আমলকি একপ্রকার ভেষজ ফল। টক আর তেতো স্বাদে ভরা আমলকী গুণে-মানে অতুলনীয়। ফলটি শুধু ভিটামিন আর খনিজ উপাদানেই ভরপুর নয়, বিভিন্ন রোগব্যাধি দূর করায়ও রয়েছে অসাধারণ গুণ। আমলকি গাছের পাতা ও ফল উভয়ই ওষুধরূপে ব্যবহার করা যায়। দেশীয় ফল হিসেবে আমলকি দামে যেমন সস্তা ও সহজলভ্য, তেমনি এর রয়েছে নানাবিধ উপকারিতা।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে, আমলকির গুণ বর্ণনা করে বলা হয়েছে, দেহের বিভিন্ন রোগব্যাধি দূর করে শরীরের সব ধরনের ক্রিয়ার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে
আমলকির পুষ্টি গুণাগুণ :
আমলকির অনেক ভেষজ গুণ রয়েছে। এই গাছের ফল ও পাতা দুটিই ওষুধরূপে ব্যবহার করা যায়। আমলকিতে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ থাকে যা পেয়ারার চেয়ে ৩ গুণ ও কাগজি লেবুর চেয়ে ১০ গুণ, কমলার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুণ, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ, আমের চেয়ে ২৪ গুণ এবং কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি। একজন পুর্ণ বয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ দরকার। কেউ যদি দিনে দুটো আমলকি খায় তাহলে সে ঐ পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ পেতে পারে। আমলকি খেলে মুখে রুচিও বাড়ে।
আমলকির বিভিন্ন ঔষধি গুণাগুণ সমুহ :
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আমলকী কাঁচা অথবা আচার করে যেভাবেই খাওয়া হোক, এতে উপস্থিত ভিটামিন শরীরে ঠিকই প্রবেশ করে এবং ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে।
চুল পড়া নিয়ন্ত্রণ করে
আমলকি চুলের টনিক হিসেবে কাজ করে। আমাদের চুলের গঠনের ৯৯ শতাংশ প্রোটিন। আমলকীতে অ্যামিনো অ্যাসিড ও প্রোটিন আছে, যা চুলের বৃদ্ধিতে কাজ করে। চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য এটি একটি অপরিহার্য উপাদান। আমলকীতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং ভিটামিন সি ত্বককে টানটান করতে সহায়তা করে। এক চামচ আমলকী গুঁড়ো নিয়ে গরম পানিতে মিশিয়ে নিন। আপনার মুখটি স্ক্রাব করতে এই পেস্টটি ব্যবহার করুন, পাঁচ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। আপনি চাইলে পেস্টে কিছুটা হলুদ যোগ করতে পারেন।
ক্ষুধামন্দা দূর করতে আমলকি
চিকিৎসকেরা বলেন, আমলকীর জুস খেলে পরিপাকতন্ত্র ভালো থাকে এবং হজম ভালো হয়। প্রতিবার খাওয়ার আগে মাখন ও মধুর সঙ্গে আমলকির গুঁড়া মিশিয়ে খেলে ক্ষুধামন্দা দূর হয়।
ব্রণের দাগ দূর করে
আমলকী প্রাকৃতিক উপায়ে ব্রণের দাগ এবং ত্বকের অনান্য কালচে দাগ দূর করতে সহায়তা করে। আমলকীর রস আপনার মুখে লাগান, এবং ৩০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। এবার হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আপনার যদি সংবেদনশীল ত্বক থাকে তবে পানির সাথে রসটি মিশ্রণ করুন এবং প্রয়োগ করুন। আরো ভাল ফলাফলের জন্য এই চিকিৎসা মাসে কয়েকবার ব্যবহার করতে পারেন।
গলা ব্যথা এবং ঠান্ডা দূর করতে
আমলকির গুঁড়োর সাথে মধু মিশিয়ে দিনে ৩-৪ বার খেলে তা গলা ব্যথা এবং ঠান্ডা দূর করতে সাহায্য করে। দীর্ঘমেয়াদী কাশি-সর্দির জন্য আমলকির নির্যাস উপকারী।
কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলস চিকিৎসায়
আমলকীতে থাকা সলিউবল ফাইবার শরীর থেকে টক্সিক উপাদান বের করে দিতে সাহায্য করে এবং হজমে সাহায্য করে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং পাইলস রোগ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে
নিয়মিত আমলকীর জুস খেলে শরীরে কোলস্টেরলের মাত্রা কমে। অ্যামিনো অ্যাসিড ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় হৃদ্যন্ত্র ভালো থাকে।
দেহের চর্বি কমাতে
আমলকীতে উপস্থিত প্রোটিন শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমাতে সাহায্য করে। এটি খেলে হজম শক্তি বেড়ে যায়। ফলে মানুষ মুটিয়ে যায় না। তাই ওজন কমাতে চাইলে প্রতিদিন আমলকি খাওয়ার চেষ্টা করুন।
রক্ত পরিষ্কার করতে
রক্ত পরিষ্কার করতে আমলকি বেশ কার্যকর। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান যা শরীর থেকে টক্সিন উপাদান সব দূর করে দেয়। নিয়মিত আমলকি খেলে তা রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে।
গলা ব্যথা এবং ঠান্ডা দূর করতে
ভারতের ওজন ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ গর্জি শর্মার মতে, মুখের ঘায়ের পাশাপাশি সর্দি-কাশি দূর করতে আমলকীর জুস দারুণ কাজ করে। দুই চা চামচ আমলকীর জুসের সঙ্গে সমপরিমাণ মধু প্রতিদিন খেলে গলা ব্যথা এবং ঠান্ডা-কাশি দূর হয়। এ ছাড়া মুখের ঘা দূর করতে কয়েক চামচ জুস পানির সঙ্গে মিশিয়ে দিনে দুইবার গড়গড়া করলে উপকার পাওয়া যায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
গবেষণায় দেখা গেছে যে, আমলকিতে পলিফেনল রয়েছে যা রক্তে অক্সিডেটিভ শর্করা থেকে শরীরকে রক্ষা করে। এটি শরীরে ইনসুলিন শুষে নিতে সাহায্য করে যা ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে।