এনাল ফিসার কি, কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

by Dr. Baby Akter
এনাল ফিসার

এনাল ফিসার হল একধরনের পায়ুপথের ক্ষত বা পায়ুপথের রোগ। এটি অতি পরিচিত পায়ুপথের একটি সমস্যা যা মলত্যাগের সময় ব্যথা, জ্বালাপোড়া করা, ছুরির ধারের মত অনূভুত হয়ে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি একেবারে তীব্র পর্যায়ের হয়ে থাকে ফলে রোগীর মধ্যে মারাত্বক অস্বস্তি ও যন্ত্রনা শুরু হয়। এই উপসর্গগুলোকে সাধারণত এনাল ফিসার বলা হয়ে থাকে। তবে বাংলায় এটি গেজ রোগ নাম বেশী পরিচিত। 

এটি সাধারণত পায়ুপথের সমস্যা হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন ভোগার পরও অনেকে এর চিকিৎসা নেন না বা ডাক্তারের কাছে যেতে চান না। অথচ এই সংবেদনশীল রোগটির যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা নেওয়া যায় ততই মঙ্গল। না হলে একপর্যায়ে অবস্থা মারাত্বক আকার ধারণ করে অস্ত্রোপচার সহ উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হয় বা জটিল আকার ধারণ করে ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে।

এনাল ফিসার কী?

মানুষের পায়ুপথের পেছনের দিকের যে অংশে মল জমা হয় তাকে মলাশয় বা রেক্টাম বলা হয়। এই মলাশয় থেকে মল মলদ্বার দিয়ে বের হয়ে আসে। মলদ্বারের চারপাশের মাংসপেশী চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে মলদ্বারের মুখ খোলা বা বন্ধ করা যায়। দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠ্যকাঠিন্য বা কষা পায়খানা করা অথবা দীর্ঘক্ষণ বাথরুমে বসে থাকা, খুব জোরে চাপ দিয়ে মল ত্যাগ করা ইত্যাদি কারণে অনেক সময় মলদ্বারের চারপাশের চামড়া ফেটে বা চিড়ে যায়৷ মলদ্বারের এই ফেটে বা চিড়ে যাওয়া ক্ষত অবস্থাকে গেজ রোগ বা এনাল ফিসার বলে।

এনাল ফিসারের ফলে মলত্যাগের সময় এই ক্ষত অংশে খুব জ্বলাযন্ত্রণা ও ব্যথা করে। একই সাথে পায়ুপথের চারপাশে টানটান হয়ে পায়ুপথ টাইট হয়ে সরু হয়ে যায়। যে কারণে মলত্যাগের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে উঠে। 

এনাল ফিসারের লক্ষণগুলো কী কী?

১. মলদ্বারে প্রচন্ড ও  ধারালো যন্ত্রণাদায়ক ব্যথা হওয়া

এনাল ফিসারের অন্যতম লক্ষণ হল পায়খানা করার সময় মলদ্বারের চারপাশে প্রচন্ড ধারালো ব্যথা অনুভূত হওয়া। রোগীর মনে হতে থাকে মলদ্বারে যেন কাঁচের টুকরো বের হচ্ছে। তাই রোগীদের জন্য এটি অধিক যন্ত্রণাদায়ক। পায়খানা করার বেশ কিছুক্ষণ পরও ব্যথা ও জ্বালা অনূভুত হতে থাকে। 

২. মলের সাথে টকটকে লাল রক্ত যাওয়া

মলদ্বারের ক্ষত থেকে রক্তক্ষরণ হয় বিধায় রক্তের রং উজ্জ্বল ও লাল বর্ণের হয় এবং তা মলের সাথে লাগানো অবস্থায় বের হয়। সাধারণত মলদ্বারের চারপাশ থেকে বের হয় তাই রক্ত পরিমানে কম হয়। তবে যদি ভেতর থেকে রক্ত বের হয় তাহলে রক্তের রং আরো কালচে লাল বা গাঢ় হতো।

৩. মলদ্বারে চুলকানি

গেজ রোগ বা এনাল ফিসার রোগে মলদ্বারে চুলকানি হতে পারে।

আরো পড়ুন: এনাল ফিস্টুলা কি, কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

এনাল ফিসার কেন হয়?

এনাল ফিসারের সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলোর অন্যতম হল কোষ্ঠকাঠিন্য বা কষা পায়খানা। কষা পায়খানা হলে অনেকে নিয়মিত মলত্যাগ করতে চায় না, পরবর্তীতে মলত্যাগের সময় তা আরও শক্ত হয়ে বের হয়। এতে কষা পায়খানার ফলে পায়ুপথের চারপাশের ত্বক ছিঁড়ে যায়। ফলে এনাল ফিসারের সমস্যা সৃষ্টি হতে থাকে। 

তাছাড়া গর্ভবতী মহিলাদের ও নরমাল ডেলিভারী মাধ্যমে বাচ্চা প্রসব হলে সেক্ষত্রেও এনাল ফিসারের সমস্যা দেখা দিতে পারে তবে সেক্ষেত্রে ধরণটা একটু ভিন্ন হয়। 

আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডায়রিয়ার কারণেও এ রোগ হতে পারে, তাছাড়া আরো অনেক কারণে এই এনাল ফিসার রোগ হতে পারে যেমন :

১. ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস সংঘটিত চর্মরোগ।

২. সোরিয়াসিস নামক ত্বকের প্রদাহজনিত রোগ।

৩. পরিপাকতন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ বা ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ (IBD)।

৪. যৌনরোগ, যেমন- এইচআইভি, সিফিলিস ও হার্পিস সিমপ্লেক্স।

৫. Pruritus Ani নামের পায়ুপথের মুখের চুলকানি রোগ।

৬. কোলোরেক্টাল বা পায়ুপথের ক্যান্সার।

কিছু কিছু ওষুধ সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেও এনাল ফিসার দেখা দিতে পারে যেমন-

  • আফিমজাতীয় ব্যথার ওষুধ (Opioids), যেমন- ট্রামাডল, টাপেন্টাডল, মরফিন ও পেথিডিন।
  • Angina- জাতীয় বুকের ব্যথায় ব্যবহৃত নিকোর‍ান্ডিল।
  • কেমোথেরাপিতে ব্যবহৃত কিছু ওষুধ।

এনাল ফিসার বা গেজ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

১. সিটজ ব্যাথ(Sitz Bath) বা মলদ্বারে গরম পানির সেঁক নেয়া –

একটি বড় আকারের বোলে কুসুম গরম পানি নিয়ে তাতে কিছুক্ষণ বসে থাকতে হবে। এতে মলদ্বারের মাংসপেশী শিথিল হয়ে ব্যথা কমে আসে। এটাকে Sitz bath/সিটজ বাথ বলা হয়ে থাকে। দিনে দুই থেকে তিনবার এই পদ্ধতি গ্রহণ করা যায়। 

২. মলদ্বারের চারপাশে পেট্রোলিয়াম জেলি  ব্যবহার –

মলদ্বারের চারপাশে পেট্রোলিয়াম জেলি বা এই জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করা যায়। এর ফলে শক্ত মল সহজে মলদ্বার দিয়ে বের হয়ে আসে। এবং চামড়া ছিঁড়ে যাওয়া বা রক্তপাত হওয়ার সম্ভবনা কম থাকে। 

৩. সকালে ইসবগুলের ভুসি খাওয়া-

নিয়মিত সকালে ২ চা চামচ ইসবগুলের ভুসি গ্লাস পানিতে মিশিয়ে খেলে মল নরম থাকে। এটি এনাল ফিসার রোগীর জন্য বেশ উপকারী একটি খাবার। তবে ইসবগুলের ভুসির সাথে পর্যাপ্ত পানি পান না করলে, পায়খানা আরো শক্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। তাই সাথে পর্যাপ্ত পানির বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।

৪. মলদ্বার পরিষ্কার ও শুকনো রাখা –

মলত্যাগের পর মলদ্বার শুকনো ও পরিছন্ন রাখতে হবে। তাছাড়া মলদ্বার আলতোভাবে হাতের আঙ্গুল দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে, কিন্তু অতিরিক্ত ঘষাঘষি করা যাবে না। ফলে জায়গাটি ইনফেকশন হওয়া থেকে রক্ষা পাবে। এর ফলে এনাল ফিসার হলেও তা সেরে উঠার সম্ভবনা বেশি থাকে।

আরো পড়ুন: মহিলাদের পাইলস বা অর্শ্বরোগের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

এনাল ফিসার বা গেজ রোগ থেকে মুক্তির উপায়

১. যথা সময়ে মলত্যাগ করা –

যথাসময়ে মলত্যাগ করতে হবে। যদি পায়খানা জমিয়ে দেরী করে মলত্যাগ করা হয় তাহলে মল আরো শক্ত হয়ে যায়। এতে শক্ত মল পায়খানার রাস্তায় ক্ষত সারতে অনেক দেরী হয়ে যায়। তাই যথাসময়ে মলত্যাগ করা অভ্যাস করতে হবে। 

যদিও এনাল ফিসারের রোগীদের মলত্যাগের সময় প্রচন্ড যন্ত্রনা হয় তাই যথাসময়ে মলত্যাগে ভয় পায়, সেকারণে খাওয়া দাওয়ার মাধ্যমে মল নরম রাখতে হবে এবং ব্যথা কমানোর উপায়গুলোও মেনে চলা উচিত। 

২. এনাল ফিসার রোগীর জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার অত্যান্ত জরুরী। তাই কিছু নিয়ম অবশ্যই মেনে চলতে হবে। যেমন –

  • পর্যাপ্ত পরিমানে আঁশ বা ফাইবার জাতীয় খাবার খেতে হবে যেমন- ফলমূল, শাকসবজি, ডাল, লাল চাল, লাল আটা এধরণের খাবার। 
  • বিশেষজ্ঞরা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য দৈনিক ৩০ গ্রাম ফাইবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। 
  • তবে ফাইবার খাওয়ার পরিমান ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে। ফাইবারের সাথে পর্যাপ্ত পরিমান পানি না খেলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। তাই পরিমিত পরিমান পানিও গ্রহণ করা খুব জরুরী।
  • সকালে নিয়মিত ইসবগুলের ভুসি খেলেও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
  • নিয়মিত হালকা ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করতে পারেন।

৩. মলত্যাগের সময় জোরে চাপ না দেওয়া –

মলত্যাগের সময় অতি জোরে চাপ দেওয়া বা জোর করে মল বের করার ফলে পায়ুপথে প্রচন্ড চাপ পড়ে। এতে পায়ুপথ ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। তাই জোরে চাপ দিয়ে মলত্যাগ থেকে বিরত থাকতে হবে।

৪. দীর্ঘক্ষণ বসে মলত্যাগ না করা –

অনেকে মলত্যাগকালীন সময়ে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকেন বা যথাসময়ে উঠে আসে না। এটি এনাল ফিসার রোগীর জন্য খুব ঝুঁকিপূর্ণ। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার ফলে মলদ্বারের উপর অধিক চাপ পড়ে। এতে মলদ্বারের চামড়া ফেঁটে যাওয়ার বা রক্ত ক্ষরণের সম্ভাবনা থাকে। 

এনাল ফিসার হলে কি কি খাবার খেতে হবে ?

  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য দ্রবণীয় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার, ফলমূল, শাকসবজি পর্যাপ্ত পরিমান খেতে হবে। এ ধরণের খাবার এনাল ফিসার তথা মলদ্বারের রোগের কষ্ট  লাঘবের জন্য খুব উপযোগী। তাছাড়া এ জাতীয়  খাবার গুলো অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 
  • পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমান পানি শরীরকে ডিহাইড্রেশন মুক্ত রাখে ও মলকে স্বাভাবিক রাখে। 
  • রাজমা, কড়াইশুঁটি এবং ডাল জাতীয় শস্য এনাল ফিসার রোগীদের বেশ উপযোগী খাবার। 
  • ঢেঁকিতে ছাঁটা চাল এনাল ফিসার রোগীদের জন্য খুব উপকারী, হোল গ্রেন থেকে তৈরি বিভিন্ন ধরনের খাবারেও ভালো ফল পাওয়া যায়। 

এনাল ফিসার হলে কি কি খাওয়া উচিত নয় ?

  • কম ফাইবার যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। বিশেষ করে রিফাইনারিতে তৈরি করা দানা শস্য থেকে এনাল ফিসারের সমস্যা বাড়ার সম্ভবনা থাকে। 
  • দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারের পরিমানে কম খাওয়া উচিত । 
  • মাংস খাওয়া এনাল ফিসার রোগীদের জন্য ভালো নয়। বিশেষ করে বাজারের প্রক্রিয়াজাত করা মাংস খেলে এনাল ফিসারের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। 
  • ধুমপান বা মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে। 

এনাল ফিসার হলে কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন ?

মলদ্বারে কোন ধরণের ক্ষত দেখা দিলে দেরী না করে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। কারণ এই ক্ষত থেকেই কিন্তু পরবর্তীতে রোগটি জটিল আকার ধারণ করে। তবে যে পদ্ধতিতে চিকিৎসা গ্রহণ করা হোক না, কেন তা অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে নিতে হবে। একটু অসচেতনতার কারণে কোন ধরণের অপচিকিৎসার সামিল না হয়ে অবশ্য সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। 

এনাল ফিসারের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

প্রচলিত বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় এর ভালো চিকিৎসা রয়েছে। রোগীর লক্ষণ সাদৃশ্যে এ মেডিসিন গুলো ব্যবহার করা হয়। লক্ষণ অনুসারে হোমিওপ্যাথিক যে মেডিসিনগুলো প্রয়োগ করা যায় তা হল –

বেলেডোনা (Belladonna)

মলদ্বারে ফোঁড়ার সৃষ্টির পর বেদনা, মলদ্বার লাল বর্ণ, ফোঁড়া স্থানে দপদপকর বেদনা এবং হুল ফোটানো বেদনা, প্রদাহ স্থান লাল,শক্ত, পেকে উঠে এ ধরনের লক্ষণগুলোতে বেলেডোনা প্রয়োগ করা যায়। বেলেডোনা ৩x শক্তি, ২/৩ ফোঁটা পানি মিশ্রিত করে দিনে ৪ বার।  

হিপার সালফার (Hepar Sulph)

মলদ্বারের ক্ষত স্থান খুব স্পর্শকাতর, হাত দিয়ে ছোঁয়াও যায় না। আক্রান্ত স্থান থেকে পনিরের মত পূঁজ পড়ে, জ্বালাপোড়া করে, খোঁচামারা বেদনা থাকে। শুরুর দিকে এ মেডিসিন প্রয়োগ করা গেলে ক্ষত হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। 

হিপার সালফার/Hepar Sulph ২x/৩x  শক্তি দিনে ৩ বার। 

সাইলিসিয়া (Silicea)

ক্ষত থেকে বেদনাহীন অধিক পরিমানে পূঁজ পড়ে। রোগের পূরাতন অবস্থা অর্থাৎ দীর্ঘদিনের ক্ষত, নালী গা শুকানোর ক্ষেত্রে এই মেডিসিন ভালো কাজ করে। 

সাইলিসিয়া/Silicea  ৩০ শক্তি, দিনে ৩ বার।  

পিওনিয়া (Paeonia)

এটি এনাল ফিসারের অতি উৎকৃষ্ট মেডিসিন। শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাতে, পায়ে, পায়ের পাতা, আংগুলে মলদ্বারে চুলকানি, জ্বালাপোড়া করে। মাথা ও পায়ে ঝনঝন শব্দ অনূভব হয়। এই ধরণের লক্ষণ গুলোতে পিওনিয়া/Paeonia প্রয়োগ করা যায়।

পিওনিয়া/Paeonia ৩/৬  শক্তি ,  দিনে ৪ বার। 

ইস্কুলাস হিপ (Aesculus Hip)

গুহ্যদ্বারে শুষ্কতা ও তাপ অনুভব এবং মনে হয় যেন কতকগুলি ছোট ছোট কাঠি মলদ্বারে আছে। মলদ্বারে জ্বালাবোধ, সুচিবিদ্ধবৎ বেদনা, মলদ্বার চুলকাইতে থাকা, এ ধরণের লক্ষণগুলোতে ইস্কুলাস হিপ প্রয়োগ করা যায়। 

ইস্কুলাস হিপ/Aesculus Hip ৩/৬ শক্তি, ২/৩ ফোঁটা পানি মিশ্রিত করে দিনে ৩ বার। 

উপরোক্ত মেডিসিন ছাড়াও আরো বেশ কিছু হোমিও ঔষধ যেগুলো লক্ষণ সাদৃশে প্রয়োগ করা যায়। তবে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শে মেডিসনগুলো গ্রহণ করতে হবে। 

এনাল ফিসার ও পাইলস-এর মধ্যে পার্থক্য কি?

পাইলসের লক্ষণ এবং এনাল ফিসারের লক্ষণ গুলো কিছু কিছু ক্ষেত্রে মিল হলেও এ দুটি আলাদা রোগ যদিও দুটি রোগে মলদ্বারে চুলকানি হতে পারে সেই সাথে তাজা রক্ত যেতে পারে। তবে পাইলসের থেকেও এনাল ফিসারে রক্ত বেশী যায়। এনাল ফিসার এবং পাইলসের মধ্যে বিশেষ পাথর্ক্য গুলো হল-

পাইলসের ক্ষেত্রে মলদ্বারে নরম বল বা গোটার মত দেখা দেয়। বলগুলো প্রায় ক্ষেত্রে মলত্যাগের সময় বের হয়ে আসে। অনেক সময় বলগুলো নিজে থেকে ঢুকে যায় আবার ক্ষেত্রবিশেষ আঙ্গুলের সাহায্যে ঢুকিয়ে দিতে হয়। এবং মলদ্বার দিয়ে পিচ্ছিল শ্লেষ্মার মতো পদার্থ বের হয়। 

এনাল ফিসারের ক্ষেত্রে সাধারণত মলত্যাগের সময় প্রচন্ড ব্যথা হয় এবং টাটকা রক্ত যেতে দেখা যায়। কিন্তু পাইলসের ক্ষেত্রে এধরণের ব্যথা থাকে না।  

কখন এনাল ফিসার রোগীর অপারেশন প্রয়োজন?

এনাল ফিসার যখন কোনো ধরণের চিকিৎসায় সারে না তখন অপারেশনের প্রয়োজন পড়ে। এই রোগে অবস্থার অবনতি হলে, সাধারণত সার্জারিকে সবচেয়ে উত্তম হিসেবে গণ্য করা হয়। এ ক্ষেত্রে ৯০% রোগী স্থায়ী সুফল লাভ করে। তবে এতে অপারেশন পরবর্তী বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়ার ঝুঁকি থাকে। 

এনাল ফিসার রোগের অপারেশন গুলো খুব একটা জটিল হয় না। সাধারণত রোগী সেদিনই বাড়ী ফিরে যেতে পারে। এ রোগের বেশ কয়েক ধরণের সার্জারী রয়েছে। তার মধ্যে বহুল প্রচলিত দুটি পদ্ধতি হলো—

১. ল্যাটারাল স্ফিংকটারেকটোমি

২. অ্যাডভান্সমেন্ট অ্যানাল ফ্ল্যাপ

এনাল ফিসারের অপারেশনে খরচ কেমন ?

খরচ নির্ভর করে রোগীর রোগের ধরণ এবং চিকিৎসক ও হাসপাতালের মানের উপর। তবে বাংলাদেশে ফিসার সার্জারিতে গড়ে  ৪৫০০০ – ৬০০০০ টাকা লাগে। এর কম বেশিও হতে পারে। যদি দেশের বাইরে সার্জারী করানো হয় সেক্ষেত্রে খরচ ভিন্ন। 

এনাল ফিসারের অপারেশন পরবর্তী সমস্যাগুলো কি কি ?

মলদ্বারের সার্জারীতে ক্ষত শুকাতে শরীরের অন্যান্য স্থানের তুলনায় বেশী সময় লাগে। কয়েক সপ্তাহ এমন কি কয়েক মাসও লেগে যেতে পারে। তবে নিয়মিত পরিচর্যা ও পরিষ্কার রাখলে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। 

এনাল ফিসার থেকে কি ক্যান্সার হয় ?

গেজ রোগ বা এনাল ফিসার ও পাইলসের থেকে কখনোই ক্যানসার হয় না। কিন্তু ফিস্টুলা যদি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে তাহলে  সেক্ষেত্রে ক্যানসার হতে পারে। সেকারণে চিকিৎসকেরা ফিস্টুলার ক্ষেত্রে ১০০ ভাগ অস্ত্রোপচারের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্যানসারের সাথে অ্যাসোসিয়েটেড পাইলস থাকতে পারে। কিন্তু এনাল ফিসার বা পাইলসের সমস্যা আছে তা ক্যানসার হয়ে যাবে এটি কখনোই সঠিক নয়। 

এনাল ফিসার একবার সুস্থ হওয়ার পর কি আবার হওয়ার সম্ভবনা থাকে ?

হ্যাঁ, রোগী সুস্থ হওয়ার পরও যদি অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস গড়ে তোলে সেক্ষেত্রে এনাল ফিসার বার বার দেখা দিতে পারে। তাই এ রোগে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস ও রুটিন মাফিক জীবনযাপন অধিক সচেতনতা প্রয়োজন। 

সার্জারির পর কি আবার অ্যানাল ফিসার হতে পারে ?

হ্যাঁ, সার্জারির পর যদি রোগী অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও খাদ্যাভাসের সঠিক নিয়মকানুন মেনে না চলেন বা সঠিক যত্ন না নেন তবে আবার এনাল ফিসার দেখা দিতে পারে। তবে এক্ষেত্রে পুনরাবৃত্তির হার ১০% মাত্র।

You may also like

Leave a Comment