সাধারনত আক্রান্ত রোগীর যে লক্ষণগুলো দেখা যায় তা হল-

  • জন্ডিস (ত্বক এবং চোখের হলুদ হওয়া)
  • গাঢ় রঙের প্রস্রাব, হালকা রঙের মল
  • ক্লান্তি
  • পেটে ব্যথা
  • ক্ষুধামান্দ্য
  • বমি বমি ভাব
  • ডায়রিয়া
  • জ্বর
  • অ্যাসাইটস (তরল জমা হওয়া এবং পেটের গহ্বর ফুলে যাওয়া)
  • শিরার প্যাটার্ন ফোলা পেটে বড় হয়ে যাওয়া। 
  • চুলকানি
  • ক্ষত এবং রক্তপাত

তীব্র হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত ১৫-৪০% ব্যক্তির মধ্যে, ইমিউন সিস্টেম সফলভাবে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে, ৬ মাসের মধ্যে শরীর থেকে ভাইরাসটি নির্মূল হয়ে যায় এবং লিভারকে সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করে। অন্য ৬০-৭৫% ব্যক্তির মধ্যে, ইমিউন সিস্টেম ভাইরাসটি সফলভাবে নির্মূল করতে পারে না এবং হেপাটাইটিস সি সংক্রমণ ৬ মাস ধরে অবস্থানের পর সাধারণত ব্যক্তির বাকি জীবন পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এই ক্রমাগত অবস্থা ক্রনিক হেপাটাইটিস সি বলা হয়ে থাকে।

দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস সি-তে, ধীরে ধীরে লিভার সিরোসিস ও ক্যান্সারে পরিণত  হয় ।

হেপাটাইটিস সি নির্মূল করার জন্য এর কার্যকর কোনো ভ্যাকসিন বা টিকা নেই। তবে হেপাটাইটিস সি চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব। এই রোগের ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল সেবনের মাধ্যমে প্রায় ৯৫% রোগী নিরাময় করা সম্ভব হয়ে থাকে। 

লাসা জ্বর (Lassa Fever)

লাসা জ্বর হল একটি পশু-বাহিত রোগ বা জুনোটিক বলা হয়ে থাকে। এটি সাধারণত আফ্রিকান ইঁদুর দ্বারা ছড়ানো তীব্র ভাইরাল অসুস্থতা। সিয়েরা লিওন, লাইবেরিয়া, গিনি এবং নাইজেরিয়া সহ পশ্চিম আফ্রিকার কিছু অংশে এই রোগের প্রার্দুভাব বেশী। তবে প্রতিবেশী দেশগুলিও বেশ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের মতে, ১৯৬৯ সালে নাইজেরিয়ার লাসা শহরে সর্বপ্রথম এই রোগের প্রার্দুভাব দেখা দিয়েছিল। তাই  নাইজেরিয়ার লাসা শহরের নামানুসারে এই রোগের নামকরণ করা হয় লাসা জ্বর। এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের যে লক্ষণগুলো দেখা যায় তা হল- দুর্বলতা, জ্বর, মাথাব্যথা, পেশীর ব্যথা এবং বমিভাব ইত্যাদি।

Ribavirin নামক একটি অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ দ্বারা লাসা জ্বরের রোগীদের সাফল্যের সাথে চিকিৎসা হয়ে আসছে। অসুস্থতার প্রথম দিকে এটি দেওয়া হলে সবচেয়ে কার্যকর ফলাফল পাওয়া যায়। পর্যাপ্ত তরল এবং ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য, অক্সিজেনেশন এবং রক্তচাপ সঠিক রাখা ও অন্যান্য জটিল সংক্রমণের চিকিৎসা সহ লাসা জ্বরের রোগীদের নিবিড় যত্ন নেওয়া উচিত।

ভাইরাল হেমোরেজিক জ্বর (ভিএইচএফ) (Viral Hemorrhagic Fever-VHF)

ভাইরাল হেমোরেজিক জ্বর (ভিএইচএফ) হল রোগের একটি গ্রুপ যা ভাইরাসের বিভিন্ন স্বতন্ত্র পরিবার দ্বারা সৃষ্ট হয়। “ভাইরাল হেমোরেজিক ফিভার” শব্দটি এমন একটি অবস্থাকে বোঝায় যা শরীরের অনেক অঙ্গ সিস্টেমকে প্রভাবিত করে, সামগ্রিক কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং শরীরের নিজের কাজ করার ক্ষমতা হ্রাস করে। ফলে রক্তপাত বা রক্তক্ষরণ এর মত লক্ষণ দেখা দেয়। কিছু ভিএইচএফ এর অসুস্থতার তুলনামূলকভাবে হালকা হয়, তবে এটি অনেক ক্ষেত্রে মারাত্বক আকার ধারণ করে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। বেশিরভাগ VHF-এর কোনো নিদির্ষ্ট প্রতিকার বা ভ্যাকসিন নেই।

যদিও ভিএইচএফগুলি ভাইরাসের বেশ কয়েকটি পরিবারের দ্বারা সৃষ্ট হয়, এই ভাইরাসগুলির কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে:

তা হল আরএনএ ভাইরাস, অর্থাৎ ভাইরাসের জিনগত উপাদান হিসাবে রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (আরএনএ) রয়েছে। এই ভাইরাসগুলি মানুষের মধ্যে রোগ সৃষ্টির জন্য সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে কারণ RNA ভাইরাসগুলো সময়ের সাথে সাথে দ্রুত পরিবর্তিত হয়।

এই ভাইরাসগুলো প্রাণী বা পোকামাকড়ের মধ্যে বিদ্যমান এদেরকে হোস্ট প্রজাতি বলে আখ্যায়িত করা হয়। সাধারণত এই হোস্ট প্রজাতি বসবাসরত নির্দিষ্ট ভৌগলিক এলাকায় ভিএইচএফ বা এই ভাইরাসগুলো সীমাবদ্ধ থাকে।

যখন একজন ব্যক্তি সংক্রামিত প্রাণী বা পোকামাকড়ের সংস্পর্শে আসে তখন তা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার পর কিছু VHF ভাইরাস ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ে। VHF এর বিক্ষিপ্ত সংক্রমণও সহজেই অনুমানযোগ্য নয় বলে মানুষের মধ্যে VHF এর প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধ করা কঠিন।

আরো পড়ুন: জ্বরের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি

ম্যালেরিয়া (Malaria)

ম্যালেরিয়া ‘প্লাজমোডিয়াম’ নামের প্যারাসাইট (Plasmodium Parasite) বা পরজীবী জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট একটি মশাবাহিত রোগ। সংক্রমিত বাহক স্ত্রী অ্যানোফেলিস মশার কামড় থেকে এই প্রাণঘাতী রোগটি হয়ে থাকে। তবে সব অ্যানোফিলিস মশা থেকে ম্যালেরিয়া হয় না, শুধু সংক্রমিত বাহক স্ত্রী অ্যানোফেলিস মশা কোনো ব্যক্তিকে কামড় দিলে তা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে যকৃতে/লিভারে অবস্থান করে করে বেশ পরিপক্ক হয়। এই পরিপক্ক পরজীবী রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে এবং লাল রক্তকণিকাকে সংক্রমিত করতে শুরু করে। ফলে দুই থেকে তিন দিন মধ্যে ম্যালেরিয়ার লক্ষণগুলো দেখা দিতে শুরু করে। লক্ষণগুলো হল :

  • কাঁপানো ঠান্ডা যা মাঝারি থেকে গুরুতর পর্যন্ত হতে পারে
  • মাত্রাতিরিক্ত জ্বর
  • অপরিমিত ঘাম
  • মাথাব্যথা
  • বমি বমি ভাব
  • বমি
  • পেটে ব্যথা
  • ডায়রিয়া
  • রক্তাল্পতা
  • পেশী ব্যথা
  • খিঁচুনি
  • কোমা
  • রক্তাক্ত মল

অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাঁচ প্রজাতির প্লাজমোডিয়াম মানুষের মধ্যে ম্যালেরিয়া সৃষ্টি করে থাকে। সাধারণত গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় জলবায়ুতে এই রোগের প্রার্দুভাব বেশী হয়ে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বিশ্বস্ত সূত্র জানায় যে, ২০১৬ সালে ৯১ টি দেশে আনুমানিক ২১৬ মিলিয়ন মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ছিল।

ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে কোনো ভ্যাকসিন নেই। তবে কোন ধরণের ম্যালেরিয়া পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত, লক্ষণ, বয়স এবং গর্ভবতী কিনা তা বিবেচনায় এনে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সময়মত সঠিক চিকিৎসা না নিলে মারাত্বক আকার ধারণ করে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। তাই এই রোগে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে অধিক সতর্কতা জরুরী।  

সচেতনতা বৃদ্ধি যেমন – মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করা, ঘুমানোর সময় মশারী টাঙানো, পুরানো পানি জমে থাকা ফুলের টপ পরিষ্কার রাখা, আশপাশ নোংরা ও ময়লা মুক্ত পরিষ্কার,পরিছন্ন রাখার মাধ্যমে এই রোগ সম্পূর্ণ রূপে প্রতিকার ও প্রতিরোধ করা যায়। 

মারবার্গ ভাইরাস (Marburg Virus Disease-MVD)

মারবার্গ ভাইরাস ইবোলার সমগোত্রীয়(MVD) একটি বিরল রোগ যার ফলে গুরুতর হেমোরেজিক জ্বর, ডায়রিয়া, বমি, পেশিতে ব্যথা, এবং ক্ষেত্রবিশেষে চরম রক্তক্ষরণও হয়ে থাকে। এটি মানুষ এবং পশুপ্রাণীর উভয়কেই আক্রান্ত করতে পারে। 

মারবুর্গ ভাইরাস প্রথম সনাক্ত করা হয় ১৯৬৭ সালে জার্মানির মারবার্গ, ফ্রাঙ্কফুর্ট এবং বেলগ্রেড, যুগোস্লাভিয়া (বর্তমানে সার্বিয়া) গবেষণার পরীক্ষাগারে। বিশেষজ্ঞগণ গবেষণা পরিচালনা করার জন্য উগান্ডা থেকে আমদানিকৃত আফ্রিকান সবুজ বানরের সংস্পর্শে এসেছিলেন। ফলে রক্তক্ষরণজনিত জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পরীক্ষাগার কর্মীদের থেকে শুরু করে একযোগে একত্রিশ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সাতজন মৃত্যুরবরণ করেন। অধিক বাদুড় বসবাসরত গুহা এবং খনিতে দীর্ঘদিন কাজ করার ফলে মারবার্গ ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে এবং তাদের মাধ্যমে এই রোগ লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে।  

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া এক তথ্য মতে, মারবার্গ ভাইরাসের সংক্রমিত রোগীদের প্রায় অর্ধেকেরই মৃত্যু হয়েছে। সম্প্রতি বছরগুলোতে ইকুয়েটরিয়াল গিনি, ঘানা, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, উগান্ডা, জিম্বাবুয়ে এসব দেশেগুলোতে মারবার্গ ভাইরাসের প্রার্দুভাব দেখা গেছে। 

মারবার্গ ভাইরাস রোগের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। এটির কোন ধরনের টিকাও আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। তবে লক্ষণভেদে রোগীর চিকিৎসা ও পরিচর্যা দেয়া হয়। রোগীকে অধিক পরিমানে পানি পান ও তরল গ্রহণ করতে হবে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। আক্রান্ত রোগীর শারীরিক ভারসাম্য বজায় থাকার জন্য রোগীর শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য, অক্সিজেনের স্থিতি এবং রক্তচাপ বজায় থাকা অত্যন্ত জরুরী ।

মেলিওডোসিস রোগ বা হুইটমোরস ডিজিজ (Melioidosis Disease)

মেলিওডোসিস, যাকে হুইটমোরের রোগও বলা হয়, এটি একটি সংক্রামক রোগ যা মানুষ বা প্রাণীকে সংক্রামিত করতে পারে। দূষিত মাটি ও পানিতে পাওয়া Burkholderia Pseudomallei বা B. Pseudomallei নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এই রোগ হয়। দূষিত পরিবেশের সংস্পর্শে  মানুষ এবং প্রাণীদের মধ্যে মেলিওডোসিস রোগ ছড়িয়ে পড়ে।

মেলিওডোসিস প্রধানত গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ুর একটি রোগ, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং উত্তর অস্ট্রেলিয়ায় যেখানে এটি ব্যাপক আকারে হয়ে থাকে। 

মেলিওডোসিসের লক্ষণ ও উপসর্গের বিস্তৃত পরিসর রয়েছে। এটি সাধারনত অন্যান্যঃ কিছু কিছু রোগের লক্ষণের সাথে মিলে যায় যেমন যক্ষ্মা বা নিউমোনিয়া। ব্যথা, ফোলা, জ্বর, আলসারেশন, ফোড়া, জ্বর, ওজন কমানো, পেট বা বুকে ব্যথা, পেশী বা জয়েন্টে ব্যথা, মাথাব্যথা, মস্তিষ্কের সংক্রমণ, খিঁচুনি ইত্যাদি। 

মেলিওডোসিস সংক্রমণ নিশ্চিত হলেই উপযুক্ত ওষুধ ব্যবহার করে এর চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া যায়। এই রোগের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে- প্রথম পর্যায়ে এক মাসের বেশি, পরে ছয় মাসের মত লাগতে পারে। প্রয়োজনে, সংক্রমণের ধরন এবং চিকিৎসার কোর্স অনুযায়ী অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল থেরাপি ও মৌখিক অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল থেরাপি দেয়া হয়ে থাকে।  

বৃষ্টিপ্রধান অঞ্চল যেখানে কাদামাটিতে ও সেচ কাজে জমিতে দীর্ঘসময় ধরে অবস্থান করেন সেসব লোকদের এই মেলিওডোসিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বেশি। তাই এ রোগের সংক্রমণ রোধে খুব সচেতনতা প্রয়োজন। 

হাম (Measles)

হাম বা জার্মান মিজলস একটি ভাইরাসজনিত রোগ ও শ্বাসযন্ত্রের তীব্র ভাইরাল অসুস্থতা। এই রোগে আক্রান্ত হলে প্রচন্ড অস্বস্তি, জ্বর, কাশি, চোখ মুখ ফুলে যাওয়া, চোখ ও নাক দিয়ে পানি পড়া, শরীরে ছোট ছোট লালচে গুটি/ফুসকুড়ি দেখা দেয় এবং অল্প কয়েক দিনের মধ্যে সারা শরীরে তা ছড়িয়ে পড়ে। সাধারনত শিশুরা হ্যাম রোগে বেশী আক্রান্ত হয়ে থাকে। যথাসময়ে চিকিৎসা করা না হলে শরীরের জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে যেমন- মস্তিষ্কে ম্যালিডাইসিস, নিউমোনিয়া, কানে ইনফেকশন ইত্যাদি। 

তবে শিশু ও বড়দের জন্য এই রোগের আলাদা করে প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন রয়েছে। ১-১৮ মাস বয়সী শিশুদের হামের টিকা দেয়া হয়। প্রয়োজনে বড়রাও চাইলে ‘এমএমআর’ নামক ভ্যাকসিন নিতে পারেন। ছোঁয়াচে হওয়ার কারণে এই রোগে সচেতনতা প্রয়োজন।

হাম রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সাধারণত তিন দিনের মধ্যে এই রোগের তীব্রতা কমে আসে এবং সাত দিনে অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠে। রোগীকে পুরোপুরি বিশ্রামে থাকতে হয়। সেইসাথে স্বাভাবিক খাদ্যের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পানি পান ও তরল খেতে হবে। 

মেনিনজাইটিস (Meningitis)

মেনিনজাইটিস হল মানুষের মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ডের চারপাশে থাকা টিস্যুস্তরের আবরণ (Meninges) এর প্রদাহ। ভাইরাল, ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক সংক্রমনে এই প্রদাহের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া আঘাত, ক্যান্সার, নির্দিষ্ট ওষুধ এবং অন্যান্য ধরনের সংক্রমনেও মেনিনজাইটিস হতে পারে। এক্ষেত্রে মেনিনজাইটিসের নির্দিষ্ট কারণ জানা গুরুত্বপূর্ণ। এর উপর ভিত্তি করে চিকিৎসাও ভিন্ন হয়। এ রোগের লক্ষণগুলো হলো-  ঘাড় শক্ত হওয়া ,তীব্র মাথাব্যথা, ঘুম ঘুম ভাব, স্মৃতিবিভ্রম, আলোর দিকে তাকাতে না পারা, শরীর ভারসাম্যহীন অনূভব করা, অজ্ঞান বা মূর্ছা যাওয়া, শরীরে বিশেষ দাগসহ আরো নানাবিধ শারীরিক সমস্যা হয়ে থাকে।

এই রোগের লক্ষণ শনাক্তের প্রায় ১০% রোগীর ২-৩ দিনের মধ্যে মারা যায়। আবার ২০% রোগী বেঁচে থাকলেও শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়ে। তাই লক্ষণ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে একজন নিউরোলজিস্ট চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।   

মেনিনজাইটিসের ধরণ ও কারণ এর উপর ভিত্তি করে রোগীর চিকিৎসা দেয়া হয়। যেমন-

  • ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিস: – অতি মারাত্বক একটি রোগ, দ্রুত হসপিটালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা শুরু না করলে ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিসে সাধারণত নির্ধারিত অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। 
  • ফাঙ্গাল মেনিনজাইটিস: – উচ্চমাত্রায় অ্যান্টিফাঙ্গাল দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। পরজীবী মেনিনজাইটিস- এ ক্ষেত্রে সাধারনত লক্ষণ ও উপসর্গের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা করা হয় । 
  • ভাইরাল মেনিনজাইটিস: – ভাইরাল মেনিনজাইটিসের কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিরায় অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দিয়ে চিকিত্সা করা হবে। 
  • দীর্ঘস্থায়ী মেনিনজাইটিসের: – এক্ষেত্রে রোগের মূল কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা করা হয়, যেমন ছত্রাক সংক্রমণ বা অটোইমিউন সমস্যা ও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ।

মেনিনোকোকাল ডিজিজ (Meningococcal Disease)

মেনিনোকোকাল ডিজিজ, এটি Neisseria Meningitidis (নেইসেরিয়া মেনিনজিটিডিস) ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট একটি গুরুতর সংক্রমণ রোগ। যাকে আক্রমণাত্মক মেনিনোকোকাল ডিজিজ বা আইএমডি (IMD) বলা হয়। মানব মস্তিষ্ক এবং মেরুদন্ড একটি পাতলা টিস্যুর স্তর দ্বারা আবৃত রাখে তাকে মেনিনজেস বলে। যদি নেইসেরিয়া মেনিনজিটিডিস এই মেনিনজেস সংক্রমণ করে তাহলে মেনিনোকোকাল ডিজিজের সৃষ্টি হয়। 

মেনিনোকোকাল রোগ ৫০% ক্ষেত্রে রোগীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। যদি প্রাথমিকভাবে নির্ণয় করা হয় তা অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা হয় তবে এটি এখনও পর্যন্ত 10-15% মানুষের মৃত্যু ঠেকানো যায় না। যারা বেঁচে থাকে তাদের মধ্যে মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি, শ্রবণশক্তি হ্রাস, কিডনি বিকল, হাত বা পা অবস হয়ে বা দীর্ঘস্থায়ী স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এ রোগের লক্ষণগুলো হলো- ঘাড় শক্ত হওয়া, তীব্র মাথাব্যথা, ঘুম ঘুম ভাব, স্মৃতিবিভ্রম, আলোর দিকে তাকাতে না পারা, শরীর ভারসাম্যহীন অনূভব করা, অজ্ঞান বা মূর্ছা যাওয়া, শরীরে বিশেষ দাগসহ আরো নানাবিধ শারীরিক সমস্যা হয়ে থাকে।

“মেনিনজাইটিস” এবং “মেনিনোকোকাল রোগ” এর মধ্যে কিছুটা মৌলিক পার্থক্য রয়েছে যেমনঃ  

“মেনিনজাইটিস” মানে মেনিনজেসের প্রদাহ। মেনিঞ্জেস হল টিস্যু যা মস্তিষ্ক এবং মেরুদন্ডকে আবৃত করে। মেনিনজাইটিস অনেক কারণে হতে পারে। মেনিনজাইটিসের সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের সংক্রমণ। শারীরিক আঘাত, ক্যান্সার বা নির্দিষ্ট ওষুধ থেকেও মেনিনজাইটিস হতে পারে। শুধু Neisseria Meningitidis নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হলেই মেনিনোকোকাল রোগ হয়।

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির নাক বা মুখ থেকে থুতু, কফ  বা অন্যান্য তরল পদার্থের সংস্পর্শে মেনিনোকোকাল রোগ ছড়ায়। সংক্রামিত ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে এমন কেউ সংক্রামিত হতে পারে যেমনঃ চুম্বন, কারো হাঁচি বা কাশি, জনবহুল এলাকায় বাস করা এবং এক খাবারের পাত্র সবাই খাওয়ার বা পান করার জন্য ব্যবহার করা ইত্যাদি। 

মেনিনোকোকাল রোগে আক্রান্ত একজন ব্যক্তি অসুস্থ বোধ করার ৭ দিন আগে এবং উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক শুরু হওয়ার ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত অসুস্থ থাকা অবস্থায় অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।

সকল শিশুর ১১-১২ বছর বয়সে মেনিনোকোকাল ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত, ১৬-১৮ বছর বয়সে বুস্টার ডোজও গ্রহণ করতে হবে। 

মাঙ্কিপক্স (Mpox)

Mpox যা মাঙ্কিপক্স নামেও পরিচিত এমন একটি ভাইরাল রোগ যা মাঙ্কিপক্স ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয়। মাঙ্কিপক্স ভাইরাস বা বাঁদরবসন্ত ভাইরাস (MPV বা MPXV) হল একটি ডাবল-স্ট্র্যান্ডেড ডিএনএ জুনোটিক ভাইরাস যা মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যে মাঙ্কিপক্স সৃষ্টি করে। এটি মানুষের অরথপক্স ভাইরাসগুলির মধ্যে একটি যার মধ্যে ভ্যারিওলা(VARV), কাউপক্স(CPX) এবং ভ্যাক্সিনিয়া(VACV) ভাইরাস রয়েছে। 

এমপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রায়ই একটি ফুসকুড়ি হয় যা হাত, পা, বুকে, মুখ বা লিঙ্গ, অণ্ডকোষ, ল্যাবিয়া এবং যোনি এবং মলদ্বার সহ যৌনাঙ্গের আশেপাশে হতে পারে। ইনকিউবেশন পিরিয়ড সময়কাল ৩-১৭ দিন। এই সময়ের মধ্যে একজন ব্যক্তির উপসর্গ থাকে না এবং ভাল বোধ করতে পারে।

ফুসকুড়ি নিরাময়ের আগে স্ক্যাব সহ বেশ কয়েকটি ধাপের মধ্য দিয়ে যাবে। প্রাথমিকভাবে ফুসকুড়ি ব্রণ বা ফোস্কা দেখা যেতে পারে এবং বেদনাদায়ক বা চুলকানি হতে পারে। এছাড়া অন্যান্য যে লক্ষণগুলো থাকে:

  • জ্বর
  • ঠাণ্ডা
  • ফোলা লিম্ফ নোড
  • ক্লান্তি
  • পেশী ব্যথা এবং পিঠে ব্যথা
  • মাথাব্যথা
  • শ্বাসকষ্টের লক্ষণ (যেমন, গলা ব্যথা, নাক বন্ধ হওয়া, বা কাশি)

মাঙ্কিপক্স ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি বা প্রাণীর সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে সংস্পর্শে এলে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। Mpox-এর সংস্পর্শে আসার ফলে উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা এলাকার লোকজন প্রয়োজনে টিকা নিতে পারেন।

মাম্পস (Mumps)

মাম্পস একটি ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট সংক্রামক রোগ। এটি সাধারণত কয়েক দিনের জ্বর, মাথাব্যথা, পেশী ব্যথা, ক্লান্তি এবং ক্ষুধা হ্রাস দিয়ে শুরু হয়। তারপর লালা গ্রন্থি ফুলে যায় কানের সামনে এবং নীচে অবস্থিত প্যারোটিড গ্রন্থি ফুলে উঠে যাঁকে প্যারোটাইটিস হিসাবেও  উল্লেখ করা হয়।

প্যারোটাইটিসের কয়েক দিন আগে শুরু হতে পারে যে লক্ষণ গুলো তা হল-

  • জ্বর
  • মাথাব্যথা
  • পেশী aches
  • ক্লান্তি
  • ক্ষুধামান্দ্য

লক্ষণগুলি সাধারণত সংক্রমণের ১৬-১৮  দিন পরে দেখা যায়, তবে ১২-২৫ দিনের মধ্যে এর সংক্রমণ হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে  খুব হালকা উপসর্গ থাকে (সর্দির মতো), বা কোনো লক্ষণই থাকে না এবং অনেকে হয়তো বুঝতেই পারেন না যে তাদের এই রোগ আছে। 

আবার ক্ষেত্রবিশেষে মাম্পস গুরুতর জটিলতাও সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধির পর অথবা ১২ থেকে ১৯ বছর বয়সে হলে ৩০%-৪০% ছেলেদের অণ্ডকোষ এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ডিম্বাশয় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে যার ফলে পরবর্তীতে আরও জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি মাম্পস জটিলতা থেকে মস্তিষ্কে প্রদাহ পর্যন্ত হতে পারে। 

আক্রান্ত ব্যক্তির কুসুম গরম লবণ পানি নিয়মিত কুলি করা ও প্রচুর তরল জাতীয় খেতে হবে। বিশেষ জটিলতা লক্ষণীয় হলে যেমন -অণ্ডকোষে ব্যথা বা মাথাব্যথা বা পেট ব্যথা হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। 

মাম্পস বেশিরভাগই দুই সপ্তাহের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে পুনরায় সুস্থ উঠে। তবে এই রোগের টিকাও রয়েছে, মাম্পসের দুই ডোজ টিকা গ্রহণের মাধ্যমে মাম্পস প্রতিরোধ করা যায়।

গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস এবং নোরোভাইরাস (Gastroenteritis and Norovirus)

গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস (Gastroenteritis) হচ্ছে পাকস্থলী এবং এর ছোট ও বড় অন্ত্রের প্রদাহ। ভাইরাল গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস হল বিভিন্ন ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট পাকস্থলীর একটি সংক্রমণ যার ফলে বমি বা ডায়রিয়া হয়। এটিকে “পেট ফ্লু” বলা হয়, যদিও এটি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট নয়। রোটাভাইরাস, নোরোভাইরাস, অ্যাডেনোভাইরাস, স্যাপোভাইরাস এবং অ্যাস্ট্রোভাইরাস সহ বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস সৃষ্টি করতে পারে।

আর নোরোভাইরাস / Noroviruses  হল খুব সংক্রামক ভাইরাসের একটি গ্ৰুপ যা ঘন ঘন গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস প্রাদুর্ভাবের জন্য দায়ী।

দূষিত খাবার পানীয় পান করে এই রোগ সংক্রামিত হতে পারে। খাদ্য (বিশেষ করে শেলফিশ) এবং পানি পয়ঃনিষ্কাশন দ্বারা দূষিত হলে। আবার খাদ্য প্রস্তুতকারী বা হ্যান্ডলারদের দ্বারা খাদ্য দূষিত হতে পারে। যাদের ভাইরাল গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস আছে তারা যদি বাথরুম ব্যবহার করার পর নিয়মিত হাত না ধোয় তাদের মাধ্যমেও গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস ছড়াতে পারে।

ভাইরাল গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিসের প্রধান উপসর্গগুলো হল পানিযুক্ত ডায়রিয়া এবং বমি। মাথাব্যথা, জ্বর এবং পেটে ব্যথাও হতে পারে। সাধারণভাবে, গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস সৃষ্টিকারী ভাইরাসের সংক্রমণের থেকে ২ দিন পরে লক্ষণগুলো শুরু হয় এবং থেকে ১০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

ভাইরাল গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিসে আক্রান্ত প্রায় সকলেই কোনো দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা ছাড়াই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে। ভাইরাল গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল পর্যাপ্ত পানীয় পান করা ও তরল খাদ্য গ্রহণ করা যাতে পানিশুণ্যতার (ডিহাইড্রেশন) মারাত্মক অভাব পূরণ করা যায়। অবশ্যই প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। 

নন-গনোকোকাল ইউরেথ্রাইটিস (এনজিইউ) (Non-Gonococcal Urethritis-NGU)

Nongonococcal Urethritis(NGU) হল বিভিন্ন জীবাণু (যেমন ক্ল্যামাইডিয়া, ইউরিয়াপ্লাজমা ইউরিয়ালিটিকাম, হেমোফিলাস ভ্যাজাইনালিস ) বা অজানা অন্যান্য জীবাণুর কারণে সৃষ্ট একটি যৌন সংক্রমণ (STI) রোগ যা মূত্রনালীর প্রদাহ, প্রস্রাব করার সময় ব্যথা বা জ্বালাপোড়া বা ডিসুরিয়া, সাদা/মেঘলা স্রাব এবং ঘন ঘন প্রস্রাব, অস্বাভাবিক যোনিপথে রক্তপাত ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি করে। তবে এইরোগ গনোরিয়া সংক্রমণের কারণে সৃষ্ট নয়। 

Nongonococcal Urethritis(NGU) ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রামিত সঙ্গীর সাথে উম্মুক্ত যৌন মিলন (কনডম বা অন্য বাধা পদ্ধতি ছাড়া মৌখিক, যোনি বা পায়ুপথে যৌন মিলন) মাধ্যমে এনজিইউ ছড়াতে পারে। যে কেউ NGU সৃষ্টিকারী জীবাণুর সংস্পর্শে আসার পরেই অন্যদের সংক্রমিত করতে পারে।

NGU প্রতিরোধ করার সর্বোত্তম উপায় হল যৌনমিলনের সময় কনডম বা অন্যান্য নিরাপদ পদ্ধতি ব্যবহার করা। যদি যৌনসঙ্গীর কোনো যৌন সংক্রমণ (STI) -এর লক্ষণ থাকে বা কোনো STI-এর সংস্পর্শে এসে থাকে তাহলে তার সাথে যৌনমিলন থেকে বিরত থাকতে হবে। ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার জন্য চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

প্লেগ (Plague)

প্লেগ ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস নামক ব্যাকটেরিয়া (Yersinia Pestis Bacterium) দ্বারা সৃষ্ট একটি রোগ যা মানুষ এবং অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীকে আক্রান্ত করে। প্লেগ ব্যাকটেরিয়া বহনকারী ইঁদুরে, মাছি দ্বারা কামড়ানোর ফলে, সংক্রমিত মানুষ থেকে মানুষে, বাতাসের মাধ্যমেও প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মধ্যযুগে ইউরোপে লক্ষ লক্ষ মারা গিয়েছিল। 

বর্তমানে, আধুনিক অ্যান্টিবায়োটিকগুলো প্লেগের চিকিৎসায় কার্যকর। দ্রুত চিকৎসা না করলে, এই রোগ গুরুতর অসুস্থতা বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। বর্তমানে, পশ্চিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রামীণ অঞ্চলে মানুষের প্লেগের সংক্রমণ এখনো রয়েছে, তবে আফ্রিকা এবং এশিয়ার কিছু অংশে উল্লেখযোগ্যভাবে এর প্রার্দুভাব দেখা দেয়।

প্লেগের লক্ষণ নির্ভর করে কিভাবে রোগী প্লেগ ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে এসেছে। প্লেগ এর বিভিন্ন ক্লিনিকাল ফর্ম রয়েছে তা হল – বুবোনিক, নিউমোনিক এবং সেপ্টিসেমিক।

বুবোনিক প্লেগ (Bubonic Plague)

বুবোনিক প্লেগের ইনকিউবেশন পিরিয়ড সাধারণত ২ থেকে ৪ দিন। রোগীদের জ্বর, মাথাব্যথা, ঠান্ডা লাগা, দুর্বলতা এবং এক বা একাধিক ফোলা, বেদনাদায়ক লিম্ফ নোড বৃদ্ধি করে। এই ফর্মটি সাধারণত সংক্রামিত মাছির মাধ্যমে ছড়ায়। উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে রোগীর চিকিৎসা না করলে ব্যাকটেরিয়া শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

সেপ্টিসেমিক প্লেগ (Septicemic Plague)

সেপ্টিসেমিক প্লেগের ইনকিউবেশন পিরিয়ড মারাত্বক আকার ধারণ করে না তবে এক্সপোজারের কয়েক দিনের মধ্যে ঘটে। রোগীদের জ্বর, ঠান্ডা লাগা, চরম দুর্বলতা, পেটে ব্যথা, শক, ত্বক এবং অন্যান্য অঙ্গে রক্তপাত হয়। ত্বক এবং অন্যান্য টিস্যু কালো হয়ে যেতে পারে এবং মারাও যেতে পারে, বিশেষ করে আঙ্গুল, পায়ের আঙ্গুল এবং নাকে। সেপ্টিসেমিক প্লেগের প্রথম উপসর্গ হিসাবেও দেখা দিতে পারে আবার চিকিৎসা না করা বুবোনিক প্লেগ থেকে ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাওয়ার ফলেও হতে পারে। এই ফর্মটি সংক্রামিত মাছি বা সংক্রামিত প্রাণীর সংস্পর্শের মাধ্যমে ঘটে।

নিউমোনিক প্লেগ (Pneumonic Plague)

Yersinia Pestis ব্যাকটেরিয়ায় সংক্রামিত ব্যক্তির কাশি, হাঁচির ও শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির ফুসফুসে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। নিউমোনিক প্লেগের ইনকিউবেশন পিরিয়ড মাত্র থেকে ৩ দিন। নিউমোনিক প্লেগ হল রোগের সবচেয়ে মারাত্মক রূপ এবং এটি প্লেগের একমাত্র রূপ যা ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে দ্রুত ছড়াতে পারে। এক্ষেত্রে রোগীদের জ্বর, মাথাব্যথা, দুর্বলতা এবং শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, কাশি এবং কখনও কখনও রক্তাক্ত বা পানিযুক্ত শ্লেষ্মা সহ দ্রুত নিউমোনিয়ার সৃষ্টি হয়।

হুপিং কাশি (Whooping Cough (Pertussis)

হুপিং কাশি, যাকে পারটুসিসও বলা হয়, বোর্ডেটেলা পারটুসিস ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট একটি ছোঁয়াচে রোগ। হুপিং কাশি সংক্রামিত ব্যক্তির কাশি, হাঁচি বা কথা বলার সময় উৎপন্ন ক্ষুদ্র ভেজা ফোঁটা দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে। হুপিং কাশিতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা নাক দিয়ে সর্দি হওয়ার সময় থেকে তাদের কাশি শুরু হওয়ার ৩ সপ্তাহ পর পর্যন্ত এই রোগটি ছড়াতে পারে। তাই আক্রান্ত ব্যক্তিদের অন্যদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এড়ানো উচিত, বিশেষ করে শিশু এবং গর্ভবতী মহিলাদের সাথে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। 

 আক্রান্ত ব্যক্তিদের সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করানো হয় তাছাড়া এই রোগের ভ্যাকসিনও রয়েছে। 

নিউমোকোকাল রোগ (Pneumococcal Disease)

নিউমোকোকাল [noo-muh-KOK-uhl] রোগ হল স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনিয়া বা নিউমোকোকাস নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট যে কোনো সংক্রমণ রোগ। নিউমোকোকাল সংক্রমণ কান এবং সাইনাসের সংক্রমণ থেকে নিউমোনিয়া এবং রক্ত ​​প্রবাহের সংক্রমণ পর্যন্ত হতে পারে। নিউমোকোকাল রোগ ভ্যাকসিন দ্বারা প্রতিরোধযোগ্য।

নিউমোকক্কাল ব্যাকটেরিয়া সংক্রামিত ব্যক্তিদের লালা বা শ্লেষ্মা জাতীয় শ্বাসযন্ত্রের সাথে সংস্পর্শের মাধ্যমে নিউমোকোকাল ব্যাকটেরিয়া ছড়ায়। কিছু কিছু ব্যক্তিদের বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে উপসর্গবিহীন ভাবে নাকে বা গলায় এই ব্যাকটেরিয়া বিদ্যমান থাকে যা অন্যদের মধ্যে ছড়াতে পারে। বিশেষজ্ঞরা এটিকে “ক্যারেজ” বলে থাকে কারণ এতে বিশেষ কোন লক্ষণ দেখা যায় না।

নিউমোকোকাল রোগের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের সংক্রমণ হতে পারে। শরীরের যে অংশে আক্রান্ত হয়, উপসর্গগুলো তার উপর নির্ভর করে। বেশিরভাগ নিউমোকোকাল সংক্রমণ হালকা হয়ে থাকে। আবার কিছু মারাত্মক হতে পারে বা দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হতে পারে যেমন-

নিউমোনিয়া (Pneumonia)

নিউমোকোকাল নিউমোনিয়া, ফুসফুসের সংক্রমণের লক্ষণগুলো হল :

  • জ্বর এবং সর্দি
  • কাশি
  • দ্রুত শ্বাস নেওয়া বা শ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়া
  • বুক ব্যাথা

নিউমোকোকাল নিউমোনিয়া আক্রান্ত প্রতি ২০ জনের মধ্যে জন মারা যায়। নিউমোকোকাল নিউমোনিয়ার জটিলতাগুলো হল :

  • এমপিমা (ফুসফুসের চারপাশে এবং বুকের গহ্বরে সংক্রমণ)
  • পেরিকার্ডাইটিস (হৃদপিণ্ডের বাইরের আস্তরণের প্রদাহ)
  • এন্ডোব্রঙ্কিয়াল বাধা (শ্বাসনালীতে বাধা যা ফুসফুসে বাতাস প্রবেশ করতে দেয়), অ্যাটেলেক্টাসিস (ফুসফুসের মধ্যে ভেঙে পড়া) এবং ফুসফুসে ফোড়া (পুস সংগ্রহ)

মেনিনজাইটিস (Meningitis)

নিউমোকোকাল মেনিনজাইটিস একটি প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগ যা মস্তিষ্ক এবং মেরুদন্ডকে ঘিরে থাকা স্তরগুলিতে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এই স্তরগুলিকে মেনিঞ্জেস বলা হয়- এগুলি মস্তিষ্ককে আঘাত এবং সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। নিউমোকোকাল মেনিনজাইটিসের লক্ষণগুলো হল :

  • ঘাড় শক্ত হওয়া
  • জ্বর
  • মাথাব্যথা
  • ফটোফোবিয়া (চোখ আলোর প্রতি বেশি সংবেদনশীল)
  • বিভ্রান্তি
  • শিশুদের মধ্যে মেনিনজাইটিস সংক্রমণ হলে খাওয়া-দাওয়ায় অরুচি এবং বমি হতে পারে।

নিউমোকোকাল মেনিনজাইটিস আক্রান্ত প্রতি ১২ জনের মধ্যে জন শিশু এবং ৬ জনের মধ্যে জন বয়স্ক ব্যক্তি সংক্রমণে মারা যায়। যারা বেঁচে থাকে তাদের দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হতে পারে, যেমন শ্রবণশক্তি হ্রাস বা বিকাশে বিলম্ব হতে পারে।

রক্তের সংক্রমণ (Blood Infection)

নিউমোকোকাল ব্যাকটেরিয়া রক্তে সংক্রমণের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে – 

  • জ্বর
  • ঠাণ্ডা অনুভূতি 

নিউমোকোকাল ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত প্রতি ৩০ জনের মধ্যে জন শিশু মারা যায় এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রতি ৮ জনে প্রায় জনমারা যায়। যারা বেঁচে থাকে, তাদেরও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি হতে পারে।

মধ্য কানের সংক্রমণ (Middle Ear Infection)

মধ্য কানের সংক্রমণ (Otitis Media), যা সাধারণত নিউমোকোকাল ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি করে আর এর লক্ষণগুলো হল:

  • কানের ব্যথা
  • জ্বর
  • ক্ষুধামান্দ্য।
  • ঘুমের সমস্যা।
  • অবরুদ্ধ কানে শুনতে সমস্যা।
  • কানে ভরাট বা চাপের অনুভূতি।
  • আপনার কান থেকে হলুদ, বাদামী বা সাদা পুঁজ নির্গত হওয়া। (মানে হতে পারে আপনার কানের পর্দা ছিড়ে গেছে)

কানের সংক্রমণ সাধারণত হালকা হয় এবং কিছু  কিছু শিশুর বারবার কানের সংক্রমণ হয় এক্ষেত্রে কানের টিউবের প্রয়োজনও হতে পারে।

সাইনাস প্রদাহ (Sinus Infection)

সাইনাস সংক্রমণের লক্ষণগুলো হল:

  • মাথাব্যথা
  • স্টাফ বা সর্দি নাক
  • ঘ্রাণশক্তি হারানো
  • মুখের ব্যথা বা চাপ
  • পোস্টনাসাল ড্রিপ/Postnasal Drip (গলা বা নাকের পিছনে শ্লেষ্মা তৈরি হওয়া)
  • চোখের চারপাশের টিস্যুর সংক্রমণ, হাড়ের সংক্রমণ এবং বেদনাদায়ক ফোঁড়ার সমস্যা সৃষ্টি হওয়া ইত্যাদি।

নিউমোকক্কাল রোগ প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায় নিউমোকক্কাল টিকা(Vaccination) গ্রহণ করা। এই রোগের টিকা(Vaccination) জন্মের ৬ সপ্তাহ পর থেকে শুরু হয়।

পোলিও/পোলিওমাইলাইটিস (Poliomyelitis/Polio)

পোলিও যা পোলিওভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি রোগ। এটি পোলিওমাইলাইটিস(Poliomyelitis) নামেও পরিচিত। পোলিও প্রধানত মেরুদণ্ড বা মস্তিষ্কের স্টেমের স্নায়ুকে প্রভাবিত করে মারাত্মক আকারে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়াতে অক্ষম করে দেয় যাকে পক্ষাঘাতও বলা হয়। এটি শ্বাসকষ্ট এবং কখনও কখনও মৃত্যুও হতে পারে।

পোলিও ভাইরাসটি গলা এবং অন্ত্রে বাস করে থাকে বলে, পোলিও সংক্রমিত মলের সংস্পর্শে ও হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে সংক্রমণ করতে পারে। একই টয়লেট ব্যবহার ও সংক্রামিত মানব বর্জ্য দ্বারা দূষিত পানীয় জল থেকে পোলিওতে আক্রান্ত হয়। 

তাছাড়া ভাইরাসটি এতই সংক্রামক যে ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে বসবাসকারী যে কেউ সংক্রমণ হতে পারে। গর্ভবতী মহিলারা, দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের ব্যক্তিরা – যেমন যারা এইচআইভি পজিটিভ – এবং ছোট বাচ্চারা পোলিওভাইরাসে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে।

পোলিওভাইরাসে দ্বারা সংক্রমিত বেশিরভাগ লোকের লক্ষণ দেখা যায় না। তবে যে লক্ষণগুলো দেখা যায় তা হল –

নন-প্যারালাইটিক পোলিও

নন -প্যারালাইটিক পোলিওর লক্ষণ এবং উপসর্গ এক থেকে ১০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এই লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি ফ্লুর মতো হতে পারে যেমন :

  • জ্বর
  • গলা ব্যথা
  • মাথাব্যথা
  • বমি
  • ক্লান্তি
  • মেনিনজাইটিস

নন -প্যারালাইটিক পোলিও গর্ভপাত পোলিও নামেও পরিচিত।

প্যারালাইটিক পোলিও (Paralytic Polio)

প্রায় শতাংশ পোলিও রোগী প্যারালাইটিক পোলিওতে পরিণত হতে পারে। প্যারালাইটিক পোলিও মেরুদন্ডী (Spinal Cord/Spinal Polio), ব্রেনস্টেম (Brainstem/Bulbar polio) বা উভয় বাল্বস্পাইনাল পোলিও (Both Bulbospinal Polio) পক্ষাঘাত সৃষ্টি করে ।

প্রাথমিক লক্ষণগুলো অ-প্যারালাইটিক পোলিওর মত। কিন্তু এক সপ্তাহ পরে, লক্ষণ গুরুতর হতে থাকে। এই লক্ষণগুলো হল :

  • রিফ্লেক্সের ক্ষতি / Loss of Reflexes
  • তীব্র খিঁচুনি এবং পেশী ব্যথা
  • আলগা এবং ফ্লপি অঙ্গ, কখনও কখনও শরীরের একপাশে
  • আকস্মিক পক্ষাঘাত, অস্থায়ী বা স্থায়ী
  • বিকৃত অঙ্গ, বিশেষ করে নিতম্ব, গোড়ালি এবং পা
  • সম্পূর্ণ পক্ষাঘাতের ক্ষেত্রে এমনটি হয়ে থাকে। তবে খুব কম প্রায় শতাংশেরও কম ৷ 

পোস্ট-পোলিও সিন্ড্রোম (Post-Polio Syndrome)

পোলিওতে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার পরেও পোলিও এর লক্ষণ দেখা দিতে পারে। পোস্ট-পোলিও সিন্ড্রোম আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার ১৫ থেকে ৪০ বছর পরে লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে। পোস্ট-পোলিও সিন্ড্রোমের(PPS) সাধারণ লক্ষণগুলো হল:

  • ক্রমাগত পেশী এবং জয়েন্টের দুর্বলতা
  • পেশী ব্যথা যা আরও খারাপ হয়
  • সহজেই ক্লান্ত বা ক্লান্ত হয়ে পড়া
  • পেশী ক্ষয়, এটাকে পেশী অ্যাট্রোফি বলা হয়
  • শ্বাস নিতে এবং গিলতে সমস্যা
  • স্লিপ অ্যাপনিয়া, বা ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট
  • ঠান্ডা তাপমাত্রা কম সহনশীলতা
  • পেশীগুলিতে দুর্বলতার 
  • বিষণ্ণতা
  • একাগ্রতা এবং স্মৃতিতে সমস্যা

আপনার যদি পোলিও হয়ে থাকে এবং পরবর্তীতে আপনার যদি এই লক্ষণগুলো দেখা দেয় তাহলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। বিশেষজ্ঞদের মতে, পোলিও থেকে বেঁচে যাওয়া ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ লোকের পোস্ট-পোলিও সিন্ড্রোম হওয়ার সম্ভবনা থাকে। 

পোলিও রোগের কার্যকর প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন ব্যবস্থা রয়েছে। এর ভ্যাকসিন ওরাল অথবা কিছুক্ষেত্রে ইনজেকশন এর মাধ্যমে দেয়া হয়। শিশুর জন্মের ৬ সপ্তাহ বয়স থেকে পোলিও ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হয়। পোলিও রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে সময়মত সচেতনতার সাথে শিশুদের পোলিও ভ্যাকসিন দিতে হবে। 

জলাতঙ্ক রোগ (Rabies)

জলাতঙ্ক একটি প্রতিরোধযোগ্য ভাইরাল রোগ যা সংক্রামিত স্তন্যপায়ী প্রাণীর লালার মাধ্যমে ছড়ায়। তবে এশিয়া, আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকা সহ অন্যান্য অঞ্চলে, কুকুর থেকে মানুষের মধ্যে সক্রমন হতে দেখা যায়।

জলাতঙ্ক রোগ Rabies ভাইরাস জনিত এক ধরণের জুনোটিক রোগ। আক্রান্ত যে কোন প্রাণীর মুখের লালার মধ্যে এই ভাইরাস থাকে।  তাই আক্রান্ত প্রাণীর কামড় বা আঁচড়ের মাধ্যমে মানুষের শরীরে এই ভাইরাস প্রবেশের ফলে মস্তিষ্কের টিস্যুতে প্রবেশ করে। ফলে ধীরে ধীরে গলবিল এবং খাদ্যনালির মাংসপেশির কাজ নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুও আক্রান্ত হয়ে ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে এবং নিশ্চিত মৃত্যু হয়।

দুর্ভাগ্যবশত, একবার লক্ষণগুলো বিকশিত হয়ে গেলে, কোনও ওষুধ বা ভ্যাকসিনেও বেঁচে থাকার সুযোগ খুব একটা থাকে না। জলাতঙ্কে আক্রান্ত বেশিরভাগ ব্যক্তি নিবিড় চিকিৎসা সেবা সত্ত্বেও এই রোগে মারা যায়। খুব কম সংখ্যক রোগীই জলাতঙ্ক সংক্রমণ থেকে বেঁচে গেছেন বলে বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে জানা যায়।

১৮৮৫ সালে বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর জলাতঙ্ক টিকা আবিষ্কার করেন। কঠিন এই রোগের মারাত্বক ঝুঁকি এড়াতে যে কেউ আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে জলাতঙ্কের টিকা নেয়া খুব জরুরী। 

সিফিলিস (Syphilis)

সিফিলিস হল যা ট্রেপোনেমা প্যালিডাম / Treponema Pallidum নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট একটি যৌন সংক্রমণ রোগ (STI)। এটি যোনি, পায়ুপথ বা ওরাল সেক্সের সময় শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ে। যথাসময়ে চিকিৎসা না করলে সিফিলিস গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে তবে এটি অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে নিরাময়যোগ্য।

সিফিলিস বেশ কিছুদিন সুপ্ত অবস্থায় থাকে এবং পর্যায়ক্রমে একাধিক লক্ষণ দেখা যা সপ্তাহ, মাস বা এমনকি বছর ধরে চলতে পারে। সিফিলিসের লক্ষণ সমুহ:

  • লিঙ্গ, যোনিতে বা আপনার মলদ্বারের চারপাশে ছোট ছোট ঘা- এগুলি সাধারণত ব্যথাহীন এবং আপনার শুধুমাত্র একটিও হতে পারে।
  • মুখ বা আপনার ঠোঁট, হাত বা নীচে সহ অন্যান্য জায়গায় ঘা।
  • লিঙ্গ, যোনিতে বা আপনার মলদ্বারের চারপাশে সাধারণত সাদা বা ধূসর রঙের গুটিকা বৃদ্ধি পায়।
  • হাতের তালুতে এবং আপনার পায়ের তলায় ফুসকুড়ি যা কখনও কখনও আপনার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে – এটি সাধারণত চুলকায় না।
  • জিহ্বা বা গলায় ধূসর বা সাদা ছোপ।
  • ফ্লু-এর মতো লক্ষণ, যেমন উচ্চ তাপমাত্রা, মাথাব্যথা এবং ক্লান্তি।
  • গ্রন্থি ফোলা।
  • মাথা, দাড়ি এবং ভ্রুতে চুল পড়া।

সিফিলিস রোগের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। সিফিলিসের চিকিৎসা চলাকালীন সিফিলিসের ঘা সম্পূর্ণরূপে নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত কারো সাথে সহবাস করা উচিত নয়। সিফিলিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের তাদের যৌন সঙ্গীকে সচেতন করা উচিত যাতে তারা প্রয়োজনে পরীক্ষা এবং চিকিৎসাও পেতে পারে।

ধনুষ্টঙ্কার (Tetanus)

ধনুষ্টঙ্কার বা টিটেনাস হল ক্লোস্ট্রিডিয়াম টেটানি / Clostridium Tetani নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রমণ। যখন এই ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করে এক ধরণের বিষ তৈরি করে যা বেদনাদায়ক পেশী সংকোচন ঘটায়। টিটেনাসের আরেকটি নাম হল “লকজা (Lockjaw)”। এটি প্রায়শই একজন ব্যক্তির ঘাড় এবং চোয়ালের পেশীগুলিকে লক করে দেয়, যার ফলে মুখ খুলতে বা গিলতে পারেনা।

টিটেনাস ব্যাকটেরিয়া মাটি, ধুলো এবং সার সহ পরিবেশের যেকোন জায়গায় থাকতে পারে। শরীরের গভীর ক্ষতের ম্যধ্যমে এই ব্যাকটেরিয়া মানুষের দেহে প্রবেশ করে যেমন-

  • ক্ষত ময়লা, মল (মল), বা লালা (থুথু) দূষিত হলে। 
  • পেরেক বা সুই দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে শরীরে ক্ষত সৃষ্টি হলে।
  • ইনজুরি হলে।
  • পোড়া গেলে।

তবে অন্যান্য সংক্রামক রোগের মত এই রোগে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। ধনুষ্টঙ্কার বা টিটেনাসের আক্রান্ত প্রতি ১০ জন জনের মৃত্যু হতে পারে। 

ধনুষ্টঙ্কারকে “লকজা” বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে কারণ এটি সংক্রমণের ফলে সাধারণত চোয়ালের পেশী শক্ত হয়ে যায় এতে মুখ খুলতে, গিলতে এবং শ্বাস নিতে সমস্যা সহ গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও যে লক্ষণগুলো দেখা যায় তা হল-

  • চোয়াল ক্র্যাম্পিং।
  • হঠাৎ, অনিচ্ছাকৃত পেশীর খিঁচুনি – বিশেষ করে পেটে।
  • সারা শরীরে বেদনাদায়ক পেশী শক্ত হয়ে যাওয়া।
  • গিলতে সমস্যা।
  • খিঁচুনি (ঝাঁকুনি দেওয়া বা তাকিয়ে থাকা)।
  • মাথাব্যথা।
  • জ্বর এবং ঘাম।
  • রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দনের পরিবর্তন।

এবং গুরুতর লক্ষণগুলো হল :

  • ল্যারিনগোস্পাজম / Laryngospasm (ভোকাল কর্ডের অনিয়ন্ত্রিত/অনিচ্ছাকৃত শক্ত হওয়া)
  • ফ্র্যাকচার / Fractures (ভাঙা হাড়)
  • পালমোনারি এম্বোলিজম / Pulmonary Embolism (ফুসফুসের প্রধান ধমনী বা তার শাখাগুলির একটিতে রক্ত ​​জমাট বাঁধা)
  • অ্যাসপিরেশন নিউমোনিয়া / Aspiration Pneumonia (একটি ফুসফুসের মারাত্বক সংক্রমণ)
  • শ্বাসকষ্ট / Breathing Difficulty

টিটেনাস টিকার মাধ্যমেই প্রতিরোধ সম্ভব। শিশুদের ৬ সপ্তাহ থেকে টিটেনাস এর ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়। এই মারাত্বক রোগ থেকে বাঁচতে আপনার শিশুকে অবশ্যই সময়মত টিটেনাস এর ভ্যাকসিন দিন। টিকার কার্যকারিতা ধরে রাখার জন্য প্রতি দশ বছরে এক ডোজ করে নিতে হবে। 

যক্ষ্মা (টিবি) (Tuberculosis)

যক্ষ্মা (টিবি) মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস (Mycobacterium Tuberculosis) ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রামক রোগ যা সাধারণত ফুসফুসকে আক্রান্ত করে সংক্রামিত করে। তবে শরীরের অন্যান্য অংশকেও সংক্রামিত করতে পারে। সংক্রামিত ব্যক্তিদের কাশি, হাঁচি বা থুথুর এমনকি কথা বলা, গান, হাসির মাধ্যমেও এটি বাতাসের মাধ্যমে একজনের থেকে অন্যজনের দেহে ছড়িয়ে পড়ে। যক্ষ্মা প্রতিরোধযোগ্য এবং নিরাময়যোগ্য। বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ টিবি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয়েছে বলে অনুমান করা হয়।

যক্ষ্মা (টিবি) এর কয়েকটা ধরন রয়েছে। যেমন –

  • সুপ্ত অবস্থায় টিবি / Inactive TB
  • সক্রিয় টিবি / Active TB
  • পালমোনারি টিবি / Pulmonary TB
  • এক্সট্রা পালমোনারি টিবি / Extrapulmonary TB

নিষ্ক্রিয় যক্ষ্মায় (Inactive TB) আক্রান্ত ব্যক্তিদের উপসর্গ দেখা যায় না। যাদের সক্রিয় যক্ষ্মা (Active Tuberculosis) আছে তাদের নিম্নলিখিত উপসর্গগুলো দেখা যেতে পারে:

  • কাশি (দুই সপ্তাহের বেশি স্থায়ী)।
  • বুকে ব্যাথা।
  • কাশি থেকে রক্ত বা থুতু (শ্লেষ্মা)।
  • ক্লান্তি বা দুর্বলতা।
  • ক্ষুধামান্দ্য।
  • ওজন কমানো।
  • ঠাণ্ডা।
  • জ্বর।
  • রাতের ঘাম।

সাধারণত যক্ষ্মা / টিবি সংক্রমণ এবং রোগের চিকিৎসার জন্য নির্দির্ষ্ট ওষুধ রয়েছে এবং এই ওষুধের নির্দির্ষ্ট কোর্স অথবা মেয়াদকাল থাকে। চিকিৎসকের দেয়া নির্দেশিত সমস্ত ওষুধ রোগীকে অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। নতুবা সমস্ত ব্যাকটেরিয়া মারা যাবে না। যতক্ষণ  চিকিৎসক ঔষধ বন্ধ করতে না বলবে তখন ঔষধ চালিয়ে যেতে হবে। সাধারণত এর ওষুধগুলো ৬ মাস পর্যন্ত গ্রহণ করতে হয়- কখনও কখনও নয় মাস পর্যন্ত সময় লাগে। রোগীর সম্পূর্ণ প্রেসক্রিপশন শেষ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Comment