গর্ভকালীন সময়ে কিছু খাবার গর্ভধারণ সংক্রান্ত জটিলতা তৈরি করে এতে মা অসুস্থ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ সময়ে পুষ্টিকর সুষম খাবার খাওয়া যেমন জরুরী তার চেয়ে বেশি জরুরী কি কি খাবেন না। কারণ পুষ্টিকর খাবার যেমন শরীরে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখে তেমনি কিছু কিছু খাবার গর্ভবতী মায়ের জন্য ক্ষতিকর। তাই খাবারের পুষ্টিগুণের পাশাপাশি ক্ষতিকর খাবার গুলো জেনে রাখা অত্যধিক জরুরী। আসুন জেনে নিই গর্ভকালীন সময়ের নিষিদ্ধ খাবারসমূহ।
গর্ভকালীন সময়ে পুষ্টিকর সুষম খাবার খাওয়া যেমন জরুরী তার চেয়ে বেশি জরুরী কি কি খাবেন না। কিছু নিষিদ্ধ খাবার অনাকাঙ্খিত গর্ভপাত পর্যন্ত করতে পারে।
গর্ভকালীন সময়ের নিষিদ্ধ খাবারসমূহ
কাঁচা বা অল্পসিদ্ধ খাবার
কাঁচা ও অল্প রান্না করা মাংসজাত পণ্য খাবার না খাওয়া উত্তম। এগুলোতে সালমোনিলা ও লিসটেরিয়ার মতো ব্যাকটেরিয়া এবং টোকসোপ্ল্যাজমা গনডির মতো পরজীবী থাকতে পারে।
মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার
গর্ভকালীন সময়ে কখনো মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার খাওয়া উচিত নয়। কারণ সেগুলোতে ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে যা মায়ের জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। তাই খাবার খাওয়ার সময় অথবা প্যাকেটজাত খাবার পণ্য ক্রয়ে সচেতন হতে হবে।
ক্যাফেইন
ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় অতিমাত্রায় (চা, কফি, চকলেট) পান না করা ভালো। এগুলো বেশি খাওয়ার ফলে গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্যহানি হতে পারে। এসময় শরীরের বাড়তি ওজন কিন্তু ক্ষতিকর। তাই ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় খাবার বা পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত।
যকৃত(লিভার) ও অন্যান্য অঙ্গের মাংস
যকৃতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকলেও এটা গর্ভধারিণী নারীদের খেতে চিকিৎসকরা নিষেধ করেন। কারণ এতে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ থাকে এবং এই মাংসে বিষক্রিয়ার ঝুঁকি থাকে যা গর্ভবতী মায়ের জন্য খুব ঝুঁকিপূর্ণ।
আনারস
গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে আনারস খেলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে। আনারসে প্রচুর পরিমাণ খনিজ উপাদান ও প্রোটিন থাকে যা পাকস্থলীর বিভিন্ন ইনফেকশন দূর করলেও গর্ভপাতের আশঙ্কা থাকে। তাই এ সময়ে আনারস এড়িয়ে চলে হবে।
পেঁপে
কাঁচা বা আধা-পাকা পেঁপের মধ্যে ল্যাটেক্স থাকে যা ইউটেরিন কন্ট্র্যাকশন ঘটায়। এটি গর্ভের শিশুর ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। তবে পেঁপে পাকা হলে কোনো সমস্যা নেই। সেজন্যই গর্ভাবস্থায় অবশ্যই কাঁচা বা আধা পাকা পেঁপে খাবেন না।
ডিম ও বীজ
কাঁচা বা কম সিদ্ধ ডিম। এতে সালমোনিলা ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। তাছাড়া রান্না না করা অঙ্কুরিত বীজ, খাদ্যশস্য ও শিম , কাঁচা মূলা, শিম ও আলফালফার বীজ এবং রেডি-টু-ইট সালাদ এসব খাবার খাবেন না। এতে থাকে লিসটেরিয়া, সালমোনিলা ও ই কোলির মতো ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া গর্ভকালীন সময়ে মারাত্বক ক্ষতি হতে পারে।
শিকারি মাছ
শিকারি মাছ যেমন হাঙ্গর, সোর্ড ফিশ, মার্লিন ও কিং ম্যাককেরেলে উচ্চ মাত্রায় পারদ (মার্কারি) থাকে। তাই গর্ভকালীন সময়ে এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। তাছাড়া কাঁচা মাছ ও সিফুডও বর্জন করে উচিত। কারণ এগুলোতে উচ্চমাত্রায় ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী থাকতে পারে যা গর্ভবতী মায়ের জন্য ক্ষতিকর।
অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পানি বা এনার্জি ড্রিংক
গর্ভাবস্থায় দূরে রাখতে হবে অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পানি বা এনার্জি ড্রিংক। ঠান্ডা পানি বা এনার্জি ড্রিংক গর্ভবতী মহিলাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক বিশেষ করে যে সকল মায়েদের ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা আছে তাদের জন্য বেশি সমস্যা হতে পারে।
কাঁচা ও পাস্তুরায়ন ছাড়া দুধ
কাঁচা, পাস্তুরায়ন ছাড়া দুধে লিসটেরিয়া নামের এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা লিসটেরিওসিস নামের এক ধরনের রোগ তৈরি করতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় কাঁচা, পাস্তুরায়ন ছাড়া দুধ অথবা এই দুধের তৈরি পনির ও খাবার থেকে গর্ভবতী মহিলাদের বিরত থাকতে হবে।